ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ১৪ এপ্রিল ২০১৫

অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা

মোরসালিন মিজান ॥ আশ্চর্য ছুটে চলে সময়। আপন নিয়মে বয়ে যায়। আজ যা নতুন, সময়ের ছুটে চলায় তা পেছনে পড়ে। পুরনো হয়। সেই অমোঘ নিয়মে পুরনো হয়েছে আরও একটি বছর। গত হয়েছে। কবিগুরুর ভাষায়- বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক/যাক পুরাতন স্মৃতি, যাক ভুলে যাওয়া গীতি/অশ্রুবাষ্প সুদূরে মেলাক...। আর তারপর নতুনের আবাহন। কবির ভাষায়- বাজেনি নাকাড়া, নহবৎ ধ্বনি, সানাই অথবা শাঁখ/তবু এসে গেছে নব পল্লবে, নব উৎসবে,/ নব জীবনের নব অনুভবে..., বৈশাখ...। হ্যাঁ, আজ অভূতপূর্ব সাংস্কৃতিক জাগরণের দিন পহেলা বৈশাখ। ১৪২২ বঙ্গাব্দের প্রথম দিন। আজকের প্রার্থনা- মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা/অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা...। শুদ্ধ সুন্দর এ প্রার্থনার মধ্যদিয়ে নতুন করে শুরু করবে বাঙালী। পুরনো দিনের শোক-তাপ-বেদনা-অপ্রাপ্তি-আক্ষেপ ভুলে অপার সম্ভাবনার দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ঘোষণা করবে। দুই হাতে অন্ধকার ঠেলে, সকল ভয়কে জয় করার মানসে নতুন করে জেগে উঠবে বাঙালী। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশের সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ আজ একাত্মা হয়ে গাইবেÑ এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ...। আনন্দে উৎসবে মাতবে গোটা দেশ। কবিগুরুর ভাষায়Ñ নব আনন্দে জাগো আজি নব রবি কিরণে/শুভ্র সুন্দর প্রীতি-উজ্জ্বল নির্মল জীবনে...। একই আনন্দের বহির্প্রকাশ ঘটিয়ে নজরুল লিখেছেনÑ তোরা সব জয়ধ্বনি কর/তোরা সব জয়ধ্বনি কর/ঐ নূতনের কেতন ওড়ে কালবোশেখির ঝড়/তোরা সব জয়ধ্বনি কর...। আজ নতুন স্বপ্ন বুনবে বাংলার কৃষক। হালখাতা খুলবে ব্যবসায়ীরা। নববর্ষ বরণে রাজধানীসহ সারাদেশ একযোগে চলবে লোকজ ঐতিহ্যের নানা উৎসব অনুষ্ঠান। আজ সরকারী ছুটির দিন। জাতীয় দৈনিকগুলো প্রকাশ করেছে নববর্ষের বিশেষ সংখ্যা। টেলিভিশন রেডিওতে প্রচারিত হচ্ছে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। দেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্বের সকল বাঙালীর প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। যখন উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠী সাপের মতো ফনা তুলছে, যখন বর্বর আক্রমণের শিকার হচ্ছে মুক্তচিন্তা, এই ছুতোয় ওই ছুতোয় যখন অন্য ধর্মের উপাসনালয়ে হামলা করা হচ্ছে, তখন পহেলা বৈশাখ নতুন তাৎপর্য নিয়ে জাতির সামনে হাজির হয়েছে। আজ শুধু উৎসব নয়, সকল অন্যায় অসাম্য সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে জ্বলে ওঠার দিন। আজ ধর্মান্ধতা, মৌলবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ প্রতিরোধের অগ্নিশিখা ভেতরে জ্বালিয়ে রাখার অনুপ্রেরণা গ্রহণ করবে বাঙালী। দ্রোহের আগুনে শাণিত হবে। বাঙালীর চেতনাবিরোধী অপশক্তি রুখতে নতুন বছরে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যাওয়ার শপথ নেবে বাংলাদেশ। কবির ভাষায়- ওই বুঝি কালবৈশাখী সন্ধ্যা আকাশ দেয় ঢাকি/ভয় কী রে তোর ভয় কারে, দ্বার খুলে দিস চারধারে...। এ পর্যায়ে বাংলা নববর্ষ ও বৈশাখের ইতিহাসটি ঘেঁটে দেখা যেতে পারে। বাংলা নববর্ষের সঙ্গে সবচেয়ে নিবিড় সম্পর্ক কৃষির। এ সম্পর্কের সূত্রেই বাংলা সাল প্রবর্তন করেন সম্রাট আকবর। তাঁর আমলেই প্রবর্তন হয় বাংলা সাল। এখন তা বঙ্গাব্দ নামে পরিচিত। বঙ্গাব্দের মাস হিসেবে বৈশাখের প্রথম স্থান অধিকার করার ইতিহাসটি বেশি দিনের না হলেও আদি সাহিত্যে বৈশাখের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। দক্ষের ২৭ কন্যার মধ্যে অনন্য সুন্দরী অথচ খরতাপময় মেজাজসম্পন্ন একজনের নাম বিশাখা। এই বিশাখা নক্ষত্রের নামানুসারেই বাংলা সনের প্রথম মাস বৈশাখের নামকরণ। বৈদিকযুগে সৌরমতে বৎসর গণনার পদ্ধতি প্রচলিত ছিল। সেখানেও সন্ধান মেলে বৈশাখের। আবহমানকাল ধরেই চলছে বৈশাখ বরণের আনুষ্ঠানিকতা। প্রকৃত রূপটি দৃশ্যমান হয় গ্রামে। এক সময় গ্রামবাংলায় চৈত্র সংক্রান্তি ছিল প্রধান উৎসব। বছরের শেষ দিনে তেতো খাবার খেয়ে শরীর শুদ্ধ করতেন কৃষাণ-কৃষাণিরা। নির্মল চিত্তে প্রস্তুত হতেন নতুন বছরে প্রবেশ করার জন্য। এখনও বৈশাখ বরণের অংশ হিসেবে বাড়িঘর ধুয়েমুছে পরিষ্কার করেন গৃহিণীরা। অদ্ভুত মুন্সীয়ানায় আল্পনা আঁকেন মাটির মেঝেতে। খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠবেন সবাই। স্নান সারেন। নতুন পোশাক পরেন। আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীর বাড়িতে বেড়াতে যান। ঘরে ঘরে সাধ্যমতো বিশেষ খাবার রান্না করা হয়। থাকে পিঠাপুলির আয়োজন। আজ হাটে-মাঠে-ঘাটে বসবে ঐতিহ্যবাহী বৈশাখী মেলা। নানারকম কুটিরশিল্প, খেলনা, মিষ্টিসহ বাহারি পণ্যে স্টল সাজানো হবে। বিভিন্ন এলাকায় থাকবে নৌকাবাইচ, লাঠিখেলা কিংবা কুস্তির মতো ঐতিহ্যবাহী আয়োজন। নাগরিক জীবনেও বিপুল আনন্দ যোগ করে পহেলা বৈশাখ। বর্ষবরণের দিন সব শহরেই আয়োজন করা হয় বর্ণাঢ্য উৎসব অনুষ্ঠানের। ধর্ম-বর্ণভেদ ভুলে অসাম্প্রদায়িক উৎসবে মাতে বাংলা। ষাটের দশকে বাঙালী চেতনাবিরোধী অবস্থানের প্রতিবাদে রাজধানী শহর ঢাকার রমনা বটমূলে শুরু হয় বৈশাখ উদ্যাপন। এর মাধ্যমে বাঙালী আপন পরিচয়ে সামনে আসার সুযোগ পায়। পরবর্তী সময়ে বাঙালীর রাজনৈতিক সংগ্রামের মধ্যদিয়ে উত্থান ঘটে পহেলা বৈশাখের। বাংলা নববর্ষের প্রথম দিবসটি বর্তমানে বাঙালীর জাতিসত্তায়, চেতনায় ও অনুভবের জগতে গভীরভাবে বিরাজ করছে। এ প্রসঙ্গে ড. মুহাম্মদ এনামুল হকের বলাটি চমৎকার। তিনি বলেছেনÑ আমাদের অধুনাতম নববর্ষ এ দেশের গ্রীষ্মকালীন উৎসব ও কৃষি উৎসব উদ্যাপনের