ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চলে গেলেন নোবেলজয়ী জার্মান সাহিত্যিক গুন্টার গ্রাস

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১৪ এপ্রিল ২০১৫

চলে গেলেন নোবেলজয়ী জার্মান সাহিত্যিক গুন্টার গ্রাস

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ নোবেলজয়ী খ্যাতিমান জার্মান সাহিত্যিক গুন্টার ভিলহেম গ্রাস আর নেই। সোমবার ৮৭ বছর বয়সে জার্মানির লুয়েবেক শহরের একটি ক্লিনিকে তিনি মারা গেছেন। নাৎসিবিরোধী ‘দ্য টিন ড্রাম’ উপন্যাস রচনার জন্য তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। ১৯৯৯ সালে তিনি নোবেল পুরস্কার পান। গুন্টার গ্রাসের প্রকাশক স্টেইডেল ভারলাগ তাঁর মৃত্যুর খবরটি জানিয়েছেন। তবে মৃত্যুর কোন কারণ উল্লেখ করা হয়নি। তাঁর মৃত্যুতে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্র্যাঙ্ক ওয়াল্টার স্টেইনমিয়ের টুইটার বার্তায় শোক প্রকাশ করেছেন। লুয়েবেক শহরে গ্রাস জীবনের শেষ কয়েক দশক কাটান। তিনি ছিলেন একাধারে সাহিত্যিক, নাট্যকার, কবি, চিত্রশিল্পী ও ভাস্কর। জার্মান চ্যান্সেলর উইলি ব্রান্টের বক্তৃতা লেখক হিসেবেও কাজ করেছেন গ্রাস। পাথরে খোদাইকর্ম দিয়ে শুরু হয়েছিল তার শিল্পী জীবন। ১৯৫৬ সালে তাঁর প্রথম কবিতার বই প্রকাশ হয়। এরপর ১৯৫৯ সালে তিনি রচনা করেন তাঁর অমর সাহিত্যকর্ম দ্য টিন ড্রাম। নাৎসিবিরোধী এই উপন্যাসটি রচনার ২০ বছর পর একে অবলম্বন করে তৈরি হয় ছবি, যা ওই বছর শ্রেষ্ঠ বিদেশী গল্প অবলম্বনে ছায়াছবি ক্যাটাগরিতে অস্কার জিতে নেয়। ৪০ বছর পর ১৯৯৯ সালে ওই উপন্যাস তাঁকে সাহিত্যে নোবেল এনে দেয়। ১৯৯৯ সালের নোবেল সাহিত্য পুরস্কারের জন্য গ্রাসের নাম ঘোষণা করে সুইডিশ একাডেমির বিবৃতিতে বলা হয়, তিনি তাঁর অসামান্য লেখনীতে ইতিহাসের ভুলে যাওয়া মুখটি এঁকেছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কথা স্মরণে রেখেছেন এমন হাতেগোনা কয়েকজন সাহিত্যিকের একজন ছিলেন গুন্টার গ্রাস। খবর বিবিসি, সিএনএন ও নিউইয়র্ক টাইমস অনলাইনের। গ্রাসের জন্ম তৎকালীন পোলিশ শহর (বর্তমানে জার্মানির অন্তর্ভুক্ত) ডানজিগে ১৯২৭ সালে। ১৯৪৪ সালে ১৬ বছর বয়সে তিনি জার্মান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মান সেনাবাহিনীর পক্ষে যুদ্ধ করেন। মার্কিন বাহিনীর হাতেও তিনি কিছু দিন বন্দী ছিলেন। ১৯৫৪ সালে তিনি সুইস নৃত্যশিল্পী আনা মার্গারেট শোয়ার্জকে বিয়ে করেন। ১৯৭৮ সালে তাঁদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটলে উটে গ্রুনার্ট নামে এক চার সন্তানের জননীকে বিয়ে করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি যে হিটলারের নাৎসি হয়ে কাজ করেছিলেন সে কথা ইউরোপবাসী প্রথম জানতে পারে ২০০৬ সালের আগস্টে তার ‘পিলিং দ্য অনিয়ন’ শীর্ষক স্মৃতিকথা প্রকাশের পর। ওই ঘটনা জানার পর বিস্মিত হয়েছিল ইউরোপ, কারণ গ্রাস একজন নাৎসিবিরোধী লেখক হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। তিনি মূলত যুদ্ধের পর থেকেই নাৎসিবিরোধী দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেন। দুই জার্মানির একত্রীকরণের পর তিনি কড়া ভাষায় এর সমালোচনা করেন। তিনি মনে করেন, একত্রীকরণের কাজটি খুব দ্রুত করা হয়েছে। তিনি তাঁর দেশে মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনেরও একজন কট্টর সামালোচক ছিলেন। কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল ক্যাস্ট্রোর সরকারকে তিনি বরাবর সমর্থন দিয়ে যান। ২০১২ সালে ‘হোয়াট মাস্ট বে সেড’ কবিতার মাধ্যমে তিনি ইসরাইলের আগ্রাসি কর্মকা-ের সমালোচনা করলে ফের পশ্চিমাদের সমালোচনার মুখে পড়েন। ইরানের পরমাণু কর্মসূচী নিয়ে ইসরাইলে দ্বন্দ্ব তখন ছিল তুঙ্গে। তিনি ইসরাইলে নিষিদ্ধ ঘোষিত হন। গ্রাস ছিলেন বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু। ১৯৮৬ সালের ডিসেম্বরে স্ত্রী উটে গ্রাসকে নিয়ে বাংলাদেশে আসেন গুন্টার গ্রাস। পুরান ঢাকায় ঘুরে ঘুরে চিনতে চেষ্টা করেছেন নাগরিক বাঙালীকে। পরে ২০০১ সালে আরেকবার বাংলাদেশে এসেছিলেন এই খ্যাতিমান লেখক।
×