ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

ছায়ানটের বর্ষবরণে ধ্বনিত হবে মানবতার জয়গান

প্রকাশিত: ০৬:২০, ১৩ এপ্রিল ২০১৫

ছায়ানটের বর্ষবরণে ধ্বনিত হবে মানবতার  জয়গান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চৈত্র সংক্রান্তির মধ্য দিয়ে আজ সোমবার বিদায় নেবে বঙ্গাব্দ ১৪২১। সেই সূত্রে কাল মঙ্গলবার নতুন বাংলা সনের প্রথম দিন পয়লা বৈশাখ। বাঙালীর আনন্দমাখা মননের রং নিয়ে হাজির হবে নতুন বাংলা সাল ১৪২২ বঙ্গাব্দ। আর নববর্ষ উদ্্যাপনের সঙ্গে ছায়ানটের সম্পর্কটি জড়িয়ে আছে নিবিড়ভাবে। আপন জাতিসত্তা প্রকাশের অনন্য উৎসবটির সূচনা হয়েছিল ১৯৬৭ সালে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের বছরটি ছাড়া প্রতিবছর ধারাবাহিকভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে প্রভাতী বর্ষবরণের আয়োজনটি। এবারও হচ্ছে না ব্যতিক্রম। রবিবার চৈত্রের বিকেলে রমনা বটমূলে দেখা গেল নববর্ষ উদ্্যাপনের সেই প্রস্তুতি। ইতোমধ্যেই প্রস্তুত হওয়া নববর্ষ আবাহনের মঞ্চটিতে পাঁচ সারিতে বসে মহড়ায় অংশ নিচ্ছিলেন শিল্পীরা। শান্তি ও মানবতাকে ধারণ করে এমন গানের সুরগুলো উচ্চারিত হচ্ছিলো বারংবার। কারণ, এবারের ছায়ানটের নববর্ষ উদযাপনের নির্ধারিত প্রতিপাদ্য ‘শান্তি, মানবতা, মানুষের অধিকার’। তাই গানের সুরে সুরে উচ্চারিত হবে মানবতার জয়গান। দুই ঘণ্টার আয়োজনটি শুরু হবে সকাল সোয়া ছয়টায়। একক ও সম্মেলক গানের সঙ্গে থাকবে কবিতাপাঠ। সেতারের স্নিগ্ধ সুর মূর্ছনায় শুরু হবে প্রভাতী বর্ষবরণের অনুষ্ঠানটি। ছায়ানটের নববর্ষ আবাহন উপলক্ষে রবিবার সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় রমনা বটমূলে। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক খায়রুল আনাম শাকিল। প্রভাতী বর্ষবরণ বিষয়ে কথা বলেন ছায়ানটের সহ-সভাপতি ডাঃ সারওয়ার আলী ও সদস্য সিদ্দিক বেলাল। ডাঃ সারওয়ার আলী বলেন, ১৯৬৭ সালে ছায়ানটের নববর্ষ উদ্্যাপনের মাধ্যমে গ্রামীণ এ উৎসবটি হাজির হয়েছিল শহুরে নাগরিক জীবনে। ছায়ানটের দেখানো সেই পথ ধরে এ উৎসব এখন উদ্্যাপিত হয় দেশজুড়ে। নববর্ষ আবাহন পরিণত হয়েছে বাঙালীর প্রাণের উৎসবে। এবারের বর্ষবরণ প্রসঙ্গে খায়রুল আনাম শাকিল বলেন, অনুষ্ঠান ভাবনার সঙ্গে মিলে যাওয়ায় দীর্ঘ ১৫ বছর পর আবার গাওয়া হবে ‘এসো হে বৈশাখ’ গানটি। এ গানটি প্রতিবছর না গাওয়ার একটি কারণ হচ্ছে ছায়ানট সব সময়ই বিষয়ের সঙ্গে মিল রেখে নববর্ষের অনুষ্ঠান সাজায়। তাই বারবার একই গান নির্বাচিত হয় না। তিনি আরও বলেন, ছায়ানটের প্রভাতী বর্ষবরণের আয়োজনে এবার সুরে সুরে উচ্চারিত হবে মানবতার জয়গান। পহেলা বৈশাখ মঙ্গলবার সকাল সোয়া ছয়টায় অনুষ্ঠানের সূচনা হবে সেতারের সুরে। আলাপ জোড়ে এবাদুল হক সৈকত পরিবেশন করবেন রাগ পরমেশ্বরী। এ পরিবেশনা শেষে গীত হবে সম্মেলক কণ্ঠের গান। অনেকগুলো কণ্ঠ এক সুরে গাইবে ধ্বনিল আহ্বান মধুর গম্ভীর প্রভাত-অম্বর-মাঝে/দিকে দিগন্তরে ভুবন মন্দিরে শান্তি সঙ্গীত বাজে। এ বছরের নববর্ষের অনুষ্ঠানমালায় দীর্ঘদিন পর যুক্ত হয়েছে ‘এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ’ গানটি। বৈশাখ নিয়ে বিশ্বকবির বহুল জনপ্রিয় ও আলোচিত এ গানটি সর্বশেষ ২০০০ সালে গাওয়া হয়েছিল ছায়ানটের প্রভাতী আয়োজনে। এছাড়া এবারের আয়োজনে সম্মেলক কণ্ঠে গাওয়া হবে ‘ও আলোর পথযাত্রী, এ যে রাত্রি, এখানে থেমো না’, ‘সংঘ সরণ তীর্থ যাত্রা পথে এসো মোরা যায়-যায়’, ‘ওরে বিষম দইরার ঢেউ, উথাল পাথাল করে’, ‘আমাদের নানান মতে নানান দলে দলাদলি’, ‘মানুষ ধর মানুষ ভজ, শোন বলি রে পাগল মন’, ‘শুভ্র সমুজ্জ্বল, হে চির-নির্মল’, ‘মোরা সত্যের ’পরে মন আজি করিব সমর্পণসহ ১২টি গান। আর নববর্ষ আবাহনে পরিবেশিত হবে রবীন্দ্র-নজরুল, অতুলপ্রসাদ সেন ছাড়াও সলিল চৌধুরীর গণসঙ্গীত, লালন ফকিরের গান ও রশিদউদ্দীন রচিত সঙ্গীত। একক কণ্ঠে গান শোনাবেন ১৩ জন খ্যাতিমান ও পরিচিত নবীন-প্রবীণ শিল্পী। তাঁরা হলেনÑ খায়রুল আনাম শাকিল, মিতা হক, লাইসা আহমদ লিসা, চন্দনা মজুমদার, বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী, নাসিমা শাহীন ফ্যান্সি, সুকান্ত চক্রবর্তী, সিফায়েতউল্লাহ মুকুল, বিমান চন্দ্র বিশ্বাস প্রমুখ। কবিতাপাঠে অংশ নেবেন দুইজন বাকশিল্পী। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিরযাত্রী কবিতাটি আবৃত্তি করবেন আবদুস সবুর খান চৌধুরী। একাত্তরের বাংলাদেশের সুহৃদ কাইফি আজমীর বাংলাদেশ শীর্ষক কবিতাপাঠ করবেন লিয়াকত খান। এবারের বর্ষবরণের শিক্ষার্থীদের মধ্যে অংশ নেবে চতুর্থ ও পঞ্চাম সমাপনী বর্ষের বাছাইকৃত শিল্পীরা। শিশুদের মধ্যে অংশ নেবে প্রারম্ভিক শিশু প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের খুদে শিল্পীরা। সব মিলিয়ে অনুষ্ঠানে গাওয়া হবে ২৬টি গান। জাতীয় সঙ্গীতসহ পরিবেশিত হবে ১৩টি সম্মেলক গান ও ১৩টি একক কণ্ঠের গান। প্রভাতী বর্ষবরণের আয়োজন শেষ হবে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনার মাধ্যমে। চৈত্র সংক্রান্তি ও হাজার কণ্ঠে বর্ষবরণ ॥ বাঙালীর সার্বজনীন দুই উৎসব চৈত্র সংক্রান্তি নববর্ষ উদ্্যাপন। সেই দুই উৎসবকে একসূত্রে গেঁথে চৈত্র সংক্রান্তি উৎসব এবং বাংলা নতুন বছর ১৪২২ উপলক্ষে হাজার কণ্ঠে গানে গানে বর্ষবরণের আয়োজন করেছে চ্যানেল আই ও সুরের ধারা। