ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নববর্ষের নব আবাহন

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ১৪ এপ্রিল ২০১৫

নববর্ষের নব আবাহন

জীর্ণ পুরাতন ভেসে যায়। আসে নতুনের আবাহন। ধ্বনিত হয়, ‘মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা।’ চিরায়ত বাঙালীর জীবনের এক প্রাণস্পর্শী দিনের শুরু আজ ভোরের সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে। নতুনের কেতন উড়িয়ে বৈশাখ দেয় ডাক, খোলো খোলো দ্বার। বাংলার মাটি, বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল সবখানেই চির নতুনের আবাহন জেগে উঠছে ভোরের রাঙা সূর্যালোকে। বিদায় নিয়েছে পুরনো বছর ১৪২১। এসেছে নতুন বছর ১৪২২। বাঙালীর নববর্ষ। এবারের নববর্ষ এক নয়া বাস্তবতায় এসেছে। বাংলাদেশের রাজনীতি, সমাজ ও অর্থনীতিকে ধ্বংস করার যে হীন চক্রান্ত চলে বিদায়ী বছরে, তাকে মোকাবেলা করে এগোতে হবে নববর্ষে। গত তিন মাসে নাশকতা সহিংসতা, নারকীয়তা চালিয়ে দেড় শতাধিক মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, বোমা মেরে যাত্রীসহ যানবাহন পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে, দেশের অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে তোলা হয়েছে। অবরোধ-হরতাল ডেকে শিক্ষাকে যেমন, তেমনি ব্যবসা-বাণিজ্যকে স্থবির করার প্রক্রিয়া চালানো হয়েছে। নতুন বর্ষ এসেছে ধ্বংসের বিপরীতে সৃজনের গান নিয়ে। নববর্ষের এ দিনটাকে বাঙালী জাতি অর্জন করেছে প্রতিকূল পরিস্থিতির বিপরীতে দাঁড়িয়ে। আর স্বাধীন স্বদেশে বৈশাখীর আবাহনের অনুষ্ঠানে গ্রেনেড হামলা চালায় বহু মানুষকে হতাহত করেছিল জঙ্গীরা। স্বাগত নববর্ষ, ১৪২২। আবহমানকাল ধরে বাঙালীর প্রিয় দিন। নববর্ষ হোক উত্থানের। নতুন বর্ষে জঙ্গীবাদ সন্ত্রাসবাদ হোক নির্মূল। নাশকতা, সহিংসতা, হোক বন্ধ। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হোক সম্পন্ন। স্বদেশ হোক নৈরাজ্যমুক্ত। পহেলা বৈশাখ বাঙালীর নববর্ষ। বৈশাখ বাঙালীর জীবনে কী গ্রামে কী শহরে এক নতুন সমারোহ নিয়ে আসে। হালখাতার পাতা খুলে যেমন তার বাণিজ্যের পুণ্যাহ উৎসব, তেমনি সাধারণ জীবনযাত্রায়ও একটা প্রাণচাঞ্চল্যÑ ধ্বনিত হয় ‘মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা,/অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।’ বৈশাখ মানে গ্রীষ্ম ঋতুর শুরু। উজ্জ্বল রৌদ্রময় দিন। তেমনি আবার কালবৈশাখীর ভয়াল রূপ। জীবন সংগ্রামের দীক্ষা লাভের নানা রূপের সংমিশ্রণ নববর্ষের সূচনালগ্ন। এই সূচনালগ্নে নতুন ভাবনা-চিন্তায় কতটা এগিয়েছি আমরা তারও খতিয়ান করা দরকার। নতুন বছরে পদার্পণ। এর অর্থই হলো নতুনের সঙ্গী হওয়া। অর্থাৎ সামনের দিনগুলোকে বিনির্মাণের তাগিদ। আমাদের উদ্যম, আমাদের অধ্যবসায় সব নিয়োজিত হোক জাতীয় উন্নয়নের লক্ষ্যে। উৎসবের আনন্দ নতুন সঙ্কল্পে দীক্ষিত জাতির ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ায় নতুন শক্তির প্রেরণা হোক। এ জন্য সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন। বাংলা নববর্ষ সুর-সঙ্গীতের, মেলা ও মিলনের আনন্দ ও উৎসবের, সাহস ও সঙ্কল্পের প্রেরণা যোগায়। দুঃখ-গ্লানি, অতীতের ব্যর্থতা পেছনে ফেলে তাই এগিয়ে যাওয়ার শপথ নেয়ার দিনও পহেলা বৈশাখ। দেশের কল্যাণে সবাই এক কাতারে শামিল হয়ে এগিয়ে যাওয়ার অগ্নিশপথ নেয়ার দিনও এটি। কবির ভাষায়, ‘মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা/অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।’ পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনেও বৈশাখের চেতনায় সবাই উজ্জীবিত হোক। নতুন ভবিষ্যত গড়ার প্রত্যয়ে সবাই উদীপ্ত হোক। সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা। স্বাগতম ১৪২২।
×