স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট অফিস ॥ একখ- জমি নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে দীর্ঘ ৫ বছর ধরে সিলেটে গ্রামের মোড়লরা একটি পরিবারকে একঘরে করে রেখেছে। ২০১০ সাল থেকে ওই পরিবারটিকে গ্রামের মসজিদে নামাজ পড়তে দেয়া হচ্ছে না। বিয়ে কিংবা সামাজিক কোন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ সব কিছুতেই রয়েছে গ্রামের মোড়লদের বাধা। এমনকি গ্রামের কোন লোক মারা গেলে জানাজার নামাজেও ওই পরিবারের সদস্যরা অংশগ্রহণ করতে পারেন না। বিষয়টি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যনকে অবগত করা হলেও তিনি সালিশ বিচারের নামে এক লাখ টাকা নিয়ে ওই পরিবারকে দিনের পর দিন ঘুরিয়েছেন। পরে টাকা ফেরত দেন। ঘটনাটি সিলেট সদর উপজেলার কান্দিগাঁও ইউনিয়নের মোল্লারগাঁওয়ে। জানা যায়, একই বংশের চাচাতো ভাই তুতা মিয়ার সঙ্গে ১০ শতক ভূমি নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল মৃত মনুহর আলীর ছেলে সদর উপজেলা ছাত্রলীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমানের পরিবারের। এ দ্বন্দ্বকে পুঁজি করে গ্রামের মোড়লরা ৫ বছর থেকে একঘরে করে রাখেন সাজ্জাদদের পরিবারকে। এ পরিবারের সদস্যদের মসজিদে নামাজ ও গ্রামের লোকদের সঙ্গে কথা না বলার মৌখিক ঘোষণা দেন মোড়লরা। এলাকাবাসীর প্রতি মোড়লরা নিয়ম জারি করেন যে, ওই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলবে তাকেই ৫ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। এমন কঠোর নিয়ম মেনেই চলতে হচ্ছে সাজ্জাদদের পরিবারকে। অবশ্য এর মধ্যে ৫ গ্রামের মোড়ল, সদর উপজেলার সাবেক ভাইস-চেয়ারম্যান ও কান্দিগাঁও ইউনিয়ন চেয়ারম্যান বিষয়টি সমাধান করতে পারেননি। গ্রামের মনফর আলী জানান, মোড়লদের তিনি সাজ্জাদের বড় ভাই প্রবাসী ফরিদ উদ্দিনকে নিয়ে গেছেন কিন্তু কেউ কোন সুরাহা দিতে রাজি হয়নি।
ফরিদ উদ্দিন জানান, ২০ সদস্যের পরিবার তাদের। বাবা নেই। গ্রামের সবাইকে নিয়ে তারা এক সঙ্গে চলতে চান। কিন্তু তাদেরকে একঘরে করে রাখা হয়েছে। কেউ কোন সমাধান দিতে চাচ্ছেন না। সাজ্জাদের পাশের বাড়ির সুরুজ আলী জানান, সাজ্জাদদের ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ একান্ত। এখানে গ্রামের মোড়লদের কোনই স্বার্থ নেই। তারপরও তাদেরকে সমাজে স্থান দেয়া হচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের এ গোষ্ঠীর ৪৫টি পরিবার গ্রামের মোড়লদের অনুরোধ করেছি ‘অন্তত সাজ্জাদদের পরিবারকে যেন জুমার নামাজটা মসজিদে পড়তে দেয়া হয়। কিন্তু তাও দেয়া হয়নি।’
সাদিপুর গ্রামের বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য শাহবুদ্দিন জানান, বিষয়টি সমাধান ও তাদের পঞ্চায়তে স্থান ফিরিয়ে দিতে তিনি প্রতিবারই সালিশে ছিলেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে আজও একঘরে রয়েছে সাজ্জাদ গংরা।
এ বিষয়ে কান্দিগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য তিনিসহ বিশিষ্ট মুরব্বীরা সালিশে বসলে সাজ্জাদদের কারণেই তা নিষ্পত্তি করতে ব্যর্থ হন। সালিশের জন্য ১ লাখ টাকা জামানত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জামানতের পুরো ১ লাখ টাকা সাজ্জাদ ফিরিয়ে নিয়েছে। তাদেরকে ঢুকানোর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যদি তারা একঘরে থেকে থাকে তা তাদের গ্রামের বিষয়। চেয়ারম্যান হিসেবে নিজে থেকে তাদেরকে পঞ্চায়েতে ঢুকানোর উদ্বোগ নিবেন কিনা এমন প্রশ্ন করলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।