ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আপীল শুনানি কবে হবে, কেউ জানে না;###;নিম্ন আদালতে এক বছর আগে রায় হয়েছে

রমনার বটমূলে বোমা হামলার ১৪ বছর পার হলো

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ১৪ এপ্রিল ২০১৫

রমনার বটমূলে বোমা হামলার ১৪ বছর পার হলো

আরাফাত মুন্না ॥ ১৪ বছর আগে পহেলা বৈশাখে রমনা বটমূলে বোমা হামলায় ১০ জন মারা যান। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গত বছর বিচারিক আদালত ৮ জঙ্গীকে মৃত্যুদ- ও ছয় জঙ্গীকে যাবজ্জীবন কারাদ- দিলেও উচ্চ আদালতে বিশেষ গুরুত্ব পায়নি চাঞ্চল্যকর এ মামলাটি। বিচারিক আদালতের রায়ের পর ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতকরণ) ও আপীল দায়ের করা হলেও কবে এই মামলার শুনানি শুরু হবে তা, নিশ্চিত করতে পারেনি কেউ। সুপ্রীমকোর্ট সূত্রে জানা গেছে, বিশেষ গুরুত্ব বিবেচনা না করলে সাধারণ নিয়মে এই ডেথরেফারেন্স ও আপীল শুনানি শুরু হতে তিন থেকে চার বছর সময় লাগতে পারে। উল্লেখ্য, বর্তমানে সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের ২০১০ সালে দায়ের করা ডেথ রেফারেন্সে মামলাগুলোর শুনানি হচ্ছে। এখন বিডিআর বিদ্রোহের ডেথ রেফারেন্স মামলার মতো এই ডেথ রেফারেন্স মামলাটিও বিশেষ গুরুত্ব বিবেচনা করে দ্রুত নিষ্পত্তি করার দাবি সংশ্লিষ্টদের। রমনার বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গত বছরের ২৩ জুন হুজি নেতা মুফতি হান্নানসহ আটজনের মৃত্যুদ- দেয় বিচারিক আদালত। একই সঙ্গে ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদ-ের আদেশ দেয়া হয় রায়ে। ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মোঃ রুহুল আমিন এ রায় ঘোষণা করেছিলেন। এর পর মামলাটি ডেথ রেফারেন্স হিসেবে হাইকোর্টে আসে (ডেথরেফারেন্স নং- ৪২/২০১৪)। এছাড়া জেলে থাকা আসামিরাও জেল থেকে আপীল দায়ের করেছেন। এ বিষয়ে সুপ্রীমকোর্টের রেজিস্ট্রার সৈয়দ আমিনুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, এই ডেথ রেফারেন্স মামলার পেপারবুক (নথিপত্র সম্বলিত বই) কম্পোজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে এটা সংশোধন পর্যায়ে রয়েছে। তিনি বলেন, সংশোধন শেষ হলেই পেপারবুকের খসড়া তৈরির জন্য নথিপত্র পাঠানো হবে বিজি প্রেসে। বিজি প্রেস থেকে খসড়া প্রস্তুত হলে, তারা আবার সুপ্রীমকোর্টে পাঠাবে। সুপ্রীমকোর্ট ওই খসড়া চূড়ান্ত করছে পেপারবুক ছাপা শুরু হবে। তিনি আরও বলেন, পেপারবুক ছাপা হয়ে সুপ্রীমকোর্টে আসার পরেই এই বিষয়টি শুনানির জন্য উপস্থাপন করা হবে। তবে এ প্রক্রিয়ায় ঠিক কত সময় লাগতে পারে তা সঠিক জানেন না বলেই তিনি জানিয়েছেন। তবে বর্তমানে সুপ্রীমকোর্টে ২০১০ সালের ডেথ রেফারেন্সের শুনানি হচ্ছে বলে তিনি জানান। বিশেষ গুরুত্ব বিবেচনায় শুনানির নজির ॥ ২০১৩ সালের ৫ নবেম্বর বিডিআর হত্যা মামলার রায় দেন বিচারিক আদালত। এর পর এই মামলাটির ডেথ রেফারেন্স হিসেবে হাইকোর্টে এলে মামলাটি বিশেষ গুরুত্ব বিবেচনা দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হোসেন। এ জন্য এ মামলাটি শুনানির জন্য প্রয়োজনীয় পেপারবুকও মুদ্রণ করা হয় সুপ্রীমকোর্টের নিজস্ব উদ্যোগে। এ জন্য সুপ্রীমকোর্ট প্রশাসন তিনটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ডিজিটাল ডুপ্লিকেট মেশিনও কেনে। ওই সময় সুপ্রীমকোর্টের তৎকালীন রেজিস্ট্রার একেএম শামসুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেছিলেন, ২৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা ব্যয়ে মেশিন তিনটি আনা হয়েছে। তিনি বলেন, জাপান থেকে আনা এই মেশিনগুলোর একটি মেশিন প্রতি মিনিটে ১৫০ পৃষ্ঠা মুদ্রণে সক্ষম। তিনি বলেন, এই মেশিনেই প্রথম বিডিআর হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স এবং জেল আপীল শুনানির জন্য প্রয়োজনীয় পেপারবুক মুদ্রণ করা হবে। এই মামলার কাগজপত্রের মুদ্রণ শেষ হলেই চট্টগ্রামের দশ ট্রাক অস্ত্র মামলা ও রমনা বটমূল বোমা হামলা মামলাসহ অন্য চাঞ্চল্যকর মামলার নথিপত্র এই মেশিনে মুদ্রণ করা হবে বলে রেজিস্ট্রার জানান। তৎকালীন রেজিস্ট্রার বলেন, এর আগে খালাফ হত্যা মামলায় ডেথ রেফারেন্সের শুনানি হয়েছে সিরিয়াল ভেঙ্গে। তবে এর পরেও রমনা বটমূল বোমা হামলার ঘটনার এ মামলাটি সুপ্রীমকোর্টে কেন বিশেষ গুরুত্ব পাবে না, সেই প্রশ্নই সবার। বিচারিক আদালতে রমনা বটমূল মামলার রায় ॥ রমনার বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলায় দায়েরকৃত মামলায় গত বছরের ২৩ জুন হুজি নেতা মুফতি হান্নানসহ আটজনের মৃত্যুদ- দেন আদালত। একইসঙ্গে ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদ-ের আদেশ দেয়া হয়। ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মোঃ রুহুল আমিন এ রায় ঘোষণা করেছিলেন। আদালতের দেয়া পর্যবেক্ষণে বলা হয়, মামলার পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, পরিকল্পিতভাবে লোকজনকে হতাহত করে দেশে অস্থির পরিস্থিতি সৃষ্টি ও তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারকে অস্থিতিশীল এবং উৎখাতের জন্য রমনা বটমূলে বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামিরা হলেন হলেন- মুফতি আবদুল হান্নান, মাওলানা আকবর হোসাইন, মুফতি আবদুল হাই, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা আবু বকর, মুফতি শফিকুর রহমান, মাওলানা তাজউদ্দিন ও আরিফ হাসান সুমন। যাবজ্জীবন দ-প্রাপ্তরা হলেন- হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, মাওলানা সাব্বির ওরফে আবদুল হান্নান, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, মাওলানা আবদুর রউফ, মাওলানা শওকত ওসমান ও শাহাদাৎ উল্লাহ জুয়েল। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে চারজন পলাতক। তাদের বিরুদ্ধে আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। সেদিন যা ঘটেছিল ॥ ২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল বর্ষবরণ অনুষ্ঠান আয়োজন করে সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট। ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই হাজার হাজার মানুষ জড়ো হন রমনার বটমূলে। সকাল ৮টার পর হঠাৎ বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে রমনার চারপাশ। সেটা ছিল বোমা বিস্ফোরণের ভয়ঙ্কর শব্দ। সেই বোমায় নিহত হন ১০ জন। ওই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী অনিন্দ রহমান। যিনি ছায়ানটের নির্বাহী কর্মকর্তা। ২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল ১ বৈশাখ রমনা বটমূলে ছায়ানটের অনুষ্ঠান আয়োজকদের মধ্যে একজন। সেদিনের ঘটনা সম্পর্কে অনিন্দ শুনানি চলাকালে আদালতকে বলেছিলেন, সেদিন আমি রমনা বটমূলের অনুষ্ঠানে যাই। সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে রমনার বটমূল লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। এরপরই শুরু হয় ছায়ানটের অনুষ্ঠান। আমি কি বোর্ড বাজাচ্ছিলাম। শিল্পী নাসিমা শাহীন গান গাচ্ছিলেন। এমন সময় ৮টা ৫ মিনিটে একটা আওয়াজ শুনি। মঞ্চের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে প্রচ- আওয়াজ হয়। গান থেমে যায়। তিনি আদালতকে আরও বলেন, শব্দের উৎসস্থল থেকে শুধু ধোঁয়া বের হতে দেখি। অল্পক্ষণ পরই সেখানে মানুষের রক্তাক্ত দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। একটি ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি হয়। লোকজন ছোটাছুটি করছে। শিল্পীরা মঞ্চের পেছনে আশ্রয় নেয়। এ সময় আরও একটি আওয়াজ হয় অর্থাৎ বোম ফোটে। আগের শব্দের কাছাকাছি। এতেও প্রাণহানির খবর শুনি। পুলিশ হতাহতদের নিয়ে যায়। পরবর্তীতে শুনি যে, হরকত-উল-জিহাদ এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
×