একটি বিবর্তিত নবসংস্করণ। এর ঐতিহ্য প্রাচীন কিন্তু রূপ নতুন, নতুন সংস্কার, নতুন সংস্কৃতি, নতুন চিন্তাধারা অবারিত স্রোতে যুক্ত হয়ে সৃষ্টি করেছে এমন এক নতুন আবহ, যাকে একটা দার্শনিক পরিম-ল বলে উল্লেখ করতে হয়। এ পরিম-লে পুরাতন বিলীন জীর্ণ স্তূপ নিশ্চিহ্ন, মিথ্যা বিলুপ্ত ও অসত্য অদৃশ্য। আর নতুন আবির্ভূত নবজীবন জাগরিত সুন্দর সম্বিত ও মঙ্গল সম্ভাবিত কালবৈশাখীই এর প্রতীক। সে নববর্ষের অমোঘ সহচর। নবসৃষ্টির অগ্রদূত সুন্দরের অগ্রপথিক ও বিজয়কেতন। ছায়ানটের সঙ্গে দিন শুরু ॥ বহু বছরের ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় রাজধানীর রমনা বটমূলে ভোরে আয়োজন করা হবে বর্ষবরণের প্রধান উৎসব। এবার ৪৭তম আয়োজন। সাম্প্রতিক সময়টি বিবেচনায় রেখে উৎসবের প্রতিপাদ্য করা হয়েছেÑ শান্তি, মানবতা ও মানুষের অধিকার। আয়োজক সূত্র জানায়, এবারও রমনা বটমূলে প্রস্তুত হচ্ছে বিশাল মঞ্চ। এ মঞ্চে পাঁচ সারিতে বসবেন ১৩০ জনের মতো কণ্ঠ ও যন্ত্রসঙ্গীতশিল্পী। সম্মেলক পরিবেশনায় অংশ নেবেন ৯৫ জন গায়ক-গায়িকা। ছায়ানটের চতুর্থ ও পঞ্চম সমাপনী বর্ষের বাছাইকৃত শিক্ষার্থীরা গাইবে। থাকবে প্রারম্ভিক শিশু, প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা। একক সঙ্গীত পরিবেশন করবেন খায়রুল আনাম শাকিল, মিতা হক, লাইসা আহমদ লিসা, চন্দনা মজুমদার, বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী, নাসিমা শাহীন ফ্যান্সি, সুকান্ত চক্রবর্তী, সিফায়েতউল্লাহ মুকুল, বিমান চন্দ্র বিশ্বাসসহ ১৩ জন। দুই ঘণ্টাব্যাপী আয়োজনে মোট ২৬টি গান পরিবেশিত হবে। সম্মেলক পরিবেশনা ১২টি। ১৩টি একক পরিবেশনা। যথারীতি থাকবে জাতীয়সঙ্গীত গাওয়ার বিশেষ একটি পর্ব। আয়োজক সূত্র জানায়, নববর্ষ আবাহন শুরু হবে সেতার বাদনের মধ্যদিয়ে। ১৪ মিনিটের প্রভাতী রাগ শেষে শুরু হবে সম্মেলক পরিবেশনা। থাকবে একক গানও। প্রথমেই শিল্পীরা গাইবেনÑ ও আলোর পথযাত্রী, এ যে রাত্রি, এখানে থেমো না...। বাকি গানগুলোও সুনির্বাচিত। রবীন্দ্রসঙ্গীত ছাড়াও নজরুল, লালন, সলিল চৌধুরী ও রশিদউদ্দীনের গান গেয়ে বরণ করে নেয়া হবে নববর্ষকে। তবে বিশেষ করে বলতে হয় ‘এসো হে বৈশাখ’ গানটির কথা। হ্যাঁ, বহু বছর এই গানটি গাওয়া হয়নি ছায়ানটের উৎসবে। এবার সে গান যুক্ত হচ্ছে। এছাড়াও অনুষ্ঠানে আবৃত্তি করবেন আবদুস সবুর খান চৌধুরী ও লিয়াকত খান। সমকালীন অভিজ্ঞতার আলোকে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখবেন ছায়ানট সভাপতি সন্্জীদা খাতুন। চারুকলায় মঙ্গল শোভাযাত্রা ॥ বর্ষবরণের সবচেয়ে বর্ণাঢ্য আয়োজনটির নাম মঙ্গল শোভাযাত্রা। ছায়ানটের অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর পরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের উদ্যোগে এই শোভাযাত্রা বের করা হবে। শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় এটি চারুকলায় এসে শেষ হবে। শোভাযাত্রায় বহন করা হবে বাঁশ ও কাঠে গড়া বিশালাকৃতির ভাস্কর্য। পাখি, হাতি মাছ, গাভীসহ থাকবে গ্রামীণ জীবনের নানা অনুষঙ্গ। মঙ্গল শোভাযাত্রার খুঁটিনাটি তুলে ধরে অনুষদের ডিন শিল্পী নেসার আহমদ বলেন, এবার আমাদের আয়োজন একটু বেশি। কয়েক শ’ ছেলেমেয়ে কাজ করেছে। শিক্ষকরাও তাদের সঙ্গে ছিলেন। তিনি বলেন, প্রতিবারের মতোই লোকজ সংস্কৃতিকে সামনে রাখা হচ্ছে। ওখানেই আমাদের মূল শক্তি। লোকসংস্কৃতিতে সাম্প্রদায়িকতার স্থান কোনকালেই ছিল না জানিয়ে তিনি বলেন, এই সংস্কৃতি মানুষের। বিভাজনের নয়। এক করার। বর্তমান সময়ের কিছু সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনার উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান। এজন্য প্রচুর কাজ করতে হবে। সেই চিন্তা থেকেই এবারের প্রতিপাদ্যÑ ‘অনেক আলো জ্বালতে হবে মনের অন্ধকারে’। ঋষিজের বর্ষবরণ ॥ সঙ্গীত সংগঠন ঋষিজের আয়োজনে বহু বছর ধরে বর্ষবরণ উৎসব আয়োজন করা হচ্ছে। সেই ধারাবাহিকতায় আজ শিপার্কের সামনে নারকেলবীথি চত্বরে সকাল সাড়ে সাতটায় শুরু হবে উৎসব। হাজার কণ্ঠে বর্ষবরণ ॥ গত কয়েক বছর ধরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজন করা হচ্ছে হাজার কণ্ঠে বর্ষবরণের বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালা। এবারও ব্যতিক্রম হচ্ছে না। চৈত্রসংক্রান্তির আনুষ্ঠানিকতা শেষ হতেই ভোর সাড়ে ৫টা থেকে শুরু হবে নববর্ষ আবাহন। চ্যানেল আইয়ের সহায়তায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে সুরের ধারা। আয়োজনের শিরোনামÑ ‘হাজারও কণ্ঠে কোটি বাঙালীর বর্ষবরণ’। চলবে একটানা দুপুর ১২টা পর্যন্ত। এছাড়াও এখানে আয়োজন করা হবে বৈশাখী মেলার। শিল্পকলা একাডেমিতে বাউল গান ॥ শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত থাকবে বর্ণাঢ্য আয়োজন। বাউল গান, রায়বেশে নৃত্য, সঙযাত্রা, ধামাইল, যাত্রাপালা, এ্যাক্রোবেটিক প্রদর্শনী, ঘোড়ার গাড়ি চক্করসহ নানা আয়োজনে বরণ করে নেয়া হবে নববর্ষকে। বাংলা একাডেমিতে কারুশিল্প মেলা ॥ বাংলা একাডেমিতে আজ থেকে শুরু হচ্ছে কারুশিল্প মেলা। আয়োজন করবে বিসিক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ॥ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে থাকবে নানা আয়োজন। ‘চেতনায় বাঙালী ও বাঙালীয়ানা’ নামের সংগঠন নববর্ষ বরণ করতে ভিন্নধর্মী এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে। সকাল ১০টায় টিএসসি মিলন চত্বর থেকে ছেলেরা দেশীয় লুঙ্গি, পাঞ্জাবি ও গামছা এবং মেয়েরা দেশীয় শাড়ি পরে শোভাযাত্রা বের করবে। শোভাযাত্রা শেষে পান্তাভাতভোজ এবং মুড়ি, খই ও বাতাসা বিতরণ করা হবে। রিপোর্টার্স ইউনিটি ॥ এখানে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে শুরু হবে বৈশাখী অনুষ্ঠানমালা। সরকারী কর্মসূচী ॥ পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে সরকারীভাবে ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। আজ রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ স্বাধীনতা ও একুশে পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, লেখক, কবি, সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের বঙ্গভবনে সংবর্ধনা জানাবেন। বিকেলে গণভবনে সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া পাঁচটি বিভাগীয় শহর, ঢাকা মহানগর, দেশের সব জেলা-উপজেলায় পহেলা বৈশাখ উদযাপন উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনাসভা ও গ্রামীণ লোকজ মেলার আয়োজন করেছে সরকার। কারাগার, হাসপাতাল ও এতিমখানায় উন্নতমানের খাবার পরিবেশন, শিশুদের নিয়ে ঐতিহ্যবাহী বাঙালী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং কারাবন্দীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হবে। আওয়ামী লীগের শোভাযাত্রা ॥ সকাল ৮টায় আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ব্যবস্থাপনায় বাংলা শুভ নববর্ষ-১৪২২ বঙ্গাব্দ বরণ উপলক্ষে ঐতিহাসিক বাহাদুর শাহ পার্ক থেকে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ পর্যন্ত নববর্ষ মঙ্গল শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। রাষ্ট্রপতির বাণী ॥ নববর্ষ উপলক্ষে দেয়া বাণীতে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ দেশবাসীকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছেন, বৈশাখ শুধু ঋতুচক্রের ধারাবাহিকতা নয় বরং আমাদের ঐতিহ্য চেতনারই নাম। শুধু সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে নয়, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রেও বাংলা নববর্ষ উৎসবের কোন তুলনা হয় না। অতীতের সব গ্লানি ও বিভেদ ভুলে বাংলা নববর্ষ জাতীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে ঐক্য ও সংহতি আরও সুদৃঢ় করবে বলেও আশা প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপতি। প্রধানমন্ত্রীর বাণী ॥ বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পহেলা বৈশাখে বাঙালী সংস্কৃতির যে চর্চা হয় তা আমাদের জাতিসত্তাকে আরও বিকশিত করে। সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা, জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার শক্তি যোগায়। শেখ হাসিনা বলেন, বর্ষবরণের উৎসবে এ চেতনাকে নস্যাৎ করার জন্য স্বাধীনতার আগে ও পরে বহু ষড়যন্ত্র হয়েছে। আঘাত করা হয়েছে বার বার। বোমা মেরে মানুষ হত্যা করা হয়েছে। ধর্মান্ধ, সাম্প্রদায়িক শক্তির কোন অপচেষ্টাই সফল হয়নি। বাঙালী জাতি নববর্ষকে ধারণ করেছে তার জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতির অনুষঙ্গ হিসাবে। নববর্ষে রাজনীতির নামে আগুনে পুড়িয়ে নিরীহ মানুষ হত্যা ও দেশের সম্পদ ধ্বংসকারী অপশক্তির বিরুদ্ধে বাঙালীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। বিরোধীদলীয় নেত্রীর বাণী ॥ নববর্ষ উপলক্ষে দেয়া বাণীতে বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। নতুন বছরে দেশকে আরও এগিয়ে নিতে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি। মার্কিন প্রেসিডেন্টের বাণী ॥ বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের পক্ষ থেকে বিশ্বের সকল বাঙালীর প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। মার্কিন প্রেসিডেন্টের শুভেচ্ছা জ্ঞাপনের কথা রবিবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। শুভেচ্ছা বাণীতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেন, বাংলা চলচ্চিত্র, গান, কবিতা ও সাহিত্য শুধু বাঙালীর ঐহিত্য ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরেনি, এর মাধ্যমে সমৃদ্ধ হয়েছে মানবতাও। নতুন বছরে বাঙালীর জীবনের শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন তিনি। একইভাবে বাংলাদেশের মানুষকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী জন কেরি। বিএনপি চেয়ারপার্সনের বাণী ॥ নববর্ষ উপলক্ষে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, সুদীর্ঘকাল ধরে নতুন আঙ্গিক, রূপ, বর্ণ ও বৈচিত্র্য নিয়ে বাঙালীর জীবনে বারবার ঘুরে আসে পহেলা বৈশাখ। পহেলা বৈশাখ আমাদের গর্বিত ঐতিহ্যকে স্মরণ করিয়ে দেয়, এ দিন জেগে ওঠে জাতির আত্মপরিচয়। চট্টগ্রামে ব্যাপক আয়োজন ॥ উৎসবমুখর পরিবেশে বাঙালীর নববর্ষকে বরণ করতে চট্টগ্রাম নগরী ও জেলায় নেয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। নতুনকে বরণ ও পুরাতনকে বিদায় দেয়া হবে নানা আয়োজনে। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন এ উপলক্ষে গ্রহণ করেছে বিস্তারিত কর্মসূচী। সোমবার বিকেলে একই মঞ্চে শুরু হওয়া বর্ষবিদায় অনুষ্ঠান এক পর্যায়ে রূপ নেবে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে। এ উপলক্ষে সাজ সাজ রব দিকে দিকে। শুধু নগরীই নয় জেলার বিভিন্ন উপজেলায় হাটে বাজারে, বটতলা-হাটখোলায় জমবে বৈশাখী মেলা। প্রাণের উৎসবে মেতে উঠার অপেক্ষায় শিশু-কিশোর, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকল বয়সের মানুষ। বঙ্গাব্দ বরণে আয়োজিত হতে যাচ্ছে অসংখ্য অনুষ্ঠান। বরাবরের মতো এবারও মূল আকর্ষণ দৃষ্টিনন্দন ডিসি হিল ও সিআরবির শিরীষতলা। মুন্সীগঞ্জ ॥ বাংলা নববর্ষকে বরণ করতে মুন্সীগঞ্জে ব্যাপক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। মঙ্গল শোভাযাত্রা, পান্তা-ইলিশ, লোকজ নৃত্য, ঘুড়ি উৎসব, বৌচি, দাড়িয়াবান্ধাসহ লোকজ ক্রীড়া, লোকজ মেলাসহ বর্ষবরণের সবই থাকছে এখানে। কালেক্টরেট প্রাঙ্গণ থেকে বেরিয়ে শোভাযাত্রা শেষ হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। এইখানেই বসবে বর্ষবরণ মূল আয়োজন।
×