ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পৃক্ততা শীর্ষক সম্মেলন

প্রতিবেশী তিন দেশের মধ্যে বহুমুখী সম্পর্ক উন্নয়নের তাগিদ

প্রকাশিত: ০৬:২২, ১৩ এপ্রিল ২০১৫

প্রতিবেশী তিন দেশের মধ্যে বহুমুখী সম্পর্ক উন্নয়নের তাগিদ

‍স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমারের মধ্যে বহুমুখী সম্পর্কের উন্নয়ন জরুরী। এ তিন দেশ একে অপরের উন্নয়ন অংশীদারও হতে পারে। প্রতিবেশী তিন দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো খুঁজে বের করতে হবে। রবিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ‘ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পৃক্ততা’ শীর্ষক এক ত্রিদেশীয় সম্মেলনে আলোচকরা এ সব কথা বলেন। বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমারের মধ্যে বহুমুখী সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষ্যে ঢাকায় দুই দিনব্যাপী এ ত্রিদেশীয় সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, কোলকাতার মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ইনস্টিটিউট, ঢাকার রিসার্চ এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কালেকটিভ (আরডিসি), বাংলাদেশ-ভারত ফাউন্ডেশন যৌথভাবে এ সম্মেলন আয়োজন করে। ত্রিদেশীয় এ সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। এতে অতিথি ছিলেনÑ ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার পঙ্কজ শরন, ঢাকায় নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত উ মিউ মিন্ট থান, ভারতের মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ইনস্টিটিউটের পরিচালক শ্রীরাধা দত্ত। উদ্বোধনী পর্বে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আরডিসির সভাপতি অধ্যাপক মেসবাহ কামাল। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে বাংলাদেশ খুবই গুরুত্ব দেয়। আমরা প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা বিশ্বাস করি, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে যৌথ উন্নয়ন সম্ভব। সে কারণে বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গেও বহুমুখী সম্পর্ক গড়ার লক্ষ্যে কাজ করে চলেছি। প্রতিবেশী দেশগুলো একযোগে কাজ করলে এ অঞ্চলের আরও উন্নয়ন ঘটবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকে এ সম্পর্ক আরও জোরদারের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলেও তিনি জানান। ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ শরন বলেনÑ বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমারের মধ্যে সমুদ্রসীমা নিষ্পত্তির পরে এ তিন দেশের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির আরও সুযোগ তৈরি হয়েছে। এ তিন দেশের মধ্যে সকলের সমান সুযোগের ক্ষেত্রগুলো খুঁজে বের করতে হবে। এ সুযোগ প্রতিটি দেশকেই কাজে লাগাতে হবে। তিনি আরও বলেন, এ তিনটি দেশের মধ্যে পরস্পরের বিরোধের ইস্যুগুলো খুঁজে বের করা খুবই সহজ। আর সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো খুঁজে বের করা কঠিন। এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে সহযোগিতার ক্ষেত্র খুঁজে বের করে কাজে লাগাতে পারলে আমরা অবশ্যই জয়ী হবো। ঢাকায় নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত উ মিউ মিন্ট থান বলেনÑ বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমারের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন ও সহযোগিতা বাড়ানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন ফোরামে কার্যক্রম চলছে। বিমসটেক ও বিসিআইএম ফোরামে বিভিন্ন কার্যক্রম চলছে। এছাড়া বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের সমুদ্রসীমা নিষ্পত্তির পরে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও বাড়বে বলে তিনি মন্তব্য করেন। অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, বাংলাদেশের দুই প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়ানোর অনেক সুযোগ রয়েছে। এ সুযোগ বাড়াতে পারলে প্রতিটি দেশই লাভবান হবে। প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ বেশি। তবে বর্তমানে মিয়ানমার সরকারের নীতি বদল হওয়ায় সেদেশের সঙ্গেও নানামুখী যোগাযোগ বাড়ানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। অধ্যাপক মেসবাহ কামাল বলেনÑ বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমারের মধ্যে ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। এ সম্পর্কের নানাদিক আলোচনার মাধ্যমে দেশগুলো আরও পরস্পরের মধ্যে কিভাবে সহযোগিতা বাড়াতে পারে, সে সব দিক নিয়ে এখনই আলোচনার প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন। সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমার সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা হয়। এতে মিয়ানমারে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার গৌতম মুখোপাধ্যায়, ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব কৃষণান শ্রীনিভাসন, বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনীর সভাপতি ড. মুনতাসীর মামুন ও ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের ডেপুটি হাইকমিশনার সন্দীপ চক্রবর্তী বক্তব্য রাখেন। মিয়ানমারে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার গৌতম মুখোপাধ্যায় বলেন, মিয়ানমারে অনেক প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে। এ সব প্রাকৃতিক সম্পদ সে দেশের সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশ কাজে লাগাতে পারে। এছাড়া সেখানে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগেরও সুযোগ রয়েছে। তাই এ সব বিষয় নিয়ে সে দেশের সরকারের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রাখতে হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব কৃষণান শ্রীনিভাসন বলেন, তিন দেশের মধ্যে সহযোগিতা বাড়াতে হবে। আর এ সহযোগিতা হবে প্রতিটি দেশের জন্য উইন উইন পর্যায়ের। প্রতিবেশী দেশগুলো একে অপরের কাছ থেকে বিদ্যুত, গ্যাস, অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদ বিনিময় করতে পারে। একইসঙ্গে বিনিয়োগ ও ব্যবসার ক্ষেত্রেও এগিয়ে আসতে পারে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেনÑ বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমারের মধ্যে ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। এ ঐতিহাসিক সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে আমরা অনেক দূরে যেতে পারি। তবে মিয়ানমারের চেয়ে ভারতের সঙ্গেই বাংলাদেশের সম্পর্ক বেশি। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। মিয়ানমারের ক্ষেত্রে সেটা হয়নি।
×