ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বয়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১৭ এপ্রিল ২০১৫

বয়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ টাটকা নতুন বছর। মঙ্গলবার থেকে শুরু। আজ শুক্রবার চতুর্থ দিন। এখনও তাই রেশ কাটেনি বর্ষবরণ উৎসবের। সারাদেশের মতো বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির শহর ঢাকাও এদিন মহাআনন্দে মেতেছিল। নাচ গান কথা কবিতা- কত কত আয়োজন! সারাদিন ধরে চলেছে। যথারীতি নগরবাসীর প্রথম গন্তব্য ছিল রমনা বটমূল। বিশাল বিশাল ডালপালা ছড়িয়ে থাকা অশ্বত্থের নিচে মঞ্চ সাজিয়েছিল ছায়ানট। এখান থেকে শুদ্ধ সঙ্গীতে স্বাগত জানানো হয় নতুন বছরকে। প্রত্যাশা করা হয়, নতুন বছরে মানুষের সকল অধিকার সুরক্ষিত হবে। সুখে-শান্তিতে বাঁচার মানবিক অধিকার নিশ্চিত হবে। মানুষের শান্তিপূর্ণ জীবনযাত্রাবিরুদ্ধ যা কিছু, তা বস্তুত আবজর্না জ্ঞানে ছুড়ে ফেলার আহ্বান জানানো হয় অনুষ্ঠান থেকে। বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা থেকেও ছিল অভিন্ন প্রত্যাশা। চারুকলার ঐতিহ্যবাহী শোভাযাত্রা থেকে মৌলবাদ জঙ্গীবাদসহ সকল অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে লড়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়। গোটা রাজধানী শহরজুড়ে ছিল উৎসব অনুষ্ঠান। বৃহস্পতিবারও সেই উৎসবের রঙ চোখে পড়েছে। অনেকেই লাল-সাদা পোশাকে বের হয়েছিলেন বাসা থেকে। পরস্পরের সঙ্গে নতুন বছরের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন তাঁরা। আরও কয়েক দিন বর্ষবরণের আনন্দ থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। বর্ষবরণ উৎসবের আগেই শুরু হয়ে গিয়েছিল ভোট উৎসব। আগামী ২৮ এপ্রিল ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এখন চলছে প্রচারের কাজ। মেয়র ও কমিশনার প্রার্থীরা চষে বেড়াচ্ছেন নির্বাচনী এলাকা। যেখানে তাঁরা যাচ্ছেন, সেখানেই উৎসবের আমেজ। গাড়িতে পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ হত্যার রাজনীতি শেষে এই ভোট উৎসব নগরবাসীর মনে স্বস্তি এনে দিয়েছে। ধীরে ধীরে সাধারণ মানুষও নির্বাচনের সঙ্গে নানাভাবে একাত্ম হচ্ছেন। এবার বিভক্ত ঢাকার দক্ষিণ অংশে মেয়র পদে নির্বাচন করছেন সাঈদ খোকন ও মির্জা আব্বাস। মজার ব্যাপার, দুই যুগ আগে মির্জা আব্বাস নির্বাচন করেছিলেন সাঈদ খোকনের বাবা মোহাম্মদ হানিফের সঙ্গে। ওই নির্বাচনে বিপুল ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিলেন তিনি। মেয়র হানিফের পর এবার তিনি হানিফপুত্র সাঈদ খোকনের সঙ্গে লড়ছেন। বিএনপির হয়ে অর্ধেক সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হতে চান তিনি। আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে মাঠে আছেন সাঈদ খোকন। প্রতিদিনই নির্বাচনী এলাকা ঘুরে বেড়াচ্ছেন তরুণ নেতা। