ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চট্টগ্রামে জঙ্গীদের নতুন সংগঠন ‘হামজা ব্রিগেড’

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১৪ এপ্রিল ২০১৫

চট্টগ্রামে জঙ্গীদের নতুন সংগঠন ‘হামজা ব্রিগেড’

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে জঙ্গী তৎপরতায় লিপ্ত নতুন সংগঠন ‘হামজা ব্রিগেড’-এর তিন সদস্য ও তাদের এক অস্ত্র সরবরাহকারীকে গ্রেফতার করতে সমর্থ হয়েছে র‌্যাব-৭। রবিবার দুপুর থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত স্টেশন রোডের একটি হোটেল, পরে আকবরশাহ থানার একেখান গেট এলাকার একটি বাস কাউন্টার এবং সর্বশেষ পাঁচলাইশ থানার একটি আবাসিক ভবনে অভিযান চালিয়ে এসব জঙ্গীদের গ্রেফতার এবং অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। হামজা ব্রিগেডের সদস্যরা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। ইতোপূর্বে বাঁশখালী, মহানগর হালিশহর ও হাটহাজারীর মাদ্রাসা থেকে গ্রেফতারকৃতরা এই ব্রিগেডের সঙ্গে জঙ্গী কাজে জড়িত। ভারতের মিজোরাম থেকে সীমান্ত পথে এ জঙ্গী গ্রুপের কাছে ভারি অস্ত্রের সরবরাহ আসে বলে তারা স্বীকার করে এবং অস্ত্রের বাঘা বাঘা যোগানদাতা রয়েছে। দেশীয় পর্যায়ে অস্ত্র গ্রহীতাদের এমন একজনও র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়েছে। গ্রেফতারকৃত জঙ্গীদের প্রাথমিক স্বীকারোক্তি মতে ২০১৩ সালের নবেম্বর মাসে চট্টগ্রাম নগরীর ফয়’স লেক এলাকার একটি রেস্টুরেন্টে শহীদ হামজা গ্রুপ নামের এই সংগঠনটি গঠিত হয়। র‌্যাব সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের বাঁশখালীর দুর্গম লটমনি পাহাড়ে জঙ্গী আস্তানা আবিষ্কার ও অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনার সূত্র ধরে গ্রেফতার করা হয় এই তিন জঙ্গী ও এক অস্ত্র যোগানদাতাকে। র‌্যাবের এই অভিযানে উদ্ধার হয় পাঁচটি একে-২২ রাইফেল ও পাঁচটি বিদেশী পিস্তলসহ বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ। এ নিয়ে চট্টগ্রামে গত ২ মাসে র‌্যাবের অভিযানে মোট ২৪ জঙ্গী গ্রেফতার হলো। র‌্যাব-৭ এর সহকারী পরিচালক (গণসংযোগ) মোঃ সোহেল মাহমুদ জানান, গ্রেফতার ৪ জনের মধ্যে একজন অস্ত্র সরবরাহকারী এবং বাকি তিনজন জঙ্গী। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা অস্ত্র ও গোলাবারুদের মধ্যে রয়েছে পাঁচটি একে-২২ রাইফেল, পাঁচটি বিদেশী পিস্তল, ১০টি একে-২২ এর ম্যাগজিন, পাঁচটি পিস্তলের ম্যাগজিন, একটি এসবিবিএল বন্দুক, একটি এলজি ও ৩ হাজার ৬৬৮ রাউন্ড বিভিন্ন ধরনের গুলি। নগরীর কোতোয়ালি, আকবরশাহ ও পাঁচলাইশ থানার বিভিন্ন এলাকার অভিযান চালিয়ে জঙ্গীদের গ্রেফতার ও আগ্নেয়াস্ত্রগুলো উদ্ধার করা হয়। যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তারা হলো- অস্ত্র সরবরাহকারী মোজাহের হোসেন মিয়া (৩৫), বাঁশখালীতে ট্রেনিংপ্রাপ্ত জঙ্গী সাব্বির আহমেদ ওরফে মুহিব (২৩), কামাল উদ্দিন ওরফে মোস্তফা (২৪) এবং আশরাফ আলী ওরফে আদনান (২৫)। র‌্যাব সূত্রে জানানো হয়, কোতোয়ালি থানার চট্টগ্রাম রেল স্টেশনের বিপরীতে ‘ডিটাউন’ নামের একটি আবাসিক হোটেলে জঙ্গীরা অস্ত্র ক্রয়-বিক্রয় করবে এমন এক তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাবের একটি দল গত রবিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করে জঙ্গীদের অস্ত্র সরবরাহকারী মোজাহের ও সাব্বিরকে। এর মধ্যে মোজাহেরের বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার উত্তর কাঞ্চনা গ্রামে। আর সাব্বিরের বাড়ি হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট থানা গুলগাঁও গ্রামে। তাদের কাছে পাওয়া যায় চারটি বিদেশী পিস্তল, চারটি পিস্তলের ম্যাগজিন, ১ হাজার রাউন্ড ২২ বোর রাইফেলের গুলি, ১২ রাউন্ড পিস্তলের গুলি। এছাড়া একটি মোটরসাইকেলও আটক করা হয়। পরে এ দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী রাত সাড়ে ১১টার দিকে নগরীর আকবরশাহ থানার একেখান মোড়ে অবস্থিত শ্যামলী বাস কাউন্টার থেকে গ্রেফতার করা হয় কামাল উদ্দিন ও আশরাফ আলী আদনানকে। এরা চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পালিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তাদের আটক করা হয় দুটি ট্যাব ও চারটি মোবাইল ফোনসেটসহ। এ দুজনের মধ্যে কামালের বাড়ি ঢাকার ধামরাই থানার ইন্দরা নয়াচর গ্রামে। আর আশরাফ আলীর বাড়ি নওগাঁ জেলার পরশা থানার পরশা গ্রামে। জিজ্ঞাসাবাদে জঙ্গীরা জানায়, চট্টগ্রাম নগরী পাঁচলাইশ থানার গ্রীনবাংলা জাহানার ম্যানশন নামের একটি বাড়ির সপ্তম তলায় জনৈক মাসুদ রানা ওরফে ফরহাদের বাসায় তাদের অস্ত্র ভা-ার রয়েছে। সে তথ্যের উপর ভিত্তি করে র‌্যাব সদস্যরা সোমবার সকাল ৮টা থেকে প্রায় ৩ ঘণ্টার অভিযানে ওই বাসা থেকে উদ্ধার করে আরও অস্ত্রশস্ত্র। এর মধ্যে রয়েছে পাঁচটি একে-২২ রাইফেল, একটি বিদেশী পিস্তল, একটি এসবিবিএল বন্দুক, একটি এলজি, দশটি একে-২২ ম্যাগজিন, একটি পিস্তলের ম্যাগজিন, ২ হাজার ১৫৫ রাউন্ড ২২ বোরের গুলি এবং ৫০১ রাউন্ড শট গানের গুলি। এছাড়া বিভিন্ন প্রকারের অস্ত্র চালনা, গোয়েন্দা নজরদারি এবং সমরকৌশল বিষয়ক কাগজপত্রও উদ্ধার হয়।
×