ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিদ্যুতের ব্ল্যাকআউট প্রতিরোধে তিন স্তরে নিয়ন্ত্রণের সুপারিশ

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১৪ এপ্রিল ২০১৫

বিদ্যুতের ব্ল্যাকআউট প্রতিরোধে তিন স্তরে নিয়ন্ত্রণের সুপারিশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিদ্যুতের ব্ল্যাক আউট প্রতিরোধে উৎপাদন, সঞ্চালন এবং বিতরণ এ তিন জায়গাতেই সুনিয়ন্ত্রণ আরোপের সুপারিশ করছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) গবেষক দল। গত পহেলা নবেম্বর সারাদেশের ব্ল্যাক আউটের ওপর গবেষণা শেষে সোমবার বিকেলে এ তথ্য জানানো হয়। রাজধানীর বিদ্যুত ভবনে পাওয়ার সেল ওই সেমিনারের আয়োজন করে। তড়িত প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. এস শাহনেওয়াজ আহমেদ বলেন, ওই দিন ভেড়ামারা এইচবিডিসি সাব-স্টেশনে (ভারত-বাংলাদেশ বিদ্যুত সঞ্চালন ব্যবস্থার ব্যাক টু ব্যাক সাব-স্টেশন) ৪৪৪ মেগাওয়াট বিদ্যুত বিতরণ ট্রিপ করে। একইসঙ্গে দেশের ছোট ছোট বিদ্যুত কেন্দ্রর আরও ২৯৩ মেগাওয়াট ট্রিপ করে। এর ধকল এসে পড়ে জাতীয় গ্রিডের ওপর। এতে দেশে ব্ল্যাক আউটের ঘটনা ঘটে। ওইদিন সারাদেশ অন্ধকারে তলিয়ে যায়। তিনি বলেন, আমাদের দেশের আন্ডার ফ্রিকোন্সেরিলেগুলো উৎপাদন, সঞ্চালন এবং বিতরণ তিন জায়গাকে সামাল দেয়ার মতো করে নক্সা করা হয়নি। যাতে করে বড় বিপর্যয়ের সৃষ্টি হলে নিজে থেকেই তা সামাল দিতে পারে না। এজন্য ব্ল্যাক আউট সংক্রান্ত সরকারের দুটি কমিটির প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে বলেন, এখানে কিছু কিছু বিষয়ের অস্পষ্টতা রয়েছে। ড. শাহনেওয়াজ বলেন চার দশমিক চার সেকেন্ডের মধ্যে লোড ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সরবরাহ ও চাহিদার মধ্যে সমন্বয় করা সম্ভব হলে বিপর্যয় ঘটত না। এ ঘটনার আগে এবং পরেও ভেড়ামারা সাব-স্টেশনটি ট্রিপ করেছে। কিন্তু ওই সময়গুলোতে জাতীয় গ্রিডে কোন বিপর্যয় হয়নি। ভেড়ামারা উপকেন্দ্রে সফটওয়ারে লো-ভোল্টেজের কথা বলা হলেও বাস্তবে লো-ভোল্টেজ ছিল না। সেদিন শনিবার ছুটির দিন ছিল। ওইদিন কোন লোডশেডিং ছিল না। এতে এটা নিশ্চিত হওয়া যায় যে, যখন গ্রিড বিপর্যয় ঘটে ওই সময় অর্থাৎ সাড়ে ১১টার দিকে বিদ্যুতের চাহিদাও হঠাৎ করে বেড়ে যায়নি। সে সময় মোট চার হাজার ৬৭৪ মেগাওয়াট বিদ্যুত জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছিল। তিনি নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে বলেন, ৭৩৪ মেগাওয়াট বিদ্যুত ঘাটতি তৈরি হওয়ার পর পরই যদি একই পরিমাণ লোডশেডিং করা যেত তাহলে এ পরিস্থিতি তৈরি হতো না। তবে ঘটনা ঘটার চার থেকে ছয় দশমিক ছয় সেকেন্ডের মধ্যেই এ উৎপাদন ঘাটতি নিয়ন্ত্রণ করতে হতো। এতে বিদ্যুত উৎপাদনের যে কার্ভ তা ওপরে ওঠে যেত এবং পাওয়ার ফ্যাক্টরও ৪৯ দশমিক ০৬৬ হার্টজ হয়ে যেত। অথবা ওইসময় ছোট ছোট বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো থেকে একই পরিমাণ বিদ্যুত সরবরাহ করা যেত এবং পাওয়ার ফ্যাক্টর ৫০ হার্টজ করা সম্ভব হতো তাহলে এ গ্রিড বিপর্যয় ঘটতো না। অর্থাৎ যথা সময়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার প্রয়োজন ছিল। প্রতিকার হিসেবে বলা হয়, এ ধরনের ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে একই পরিমাণ লোডশেড যত দ্রুত সম্ভব করতে হবে। উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থা এমনভাবে করতে হবে যেন এক সঙ্গে যে কোন দুই ব্যবস্থা বিকল হলেও তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। নেপাল, ভুটান, ভারত ও মিয়ানমার থেকে বিদ্যুত আমদানির ক্ষেত্রে আলাদা বিদ্যুত সঞ্চালন লাইন ব্যবহার করতে হবে। এক্ষেত্রে আলাদা এক্সপ্রেস ফিডার ব্যবহার করা যেতে পারে। বিদ্যুত কেন্দ্রে কত উৎপাদন হচ্ছে তার মধ্যে সমন্বয় রাখতে হবে। কোন স্থানে হঠাৎ করে লোডশেডিং করা যাবে না। আগে থেকে বলে নির্ধারণ করে লোডশেডিং করতে হবে। এতে গ্রিড বিপর্যয়ের কারণও সহজে বোঝা যাবে। স¥ার্ট গ্রিড ও স্মার্ট মিটার সংযোগ করতে হবে। এর আগে ২০০৭ সালের ডিসেম্বরে সিডরের সময় দেশে আরও এক দফা ব্ল্যাক আউট ঘটেছিল। ব্ল্যাক আউট প্রতিরোধের জন্য যে সব সুপারিশ করা হয় তার বাস্তবায়ন দ্রুত শেষ করা উচিত বলে মনে করেন তিনি। এছাড়া আমাদের বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো ডিজিটাল পদ্ধতিতে পরিচালনা, জিপিএস সময় মান নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা জরুরী বলেও জানান এ গবেষক। অনুষ্ঠানে বিদ্যুত সচিব বলেন, ভবিষ্যতে বিদ্যুত ব্যবস্থাপনায় আরও বড় চ্যালেঞ্জ আসবে। বড় বড় কেন্দ্র উৎপাদনে আসছে। বড় কেন্দ্রগুলো উৎপাদনে এলে তা নিয়ন্ত্রণ জটিল হবে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এখন থেকেই ব্যবস্থা নিতে হবে। ব্যবস্থাপনাকে আরও উন্নত করতে হবে। দ্রুত সময়ে সঞ্চালন ব্যবস্থা উন্নত করার উদ্যোগ নেয়া হবে বলে তিনি জানান। পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে পিডিবি, আরইবি, পিজিসিবি এবং বিদ্যুত বিতরণ সংস্থার কর্মকর্তারা সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন।
×