ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মেয়র প্রার্থীদের পোস্টারে ছেয়ে গেছে ঢাকা শহর ॥ জোর প্রচার

দক্ষিণে খোকন-আব্বাস উত্তরে আনিস-তাবিথ লড়াই হবে

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ১৭ এপ্রিল ২০১৫

দক্ষিণে খোকন-আব্বাস উত্তরে আনিস-তাবিথ লড়াই হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রচারের জন্য প্রার্থীরা হাতে পাচ্ছেন আর মাত্র ১০ দিন। ২৬ এপ্রিল মধ্য রাতেই প্রার্থীদের প্রচার বন্ধ করতে হবে। স্বল্প সময় হাতে রেখেই প্রচার চালাতে হচ্ছে প্রার্থীদের। ঢাকার উত্তরে প্রায় সাড়ে ২৩ লাখ ভোটার ভোট দিয়ে একজন মেয়র নির্বাচিত করবেন। আর দক্ষিণে ১৮ লাখ ৭০ হাজার ভোটার ভোট দিয়ে তাদের নগরপিতা নির্বাচিত করবেন। স্বল্প সময়ের মধ্যে লাখ লাখ ভোটারের দ্বারে দ্বারে পৌঁছতে মেয়র প্রার্থীদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। ফলে বিরামহীন প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাওয়া ছাড়াও স্বল্প সময়ের মধ্যে ভোটারদের কাছে পৌঁছতে বিভিন্ন পথসভায়ও নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন। এ সময় ভোট দিয়ে বিজয়ী করার আহ্বান জানাচ্ছেন। গত ৭ এপ্রিল থেকে প্রার্থীরা অনানুষ্ঠানিক প্রচার চালালেও ১০ এপ্রিল থেকে আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচারের মাঠে নেমে পড়েছেন। এখন পর্যন্ত বিরামহীন প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। একমাত্র বিএনপি সমর্থিত মির্জা আব্বাস ছাড়া প্রায় সব প্রার্থী সশরীরে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। ভোটারদের দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। ইতোমধ্যে প্রায় সব প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীই তাঁদের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করে ভোটারদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছেন। তবে সরেজমিন ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে মেয়র পদে ২০ জন প্রার্থী অংশ নিলেও মূলত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাঈদ খোকনের সঙ্গে বিএনপি সমর্থিত মির্জা আব্বাসের। এছাড়া জাতীয় পার্টিসহ আরও কয়েকটি দলের প্রার্থী সক্রিয়ভাবে নির্বাচনী প্রচারে রয়েছেন। তাঁদের পোস্টারে ঢাকা শহর ছেয়ে গেছে। ঢাকা দক্ষিণের প্রতিটি অলি-গলি ও প্রধান প্রধান সড়কে এখন সাইদ খোকনের ইলিশ মাছ প্রতীক ও মির্জা আব্বাসের মগ প্রতীক ঝুলানো হয়েছে। তবে আচরণবিধি মেনে কোন প্রার্থীই তাঁদের প্রতীক দেয়ালে সাঁটেননি। কমিশন জানিয়েছে, তাদের কাছে তুলনামূলকভাবে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ কম আসছে। এদিকে উত্তরে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আনিসুল হক, বিএনপি সমর্থিত তাবিথ আউয়াল, মাহী বি চৌধুরী, আব্দুল্লাহ আল ক্বাফি, জোনায়েদ সাকিসহ অন্যান্য প্রার্থী নির্বাচনের মাঠে প্রায় প্রতিদিন সক্রিয় রয়েছেন। তবে অনেকেই মনে করছেন এ সিটিতে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আনিসুল হকের সঙ্গে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের। এছাড়াও এ সিটিতে মোট ১৬ জন মেয়র পদে নির্বাচনে অংশ নিলেও প্রচারে এর বাইরে আর কাউকে সক্রিয়ভাবে দেখা যায়নি। ঢাকা দক্ষিণের মতো উত্তরে আনিসুল হকের টেবিল ঘড়ি ও তাবিথ আউয়ালের বাস মার্কার ছবি অলিতে গলিতে ছেয়ে গেছে। তবে নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে এ সিটিতেও দেয়ালে কোন প্রার্থীকে পোস্টার সাঁটাতে দেখা যায়নি। এদিকে প্রতিদিনের মতো বৃহস্পতিবার ঢাকা দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী সাঈদ খোকন, মির্জা আব্বাসের পক্ষে তার স্ত্রী আফরোজা আব্বাস, উত্তরে আনিসুল হক ও তাবিথ আউয়ালকে নির্বাচনী প্রচারে সক্রিয় থাকতে দেখা গেছে। পাশাপাশি অন্য প্রার্থীরাও নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিয়েছেন। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাওয়াসহ বিভিন্ন সভায় তাঁরা অংশ নিয়েছেন। সাঈদ খোকন ॥ বৃহস্পতিবার ঢাকা দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী সাঈদ খোকন রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর মিরহাজীরবাগে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেন। এ এলাকায় তিনি ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনাসহ বিভিন্ন পথসভায় অংশ নেন। এ সময় তিনি তাঁর ইলিশ প্রতীকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী জয়ী হলে দেশে সহিংসতা শুরু হবে। শান্তিতে থাকতে হলে তাঁকে ভোট দিতে হবে। বিএনপির প্রার্থী জয়ী হলে গত তিন মাসের মতো বীভৎস পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেবে দেশকে। কেউ শান্তিতে থাকতে পারব না। ক্ষমতায় কে গেল না গেল সেটা পরের কথা, আগে বাঁচতে হবে। বিএনপি সরকার হটাতে চায়। তাদের প্রার্থী জয়ী হলে সারাদেশে আবারও মৌলবাদ শুরু হবে। বীভৎস পরিস্থিতির দিকে চলে যাবে দেশ। বাঁচতে চাইলে ইলিশ প্রতীকে একটা করে ভোট দেন। তিনি বলেন, মেয়র নির্বাচিত হলে জলাবদ্ধতা নিরসনে ব্যবস্থা নেয়া হবে। নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত ঢাকা। বিশেষ করে এ এলাকায় জলাবদ্ধতার সমস্যা প্রকট। আমার পিতা এ সমস্যার অনেকটা সমাধান করেছেন। তিনি আপনাদের সুখে-দুঃখে পাশে ছিলেন। কথা দিচ্ছি আমিও আপনাদের পাশে থাকব। ইলিশ প্রতীকে ভোট দিলে ঢাকার জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান হবে। এ সময় ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মনিরুল ইসলাম মনুর সভাপতিত্বে পথসভায় অন্যদের মধ্যেÑ দলের ঢাকা মহানগরের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, শ্যামপুর থানার সাধারণ সম্পাদক সানজিদা খানম, কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহসম্পাদক গোলাম সরোয়ার কবির বক্তব্য দেন। ৫১ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী কাজী হাবিবুর রহমান হাবুও উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও বৃহস্পতিবার ঢাকা দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী সাঈদ খোকনের পক্ষে সূত্রাপুর ও কোতোয়ালিতে নির্বাচনী প্রচার চালায় বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট। এ সময় জোটের পক্ষে সংগঠনের সিনিয়র সহসভাপতি অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান, আওয়ামী লীগ নেতা এ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার, অরুণ সরকার রানা, অভিনেত্রী পারুল আক্তার লোপা সাইদ খোকনের পক্ষে সূত্রাপুর থানা থেকে শুরু করে দেবেন্দ্র দাস লেন, ডাইল পট্টি, শাখারীবাজার, তাঁতীবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ করেন। আফরোজা আব্বাস ॥ গত ৮ এপ্রিল থেকে স্বামীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে রয়েছেন ঢাকা দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী মির্জা আব্বাসের সহধর্মিণী আফরোজা আব্বাস। নির্বাচনের আর মাত্র ১২ দিন সময় থাকলেও মির্জা আব্বাস মামলা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে এখনও প্রচারে নামতে পারেননি। বৃহস্পতিবার আফরোজা আব্বাস স্বামীর পক্ষে রাজধানীর সায়েদাবাদ এলাকা থেকে নির্বাচনী প্রচার শুরু করেন। পরে যাত্রাবাড়ীর একটি পথসভায় অংশ নেন। এ সময় তিনি নির্বাচনে বাধা দেয়ার একই অভিযোগ পুনরাবৃত্তি করেন। তিনি বলেন, সব সময় সাদা পোশাকের লোকজন তাঁদের পাশে ঘোরাঘুরি করে। লোকজনকে ডেকে নিয়ে হুমকি দেয়া হচ্ছে। পোস্টার লাগাতে গেলে হয়রানি করা হয়। পোস্টার লাগালে