ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গোলাম আযমের স্ত্রীকে ভিআইপি মর্যাদা দেয়ার ঘটনা ফাঁস করায় রোষানলে জনকণ্ঠ রি

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১৬ এপ্রিল ২০১৫

গোলাম আযমের স্ত্রীকে ভিআইপি মর্যাদা দেয়ার ঘটনা ফাঁস করায়  রোষানলে জনকণ্ঠ রি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মূলনায়ক গোলাম আযম পতœী ও ভাতিজাকে গোপনে হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে ভিআইপি মর্যাদা দিয়ে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়ার ঘটনা ফাঁস করার অপরাধে বিমানবন্দর পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন জাকির হোসেন ও প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা ইফতেখার জাহান হোসেনের রোষানলে পড়েছেন জনকণ্ঠের রিপোর্টার। জনকণ্ঠসহ কয়েকটি পত্রিকা গত ৯ এপ্রিল এ তথ্য ফাঁস করে রিপোর্ট প্রকাশ করে। ঘটনার চারদিন পর গত ১৩ এপ্রিল পরিচালকের পক্ষে প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা জনকণ্ঠ সম্পাদক বরাবর লিখিত এক চিঠিতে অপ্রাসঙ্গিকভাবে অন্য একটি ঘটনার অবতারণা করে পত্রিকার সিভিল এ্যাভিয়েশন বিষয়ক রিপোর্টারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেন। এদিকে মূল ঘটনা উদ্ঘাটনে আজ পর্যন্ত কোন তদন্ত হয়নি। সিভিল এ্যাভিয়েশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশ উপেক্ষা করে বরং অপরাধীকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে সিভিল এ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষ। জনকণ্ঠ সম্পাদক বরাবর চিঠিতে ইফতেখার অভিযোগ করেন, আগের দিন অর্থাৎ ৭ এপ্রিল বিমানবন্দরে সংবাদ সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত রিপোর্টার পাস না ঝুলিয়ে পকেটে রেখে বিমানবন্দরে প্রবেশ করেন। পরিচালকসহ নিরাপত্তা কর্মীরা তাকে পাস প্রদর্শন করতে বললে তিনি বিতর্কে লিপ্ত হন। চিঠিতে রিপোর্টারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সম্পাদককে বলা হয়। প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে ৭ এপ্রিল বিমানবন্দরের কাস্টমস হলে বিপুল পরিমাণ সিগারেট ধরা পড়ার সংবাদ পেয়ে ওই রিপোর্টার সেখানে যান। কাজ শেষে সেখান থেকে চলে আসার সময় পরিচালক প্রথমে পাস গলায় ঝুলানোর কথা বলেন। রিপোর্টার কোন উচ্চবাচ্য না করে পাস ঝুলিয়ে চলে আসেন। বিমানবন্দরে দায়িত্বপালনকারী ম্যাজিস্ট্রেটসহ অনেকেই সেখানে উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে যখনই বড় চোরাচালান আটক করা হয় তখনই সাংবাদিকদের সেখানে নিয়ে বিফ্রিংয়ের আয়োজন করা হয়। সেখানে তখন বিপুলসংখ্যক সাংবাদিক ভেতরে ঢুকে ছবি তোলাসহ অন্যান্য পেশাগত কাজ করেন। এটাই বিমানবন্দরের সাধারণ নিয়মে পরিণত হয়েছে। ৭ এপ্রিল তাই ঘটেছে। এ ঘটনা পুঁজি করে নিজেদের উদোর পি-ি বুদোর ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করছেন পরিচালক জাকির হোসেন ও নিরাপত্তা কর্মকর্তা ইফতেখার। এ ঘটনায় জড়িত বিমানবন্দর পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন জাকির হোসেন ও প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা ইফতেখার জাহান হোসেনকে নানা কায়দায় রক্ষা করার জন্য অপকৌশলের আশ্রয় নিয়েছে সিভিল এ্যাভিয়েশন। তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সিভিল এ্যাভিয়েশন তদন্ত না করে উল্টো জনকণ্ঠের সাংবাদিকের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে বিমানবন্দরে না যাওয়ার হুমকি দিয়েছে। এমনকি যে সোর্স সাংবাদিককে এ তথ্য সরবরাহ করেছে, তাকেও খুঁজে বের করার নিদের্শ দিয়েছেন পরিচালক জাকির হোসেন। বুধবার শাহজালাল বিমানবন্দরে গিয়ে সেখানকার কর্মকর্তাদের মধ্যে চরম আতঙ্ক লক্ষ্য করা যায়। পরিচালক নিজের অপরাধ ঢাকতে এখন জনকণ্ঠ সাংবাদিককে শায়েস্তা করতে তৎপর। এদিকে শাহজালাল