ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নীলফামারীতে হিন্দুদের হুমকি দিয়ে পোস্টার, মন্দিরে আগুন

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ১৬ এপ্রিল ২০১৫

নীলফামারীতে হিন্দুদের হুমকি দিয়ে পোস্টার, মন্দিরে আগুন

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ॥ ‘পূজা-পার্বণ চলবে না, হরিমন্দির/দুর্গামন্দির থাকবে না। হিন্দু ব্যাটা পালাও ভারতে, এ দেশ মোদের, দিব না আর জীবন। জামায়াত-শিবির বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।’ নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার খালিশা চাঁপানী ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের কাকিনা চাঁপানী সার্বজনীন পুরাতন দুর্গামন্দিরে পহেলা বৈশাখ মঙ্গলবার ভোরে অগ্নিসংযোগ করে এমন ভাষা ব্যবহার করে হাতে লেখা দুটি পোস্টার সেঁটে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। ফলে অগ্নিকা-ে মন্দিরের সামনে গ্রিলসহ সামনের খুঁটি পুড়ে গেছে। এলাকাবাসী দুষ্কৃতকারীদের চিহ্নিত করতে না পারলেও পোস্টারের একটি লাইনে লেখা রয়েছে জামায়াত-শিবির বাংলাদেশ জিন্দাবাদ। এ থেকে অনেকের ধারণা, ঘটনাটি যুদ্ধাপরাধীর মামলায় ফাঁসিতে দ-িত কামারুজ্জামানের পক্ষ অবলম্বন করে জামায়াত-শিবির এই ঘটনা ঘটিয়েছে। ঘটনার পর থেকে ওই এলাকার বসবাসরত ৪শ’র মতো হিন্দু সম্প্রদায়ের পরিবারের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সেখানে গ্রাম চৌকিদারসহ পুলিশের পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মন্দিরের সভাপতি নলিনী মোহন রায় বলেন, মঙ্গলবার ভোরে মন্দিরে আগুন দেখতে পায় এলাকাবাসী। এ সময় লোকজন এগিয়ে এসে দেখে মন্দিরটির সামনের গ্রিলে তালা লাগানো এবং বারান্দায় কাঠ-খড়িতে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেয়া হয়। এতে মন্দিরের সম্মুখভাগ পুড়ে যায়। পরে মন্দিরের পেছনের পাকা দেয়ালে সাঁটানো দুটি পোস্টার দেখতে পাওয়া যায়। পরে বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ প্রশাসনকে অবহিত করা হয়। মঙ্গলবার দুপুরে স্থানীয় সংসদ সদস্য আফতাব উদ্দীন সরকার, ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল করিম, ডিমলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রুহুল আমিনসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ঘটনাস্থল থেকে দুটি পোস্টার উদ্ধার করা হয়েছে। পোস্টারগুলোতে হিন্দু সম্প্রদায়কে হুমকি দিয়ে ভারত পাঠিয়ে দেয়ার কথা উল্লেখ করে জামায়াত-শিবির জিন্দাবাদ বলা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। ওসি জানান, এ ঘটনায় ওই মন্দিরের সভাপতি নলিনী মোহন রায় বাদী হয়ে ডিমলা থানায় একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিয়েছেন। নীলফামারী-১ (ডোমার-ডিমলা) আসনের সংসদ সদস্য ও ডিমলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আফতাব উদ্দীন সরকার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেন, যুদ্ধাপরাধীর বিচারকার্যে বিঘœ সৃষ্টি করতে একটি মহল দেশে সাম্প্রদায়িক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির লক্ষ্যে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে স্পষ্টভাবে ফুটে উঠছে, এ ধরনের ঘটনা জামায়াত-শিবির ছাড়া অন্য কেউ করেনি। এ ব্যাপারে ডিমলা উপজেলার খালিশা চাঁপানী ইউনিয়ন জামায়াতের সেক্রেটারি আবু রায়হানের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলা হলে তিনি সাংবাদিকদের জানান, ওই ঘটনার সঙ্গে জামায়াত-শিবির কোনভাবেই জড়িত নয়। একটি মহল সাজানো ও পরিকল্পিত ঘটনা ঘটিয়ে তা জামায়াত-শিবিরের ওপর চাপাতে চাইছে। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষী ব্যক্তির শাস্তি দাবি করেন। এ ঘটনার নিন্দা প্রকাশ করে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন নীলফামারী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দেওয়ান কামাল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট মমতাজুল হক, জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি এ্যাডভোকেট অক্ষয় কুমার রায়, সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট রমেন্দ্র নাথ বর্ধণ বাপ্পী, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক খোকারাম রায়।
×