পরে তা ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা বসানোর দাবি জানিয়ে বলেন, সরকার বলেছে তারা সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। আমরাও তাই চাই। কেন্দ্রে কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা লাগানো হোকÑ মানুষ দেখুক কেমন নির্বাচন হচ্ছে। এ সময় তিনি সাঈদ খোকনকে ভাতিজা সম্বোধন করে নির্বিঘœ কাজ করতে দেয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, তুমি তোমার মতো কাজ কর। আমাদেরকে আমাদের মতো কাজ করতে দাও। আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী খোকন দেয়ালে পোস্টার লাগানোসহ নানাভাবে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন বলে অভিযোগ করেন। আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে মির্জা আব্বাসের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করা হবে বলেও উল্লেখ করেন। আনিসুল হক ॥ ঢাকা উত্তরে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আনিসুল হক গত ৭ এপ্রিল থেকেই বিরামহীন নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিচ্ছেন। বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরের ইনডোর স্টেডিয়ামের সামনে থেকে প্রচার শুরু করেন। এ সময় তিনি নির্বাচিত হলে সবুজ ঢাকা গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, উত্তাপ কমাতে হলে রাজধানীকে সবুজ করতেই হবে। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেনÑ আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, স্থানীয় সংসদ সদস্য ইলিয়াছ উদ্দিন মোল্লা, ঢাকা উত্তর যুবলীগের সভাপতি মইনুল হোসেন খান নিখিল, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব আব্দুন নূর তুষার, চিত্রনায়িকা বাঁধন, আনিসুল হকের সহধর্মিণী ও মোহাম্মদী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবানা হক প্রমুখ। আনিসুল হক নির্বাচনী অপপ্রচার থেকে বেরিয়ে এসে সবাই মিলেমিশে বন্ধু হয়ে সবুজ-সুন্দর ঢাকা গড়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, তরুণ সমাজকে অপপ্রচার থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তরুণরাই যদি অপপ্রচারে লিপ্ত হয় তাহলে এ সমাজ গড়বে কে? নির্বাচনী প্রচারে সব প্রার্থীর সমান সুযোগ প্রদানের জন্য মিডিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, যাঁরা নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন তাঁদের সবারই সমান প্রচারের সুযোগ দেয়া উচিত। সব প্রার্থী সমান সুযোগ পেলে জনগণই ঠিক করবেন কাকে মেয়র বানানো উচিত। মানুষের মতামতেই আগামীর মেয়র নির্বাচিত হবেন। তিনি বলেন, যেখানেই যাচ্ছি মানুষের আগ্রহ দেখে অভিভূত হচ্ছি। সাধারণ মানুষ আমাকে তাঁদের সমর্থন দিয়ে জয়যুক্ত করবেন। আনিসুল হক দুপুর সাড়ে ১২টায় গুলিস্তান জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ভবনে ক্রীড়াবিদদের সঙ্গে মতবিনিময়ে অংশ নেন। সেখান থেকে বিকেল ৪টায় খিলক্ষেত বাজারে পথসভা করেন। দক্ষিণ বাড্ডায় শিমুল তলায় নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেন। সন্ধ্যা ৭টায় এলজিইডি কনভেনশন সেন্টারে ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে যোগ দেন। তাবিথ আউয়াল ॥ নির্বাচনী প্রচারের দশম দিনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী তাবিথ আউয়াল বৃহস্পতিবার রাজধানীর উত্তরা জসিম উদ্দিন, সন্ধ্যায় খিলক্ষেতে নির্বাচনী প্রচার চালান। এছাড়া বেলা ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত প্রধান নির্বাচনী কার্যালয় লিংক রোডে রেগনাম ভবনে নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করেন। এ সময় তিনি বলেন, মেয়র নির্বাচিত হলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করবেন।
×