ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ছিল নববর্ষের আমেজ এবার মন্ত্রিসভায় স্যুট-টাই পরে আসেননি কেউ

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ১৪ এপ্রিল ২০১৫

ছিল নববর্ষের আমেজ এবার মন্ত্রিসভায় স্যুট-টাই পরে আসেননি কেউ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রীর ভর্ৎসনার পরের সপ্তাহে সাধারণ পোশাকেই মন্ত্রিসভার বৈঠকে যোগ দিলেন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা। এদিন মন্ত্রিসভার কোন সদস্যের গায়ে স্যুট-টাই দেখা যায়নি। অনেকেরই পরনে ছিল পাঞ্জাবি-পাজামা। কেউ কেউ সাধারণ শার্ট পরে আসেন। পাশাপাশি মিষ্টি বিতরণ, কবিতা আবৃত্তি মিলিয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকে ছিল আনন্দঘন পরিবেশ। সচিবালয়ে মন্ত্রিসভা সভাকক্ষে সোমবার সকাল দশটার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে নিয়মিত বৈঠক শুরু হয়। এর আগেই একে একে সভাকক্ষে ঢোকেন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা। পাঞ্জাবি-পাজামা এবং শার্ট-প্যান্ট পরে তারা আসেন। সভা শুরুর পর ফটোসাংবাদিকদের ক্যামেরায় কিংবা ভিডিও ফুটেজেও মন্ত্রিসভার সদস্যদের এ সব পোশাকের চিত্র দেখা গেছে। গত ৬ এপ্রিল মন্ত্রিসভার বৈঠকে কয়েক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী স্যুট-টাই পরে এলে গরমে স্যুট-টাই পরে এসেছেন কেনÑ তা জানতে চান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এটা কি আমাদের ড্রেস নাকি? ওগুলো ব্রিটিশদের ড্রেস। ব্রিটিশদের গোলামী করেছেন, তার অভ্যাস এখনও যায়নি? সোমবার মন্ত্রিসভার সিনিয়র সদস্যরা বাঙালী পোশাক পাঞ্জাবির সঙ্গে পাজামা এবং অপেক্ষাকৃত জুনিয়র সদস্যরা আসেন শার্ট-প্যান্ট পরে। কেউ কেউ পাঞ্জাবির ওপর পরেছেন মুজিব কোর্ট। সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুর উল্টো দিকে প্রধানমন্ত্রীর কাছাকাছি কালো রঙের শার্টে দেখা গেছে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদকে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমও আসেন সাদা পাঞ্জাবি পরে। এছাড়া একাধিক সিনিয়র মন্ত্রীর গায়েও ছিল পাঞ্জাবি। সাদা পাঞ্জাবিতে ছিলেন রেলপথ মন্ত্রী মুজিবুল হক। সাদা রঙের চেক শার্ট পরা ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু। বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ছায়েদুল হক, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া পরে আসেন সাদা পাঞ্জাবি। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সবুজ রঙের আর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান ছিলেন চেক পাঞ্জাবি পরা। গণপূর্ত মন্ত্রী মোশাররফ হোসেন, আইনমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গা ছিলেন শার্ট পরা। মন্ত্রিসভার তরুণ সদস্যদের মধ্যে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এসেছেন পাঞ্জাবি পরে। মন্ত্রিসভার সদস্যদের পাঞ্জাবি-পাজামা এবং শার্ট-প্যান্টের পাশাপাশি সোমবার সরকারের সচিবদেরও দেখা গেছে শার্ট-প্যান্ট পরে আসতে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ২০০৯ সালের এক আদেশে আনুষ্ঠানিক বাধ্যবাধকতা ছাড়া মার্চ থেকে নবেম্বর পর্যন্ত অফিসে স্যুট-টাই না পরতে সরকারী, আধা-সরকারী এবং স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্দেশনা দেয়। বিদ্যুত সাশ্রয়ে একই বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর সরকার বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের পুরুষ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরও মার্চ থেকে নবেম্বর পর্যন্ত স্যুট-টাই না পরে প্যান্ট-শার্ট পরতে অনুরোধ জানায়। ২০১২ সালের ৫ জুন নতুন করে ওই আদেশ ফের প্রকাশ করে স্যুট-টাইয়ের পরিবর্তে প্যান্ট ও শার্ট (অর্ধ/পুরাহাতা) পরার নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। কবিতা আবৃত্তি-মিষ্টিবিতরণ ॥ মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এ সময় নৌমন্ত্রী শাজাহান খান কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘বোধন’ কবিতা থেকে আবৃত্তি করেন... ‘হে মহামানব, একবার এসো ফিরে/শুধু একবার চোখ মেলো এই গ্রাম নগরের ভিড়ে,...’। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান তার নিজের লেখা ছড়া আবৃত্তি করে শোনান। তাঁর ছড়া ছিল আল বদরের ফাঁসি হলো—-। সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিন বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে নিজের এলাকার মিষ্টি দিয়ে মন্ত্রিসভার সদস্যদের আপ্যায়ন করেন। প্রধানমন্ত্রী হালুয়াঘাটের এ রসগোল্লার একটি খান। এ মিষ্টি খাওয়ানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী তাকে বলেন ‘নাঙখো মিত্তেলা’ (গারোদের আচিক ভাষায় ‘তোমাকে ধন্যবাদ’)। প্রত্যুত্তরে প্রমোদ মানকিন প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, নাঙখোবা মিত্তেলা ( তোমাকেও ধন্যবাদ)। মন্ত্রিসভার এক সদস্য জানান, এ সময় মন্ত্রিসভার সদস্যদের মাঝে আনন্দঘন পরিবেশ তৈরি হয়।
×