ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মূল লড়াইয়েও পাকিদের হারানোর প্রত্যয় টাইগারদের!

প্রকাশিত: ০৬:০০, ১৬ এপ্রিল ২০১৫

মূল লড়াইয়েও পাকিদের হারানোর প্রত্যয় টাইগারদের!

মিথুন আশরাফ ॥ সবদিকে একটি আলোচনাই। এবার পাকিস্তানের বিপক্ষে অন্তত একটি ওয়ানডে জেতবে বাংলাদেশ। ১৯৯৯ সালের পর বাংলাদেশ যে কাজটি করতে পারেনি, পাকিস্তানকে আর হারাতে পারেনি; এবার পারবে। স্মরণীয় মুহূর্ত আনবে। সেই পাকিস্তানকে আবারও হারানোর অপেক্ষার শুরু হয়ে যাচ্ছে শুক্রবারই। মাঝখানে আজকের দিনটিই বাকি। এরপরই শুরু হয়ে যাবে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ। শুক্রবার প্রথম ওয়ানডে, রবিবার দ্বিতীয় ওয়ানডে ও ২২ এপ্রিল তৃতীয় ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হবে। এ ওয়ানডে সিরিজ নিয়েই যত আশা বাংলাদেশের। অন্তত একটি ওয়ানডে জেতার খায়েশ! মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ অবশ্য শুধু ম্যাচ জেতার দিকে নন, সিরিজ জেতার দিকেই মনোযোগ দিয়েছেন। বলেছেন, ‘আমরা সিরিজ জিততে চাই।’ কী আত্মবিশ্বাস। এমন আত্মবিশ্বাস যদি প্রত্যেক ক্রিকেটারের ভেতর থাকে, তাহলে প্রথমবারের মতো যে ফেবারিট না হয়ে বাংলাদেশে খেলবে পাকিস্তান, সিরিজে না হোক একটি ওয়ানডেতো হারতেই পারে। আর সেই হার হলেই বাংলাদেশ বাজিমাত করবে। ১৯৯৯ সালের পর প্রায় ১৬ বছর পর আবারও পাকিস্তানকে হারানোর আনন্দ, সুখ মিলবে। পারবে বাংলাদেশ তা করে দেখাতে? বাংলাদেশ কোচ চন্দিকা হাতুরাসিংহে অবশ্য ক্রিকেটারদের মতো গা ভাসিয়ে দিয়ে কিছু বলতে চাইলেন না। শুধু জানালেন, ‘ক্রিকেটারদের মধ্যে অনেক আত্মবিশ্বাস আছে। বিশ্বাস জন্মেছে। শুধু মানসিক দিক দিয়েই নয়, সবদিক দিয়েই বিশ্বাস আছে। কিন্তু এটাও সত্য পাকিস্তানও ভাল দল। বাংলাদেশের কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতেও তাদের খুব বেশি বেগ পেতে হবে না। যে কোন দলের চেয়ে দ্রুত মানিয়ে নেবে তারা। তবে ভাল কিছুর আশাই করছি।’ হাতুরাসিংহে যাই বলুন, ক্রিকেটাররা কিন্তু জিতব, জিতব বলে যে একটি আবহ তৈরি করে দিয়েছেন; তাতে পাকিস্তান ক্রিকেটাররা মনে হচ্ছে ভরকে যাচ্ছে। তাদের ওপর একটা চাপ তৈরি হচ্ছে। এতদিন প্রতিপক্ষরা বাংলাদেশকে নিয়ে এসব বলে একটা চাপ তৈরি করত। এখন বাংলাদেশই প্রতিপক্ষ শিবিরে চাপ ঢুকিয়ে দিচ্ছে। সাকিব আল হাসান কোন কথা বললে, সেটা যে দলই হোক; আমলে নেয়ার কথা। পাকিস্তান যেন তাই নিচ্ছেন। সাকিব বলেছেন, ‘এবারই সুযোগ পাকিস্তানকে হারানোর।’ মোহাম্মদ হাফিজতো যেন পাল্টা জবাবই দিয়েছেন। হাফিজের কথার সারমর্ম এমন দাঁড়িয়েছে, ‘যতই আমাদের তরুণ দলটি নিয়ে ভাব, চিন্তা কর জিতে যাবে; আদলে তা হতে দেব না। জিতব আমরাই।’ একমাত্র হাফিজই যা পাকিস্তানের জয় নিয়ে কথা বলেছেন। একমাত্র তারই সুর নরম ছিল না। এছাড়া পাকিস্তানের যে ক্রিকেটারই কথা বলেছেন, সুর ছিল নরম। জয় নিয়ে কোন কথা বলতেই রাজি নন যেন। নতুন অধিনায়ক আজহার আলী তো বলেই দিয়েছেন, ‘আশা করছি দল ভাল করবে। তবে তখনই ভাল করবে যখন ব্যাটিংটা ভাল হবে।’ আজহার যেন বিশ্বকাপের স্মৃতি সামনে তুলে ধরতে চাইলেন। বিশ্বকাপে পাকিস্তান যে বাজে খেলা দেখিয়েছে তা খারাপ ব্যাটিংয়ের জন্যই। এবার বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজেও যদি একই দশা হয়, তাহলে হারের শঙ্কা থাকছেই পাকিস্তানের। সেই শঙ্কা যেন পাক ক্রিকেটারদেরও আঁকড়ে ধরেছে। তাইতো আজহার আলী, ফাওয়াদ আলমরা কোনভাবেই জয়ের কথা বলতে চাইছেন না। শুধু বলছেন, ‘তরুণ দল। দলে যারা আছে, তারা নিজেদের প্রমাণ করতে চাইবে। সেই প্রমাণের তাগিদই ভাল কিছু এনে দেবে।’ তবে কোচ ওয়াকার ইউনুস এতটাই সতর্ক যে দলের ক্রিকেটারদের সতর্ক থাকতেও বলছেন। শুধু কী সতর্ক থাকতে বলেছেন, বাংলাদেশে আসার পর যে অনুশীলন করছে ক্রিকেটাররা, সেই অনুশীলনেও মিডিয়াকে সামনে ভিড়তে দিচ্ছে না। গোপনতাই যেন রক্ষা করতে চাইছেন। তাতে কী কোন লাভ হবে? পাকিস্তানের সাবেক উইকেটরক্ষক রশিদ লতিফ কোন যে লাভ হবে না সেই রকম ইঙ্গিতই দিয়ে দিয়েছেন। বলেছেন, ‘বাংলাদেশ-পাকিস্তান সিরিজে যদি পাকিস্তান হারে তাহলে আমি অবাক হব না।’ কেন অবাক হবেন না? লতিফ ব্যাখ্যা দিলেন, ‘বিশ্বকাপ যারা দেখেছে, তারা জানে; বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান কেমন খেলেছে। একদিকে পাকিস্তান যে খেলা দেখিয়েছে, তাতে হতাশ হতেই হয়েছে। এবার সিরিজেও যদি সেই ধারা বজায় থাকে তাহলে বিপদ আসতে বাধ্য। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ খেলেছে অসাধারণ। দলটি কত উন্নতি করেছে। কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে। ক্রিকেটারদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসও অনেক। যদি সেই আত্মবিশ্বাস নিয়ে সিরিজেও চমক দেখায় ক্রিকেটাররা, তাহলে বাংলাদেশ জিতলেও অবাক হব না।’ এখন দেখা যাক বাংলাদেশ সেই কাজটি করতে পারে কিনা। প্রস্তুতি ম্যাচ যে হয়েছে, সেই ম্যাচটিতে দুর্দান্ত খেলেছে বিসিবি একাদশ। পাকিস্তান অনেক বড় কিছু করে দেখাতে পারেনি। বাংলাদেশ দলের জন্যও যেটি আশার আলোই দেখাচ্ছে। তবে সিরিজে যদি উদ্বোধনী জুটি কিছু করে দেখাতে না পারে, বিপদ আছে। তাও সবার নজরে আসছে। এরবাইরে সাঈদ আজমল যে ভয়ের কারণ, সেই ভয় একটু কমই হচ্ছে। বোলিং এ্যাকশন শুধরে এখন সেই ধার আবার খুঁজে পাবেন কিনা আজমল, তা নিয়েই আছে দ্বিধা। আর বাংলাদেশের প্রত্যেক ক্রিকেটারের মধ্যেই এখনও টগবগে ত্যাজ কাজ করছে। বিশ্বকাপে এতই ভাল খেলেছে বাংলাদেশ, যে কোন দলই এখন বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলতে নামলে অনেক ভাববে। সেই ভাবনাটাই পাকিস্তান করছে। আর করছে বলেই পাকিস্তানকে হারানোর স্বপ্নও এবার অনেক বড় করেই দেখা হচ্ছে। অপেক্ষা করা হচ্ছে একটি জয়ের। সেই অপেক্ষার পালা শুরু হচ্ছে শুক্রবার।
×