ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কামারুজ্জামানের ফাঁসি

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ১৩ এপ্রিল ২০১৫

কামারুজ্জামানের ফাঁসি

একাত্তরে পাকিস্তানী ঘাতকদের এ দেশীয় দোসরদের অন্যতম জামায়াতে ইসলামীর সিনিয়র সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসির দ- শনিবার ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কার্যকর করা হয়েছে। এটি মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে ঘোষিত কার্যকর হওয়া দ্বিতীয় ফাঁসি। এর আগে ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বরে কসাই কাদের মোল্লার ফাঁসি একই কারাগারে কার্যকর হয়। কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় কার্যকরের মধ্য দিয়ে জাতি ইতিহাসের আরেকটি দায়মোচন করল। সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ তার রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন সোমবার খারিজ করে দেয়ার পর তার ফাঁসির দ- কার্যকরের ক্ষেত্রে আর কোন বাধা না থাকলেও সরকার তড়িঘড়ি করে রায় কার্যকর না করে যাবতীয় আইনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। এটা ঠিক যে চূড়ান্ত রায় পাওয়ার পর দ্রুততম সময়ের ভেতর সেই রায় কার্যকর না হওয়ায় জনমনে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছিল। আইন অনুযায়ী ফাঁসির আসামির রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমাপ্রার্থনার সুযোগ কাজে লাগানো বা না লাগানো নিয়েও কিছুটা সময়ক্ষেপণ হয়েছে। তবে আইনের দৃষ্টিতে এটিও স্বাভাবিক বিষয়। যা হোক শেষ পর্যন্ত কামরুজ্জামানের মতো নিষ্ঠুর এক ঘাতকের ফাঁসি হওয়ায় দেশবাসী স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে। নাৎসিদের চেয়েও বর্বর যুদ্ধাপরাধী কামারুজ্জামান গ্রেফতার হয় ২৯ জুলাই ২০১০ সালে। ২০১৩ সালের ৯ মে ফাঁসির রায় দেয়া হয়। পরবর্তীকালে আসামির পক্ষ থেকে আপীল করা হলে পরের বছরই ৩ নবেম্বর সেই রায় বহাল রাখা হয় আপীল বিভাগে। সাড়ে তিন মাসের মাথায় পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর আসামির পক্ষে রিভিউ আবেদন দায়ের করা হয়। ৬ এপ্রিল সেই রিভিউ খারিজ হয়ে যায়। এর পর নানা প্রক্রিয়া শেষে ফাঁসি কার্যকর করা হয়। একাত্তরে বাংলাদেশের জনগণ স্বাধীনতার জন্য রক্ত দিয়ে বাংলার সবুজ প্রান্তর রঞ্জিত করে। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী এবং তাদের এ দেশীয় সহযোগী কামারুজ্জামানরা কেবল গণহত্যা নয়, শহর-বন্দর-গ্রামের অগণিত জনপদ জ্বালিয়ে দেয়, লাখ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম হরণ করে। এমন ঘৃণ্য অপরাধ করেও পাকিস্তানী সশস্ত্রবাহিনীর কারও শাস্তি হয়নি এবং তাদের এ দেশীয় সহযোগীরাও নিজেদের মনে করেছিল ধরাছোঁয়ার বাইরে। তারা ভেবেছিল, বিচারের বাণী কেবল নীরবে-নিভৃতে কেঁদে যাবে। স্বাধীন বাংলাদেশে দশকের পর দশক ধরে বুক ফুলিয়ে চলে তারা কেবল মানুষের শোক-ক্রোধের ক্ষতকেই আরও খুঁচিয়ে চলে। এদের কাউকে কাউকে মন্ত্রিসভার সদস্য পদে নিয়োগ দিয়ে লাখো শহীদের রক্তে রঞ্জিত পতাকার অবমাননা করা হয়েছিল এক সময়। কিন্তু একাত্তরের অবিনাশী চেতনায় সঞ্জীবিত জনগণ পরাভব মানতে চায়নি। তারা বরাবর সোচ্চার থেকেছেÑ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হতেই হবে। এমন অপরাধ কখনও তামাদি হয়ে যায় না। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকাজ সম্পন্ন হতে এখনও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। আগামীতে যত বাধাই আসুক বাংলাদেশ তার পথের কাঁটা সরিয়ে শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবেÑ এমনই প্রত্যয় ও সঙ্কল্প দেশবাসীর।
×