বিমানবন্দরের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বসে যুদ্ধাপরাধীদের আত্মীয়-স্বজনদের পৃষ্ঠপোষকতা করেও পার পেয়ে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এ নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে সিভিল এ্যাভিয়েশনের স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী কর্মকর্তাদের মাঝে। তাদের মতে, প্রকাশ্য দিবালোকে গোলাম আযম পতœী ও তার পুত্রবধূকে ভিআইপি মর্যাদা দেয়া হয়। অতিরিক্ত সচিব দেলেনা বেগমের নামে পাস ইস্যু করা হয়। ওই পাস দিয়ে গোলাম আযম পতœী ও অন্য স্বজনদের সর্বোচ্চ মর্যাদা দিয়ে ভিআইপি ইমিগ্রেশন কাউন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। কর্মকর্তারা ভাল করেই জানেন, একজনের নামে ইস্যুকৃত পাস শুধু একজনের জন্যই। সেখানে কি করে তিনজনকে ভিআইপি মর্যাদা দিয়ে ইমিগ্রেশন পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয় তা রহস্যজনক। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা দ্রুত ইমিগ্রেশন শেষ করার তাগিদ দিলে সন্দেহ দেখা দেয়। তাৎক্ষণিকভাবে এ সংবাদ গোটা বিমানবন্দরে রটে যাওয়ার পর সেখানে ছুটে আসে এপিবিএনসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। তখন অবস্থা বেগতিক দেখে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা সেখান থেকে আড়ালে চলে যান। প্রত্যক্ষদর্শী মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের একজন পুলিশ কর্মকর্তা সেখান থেকে এ ঘটনা বিস্তারিত জনকণ্ঠকে ফোন করে জানান। পরদিন ৯ এপ্রিল বৃহস্পতিবার জনকণ্ঠসহ কয়েকটি পত্রিকায় প্রকাশ হলে এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। বিষয়টি জানতে পেরে বিস্ময় প্রকাশ করেন বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন ও স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। রাশেদ খান মেনন তখন জনকণ্ঠকে বলেন, ঘটনার তদন্ত করে অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে সিভিল এ্যাভিয়েশান কর্তপক্ষ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বুধবার সিভিল এ্যাভিয়েশনের একজন সদস্য জনকণ্ঠকে বলেন, তদন্ত হবে দূরের কথা উল্টো পত্রিকাগুলোতে বিশেষ করে জনকণ্ঠে কেন এ জাতীয় সংবাদ ছাপা হলো সেজন্য ওই পত্রিকার বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নেয়ার চিন্তা-ভাবনা চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় জনকণ্ঠ সম্পাদককে চিঠি পাঠিয়ে রিপোর্টারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়। প্রকাশ্য দিবালোকে গোলাম আযমের মতো যুদ্ধাপরাধীদের পরিবারকে পৃষ্ঠপোষকতা করার পরও কিভাবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বহাল তবিয়তে আছেন, কেনই বা এ ঘটনা তদন্তও করা হবে না, তাদের খুঁটির জোর কোথায় এ প্রশ্ন এখন সবখানে। দোষী ব্যক্তির শাস্তি না হওয়ার কারণেই এখন তারা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের পত্রিকার ওপর আঘাত হানার চেষ্টা করছে। এ সম্পর্কে শাহজালালে কর্মরত একটি গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা বলেন, এটা তদন্তের কি আছে। শাহজালালের গুরুত্বপূর্ণ সব পয়েন্ট সিসি টিভির আওতায় এবং সব দৃশ্য রেকর্ড করা আছে। ওই ফুটেজ দেখলেই দেখা যাবে কারা কিভাবে গোলাম আযমের স্ত্রী সৈয়দা আফিফা আজম, তার পুত্রবধূ তাসনীম আনজুমসহ অন্যদেরকে প্রটোকল দেয়ার কাজে ব্যতিব্যস্ত ছিলেন। ভিডিও ফুটেজ দেখেই ব্যবস্থা নিতে পারে সিভিল এ্যাভিয়েশন। জানতে চাইলে এ ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, শাহজালাল বিমানবন্দরের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় এ ধরনের ভুল বা অপরাধ করার সুযোগ নাই। সিভিল এ্যাভিয়েশন তদন্ত না করলেও নিরাপত্তার স্বার্থে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেই তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×