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট চাইছেন। দোয়া চাইছেন। সঙ্গে থাকছে নেতাকর্মীদের বিরাট বহর। যেদিকে যাচ্ছেন ভিড় লেগে যাচ্ছে। সেøাগান হচ্ছেÑ আমার ভাই তোমার ভাই...। বৃহস্পতিবার দুপুরে যাত্রাবাড়ীর মিরহাজীরবাগে গিয়েছিলেন সাঈদ খোকন। যাকে সামনে পেয়েছেন, জড়িয়ে ধরেছেন তিনি। আন্তরিক সমর্থন চেয়েছেন। কিন্তু বেশকিছু মামালার আসামি হওয়ায় মির্জা আব্বাস এখনও আড়ালে। মোটামুটি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। যে কোন সময় গ্রেফতারের আশঙ্কা থাকায় প্রচারে নামতে পারেননি। তাঁর অনুপস্থিতিতে মাঠ গরমের সব চেষ্টা করছেন স্ত্রী আফরোজা আব্বাস। প্রতিদিনই তিনি নির্বাচনী এলাকা ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ভোট চাইছেন। সেই ধরাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার সকালে যান সায়েদাবাদ এলাকায়। সেখানে পথসভা করে যান যাত্রাবাড়ীতে। তাঁর সঙ্গেও থাকছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। ভোট চাওয়ার পাশাপাশি শুরু হয়ে গেছে বাহাস। কয়েক দিন আগে আব্বাসপতœী অভিযোগ করে বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী খোকন দেয়ালে পোস্টার লাগানোসহ নানাভাবে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন। ‘চাচি’ সম্বোধন করে তাঁর সেই কথার জবাব দিয়েছেন সাঈদ খোকন। তাঁর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকলে তা নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে জানানোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবার আফরোজা আব্বাস আবার বলেছেন, তুমি আমার সন্তানের মতো। তুমি তোমার মতো কাজ কর। আমাদের আমাদের মতো কাজ করতে দাও। এভাবে বেশ জমে উঠছে নির্বাচন। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন মাতিয়ে রেখেছেন প্রধান দুই মেয়র প্রার্থী আনিসুল হক ও তাবিথ আউয়াল। এ দু’জনের মধ্যেও চাচা-ভাতিজার সম্পর্ক! এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি ছিলেন আনিসুল হক। একই সংগঠনের সভাপতির দ্বায়িত্ব পালন করেছেন আব্দুল আউয়াল মিন্টু। কথা ছিল, মিন্টুর সঙ্গেই লড়বেন আনিসুল। কিন্তু সেটা হয়নি। এখন লড়ছেন মিন্টুর ছেলে তাবিথ আউয়ালের সঙ্গে। আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করছেন সফল ব্যবসায়ী আনিসুল হক। ইমেজ ভাল হওয়ায় প্রচারে ভাল সাড়া পাচ্ছেন তিনি। পরিশ্রম যা করছেন, তাও দেখার মতো। ধারাবাহিক প্রচারের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার সকালে তিনি গণসংযোগ চালান মিরপুর ১০ নম্বর এলাকায়। শপিংমল থেকে মুদিদোকান, বাসাবাড়ি থেকে ফুটপাত সর্বত্রই চষে বেড়ান তিনি। প্রচারের সময় চমকপ্রদ তথ্যও বেরিয়ে আসছে। বুধবার এক মতবিনিময় সভায় আনিসুল হক বলেন, আমি নাকি অনেক বড় লোক। মেয়র হলে নাকি গরিবের কথা বলতে পারব না। যারা এসব বলে, ওরা জানে না আমার জীবনের কষ্ট। ওরা জানে না আমার মা কষ্ট করে আমার বাবার প্যান্ট রিপু করে দিতেন, একটা প্যান্ট কিনতেন না! সরাসরি রাজনীতির লোক না হওয়ায় তাবিথ আউয়ালেরও ইমেজ ভাল। তিনিও ব্যাপক প্রচার চালাচ্ছেন। বৃহস্পতিবার নির্বাচনী ইশতেহার পেশ করে নিজের প্রতিশ্রুতির পক্ষে রায় চান তিনি। এভাবে যত দিন যাচ্ছে, জমে উঠছে ভোটযুদ্ধ। গোটা রাজধানীজুড়ে সেই আবহ। পরবর্তী দিনগুলোতেও এমন সুস্থ সুন্দর পরিবেশ অব্যাহত থাকবে বলে আশা করছেন শান্তিপ্রিয় রাজধানীবাসী।
×