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আজ সোমবার সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে পঞ্চকবির গান পরিবেশনার মাধ্যমে শুরু হবে চৈত্র সংক্রান্তি উৎসব। অনুষ্ঠান একাধারে চলবে রাত ১২টা পর্যন্ত। এরপর কাল মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৫টায় শুরু হবে গানে গানে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান। পহেলা বৈশাখ ভোরে সূর্যোদয়ের সঙ্গে শুরু হবে হাজারও কণ্ঠে বর্ষবরণ ১৪২২ সরাসরি সম্প্রচার। যেখানে সারাদেশ ও প্রবাসী বাংলাভাষী এক হাজারেরও বেশি নির্বাচিত শিল্পী পরিবেশন করবেন ‘এসো এসো হে বৈশাখ...’। চতুর্থবারের মতো আয়োজিত এ অনুষ্ঠানটির নেতৃত্ব দেবেন সুরের ধারার চেয়ারম্যান ও অধ্যক্ষ সঙ্গীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। এ উপলক্ষে চ্যানেল আই কার্যালয়ে রবিবার সংবাদ সম্মেলন হয়। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বাংলার ঐতিহ্যে ঘেরা কৃষ্টিকালচার বিশ্ব দরবারে আরও ব্যাপকভাবে তুলে ধরার জন্যই চ্যানেল আই ও সুরের ধারার এ প্রয়াস। এবার উৎসব দুটির স্থিরচিত্র ধারণ করে রাখবে দৃকের প্রায় ১০০ জন আলোকচিত্রী। মেলায় থাকবে বাঙালীর হাজার বছরের বিভিন্ন ঐতিহ্যের উপাদান দিয়ে সাজানো স্টল। পিঠা-পুলি, মাটির তৈরি তৈজস, বেত, কাঁথা, পিতল, পাট-পাটজাত দ্রব্যের নানা জিনিসপত্রসহ রকমারি ও ঐতিহ্যসমৃদ্ধ নানা পণ্যে সুসজ্জিত থাকবে স্টলগুলো। হাসান আজিজুল হকের লেখক ঐক্যের ডাক ॥ বাংলাদেশের প্রগতিশীল লেখকদের ঐক্যের ডাক দিলেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক। রবিবার বিকেলে রাজধানীর সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্রে আয়োজিত সাংবাদ সম্মেলনে তিনি লেখকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। পাশাপাশি এই কথাসাহিত্যিক ‘বাংলাদেশ লেখক সমন্বয় সভা’ নামে একটি সংগঠনের শুভযাত্রা ঘোষণা করেন। প্রগতিশীল, উদার, সৎ ও মুক্তমনারা এ সংগঠনের সদস্যপদ নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। লেখকদের উদ্দেশে হাসান আজিজুল হক বলেন, আমাদের ঐকব্যদ্ধ হওয়ার এখনই সময়। নির্ভয়ে আমরা যেন লিখতে পারি, নিজেদের কথা বলতে পারি, সকল অপশাক্তির বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ, অপরাজনীতির বিরুদ্ধে আমরা যেন সোচ্চার হতে পারি। আমাদের লক্ষ্য শান্তিপূর্ণ, উদার, মানবিক সমাজ। ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে যারা আছি, সবাই একতাবদ্ধ হলে কোন অপশক্তি আমাদের চোখ রাঙাতে পারবে না। দেশের লেখক ও মুক্তচিন্তার পক্ষের সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, আসুন আমরা একতাবদ্ধ হই।
×