ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

কামারুজ্জামানের ফাঁসির পর রাজনৈতিক বেকায়দায় বিএনপি

প্রকাশিত: ০৬:১০, ১৩ এপ্রিল ২০১৫

কামারুজ্জামানের ফাঁসির পর রাজনৈতিক বেকায়দায় বিএনপি

শরীফুল ইসলাম ॥ কামারুজ্জামানের ফাঁসির পর জামায়াতকে নিয়ে রাজনৈতিকভাবে নতুন করে আবার বেকায়দায় পড়েছে বিএনপি। এ ফাঁসি কার্যকর হওয়ার এক সপ্তাহ আগে থেকেই দেশী-বিদেশী গণমাধ্যমে ’৭১-এ জামায়াতের ভূমিকা সম্পর্কে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়, যা এখনও চলছে। ২০ দলীয় জোটের শরিক দল হওয়ায় এ সমালোচনার দায় বিএনপিকেও বহন করতে হচ্ছে। এদিকে নতুন করে সমালোচনা এড়াতে জোটের শরিক দল হওয়া সত্ত্বেও কামারুজ্জামানের ফাঁসির বিষয়ে কোন প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেনি বিএনপি। চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার নির্দেশেই দলের সিনিয়র নেতারা এ বিষয়ে সাবধানতা অবলম্বন করছেন। উল্লেখ্য, আনুষ্ঠানিকভাবে জামায়াতের সঙ্গে রাজনৈতিক জোট গঠন করে ২০০১ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠনের পরই প্রথমবারের মতো রাজনৈতিকভাবে বড় ধরনের বেকায়দায় পড়ে বিএনপি। ওই সরকারের মন্ত্রী ছিলেন বর্তমানে যুদ্ধাপরাধের বিচারে ফাঁসির দ-প্রাপ্ত আসামি জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী ও সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ। এ কারণে তখন শুধু যে বিএনপিবিরোধী শক্তি ক্ষুব্ধ ছিল তা-ই নয়, খোদ নিজ দলের মুক্তিযোদ্ধা নেতারাও চরম ক্ষুব্ধ ছিল। এর প্রতিফলন কিছুটা ঘটেছিল ওয়ান-ইলেভেনের পর খালেদা জিয়ার নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করে সংস্কারপন্থী বিএনপি গঠনের মধ্য দিয়ে। যদিও সুবিধাবাদী রাজনীতির কারণে ওই সংস্কারপন্থীর অনেকেই আবার খালেদা জিয়ার নেতৃত্ব স্বীকার করেই বিএনপিতে ফিরে আসেন। তবে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবির পর বিএনপির অনেক নেতাকর্মী এর জন্য জামায়াতকে দায়ী করে। বিশেষ করে বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা দলের পরাজয়ের জন্য প্রকাশ্যেই জামায়াতকে দায়ী করে চারদলীয় জোট থেকে এ দলকে বাদ দেয়ার দাবি জানায়। ৪ দলীয় জোটের অন্য দুটি শরিক দল বিজেপি এবং ইসলামী ঐক্যজোটও এই পরাজয়ের জন্য বিএনপি ও জামায়াতকে দায়ী করে। এ পরিস্থিতিতে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর কিছুদিন কৌশলে জামায়াতের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখে বিএনপি। এর মাধ্যমে জামায়াতকে জোটে রেখে রাজনীতি করার কারণে ক্ষমতায় থাকাকালে বিএনপি যে বেকায়দায় ছিল ক্ষমতা থেকে বিদায় নেয়ার পর প্রথমদিকে তা কিছুটা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করে। কিন্তু ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট ক্ষমতায় আসার পর আবার বেকায়দায় পড়ে বিএনপি। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি সরকার গঠনের পর থেকেই প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা যুদ্ধাপরাধের বিচারের ব্যাপারে সোচ্চার হয়ে পড়েন। ২০১০ সাল থেকেই যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িত অভিযোগে একে একে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেফতার অভিযান শুরু হয়। এক পর্যায়ে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী আরেক বিএনপি নেতা আবদুল আলিমকেও গ্রেফতার করা হয়। নিজ দলে যুদ্ধাপরাধী থাকা এবং জামায়াত জোটের শরিক দল হওয়ায় যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ নীতি অবলম্বন করে বক্তব্য-বিবৃতি দিতে থাকে বিএনপি নেতারা। এ নীতি অনুসারে তারা যুদ্ধাপরাধের বিচার করা যাবে না সরাসরি এমন কথা না বললেও Ñএ বিচারে আন্তর্জাতিক আইন ও স্বচ্ছতা অবলম্বন করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলেছে। তবে যুদ্ধাপরাধের বিচারে ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর রাজনৈতিকভাবে বিএনপি বড় ধরনের ধাক্কা খায়। এ রায় কার্যকর হওয়ার পর কোন প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেনি বিএনপি। বিএনপির এ নীরবতা নিয়েও দেশ-বিদেশে অনেক সমালোচনা হয়। তবে সে যাত্রায় এক পর্যায়ে জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে দেশব্যাপী লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচীর মাধ্যমে সরকারকে চরম বেকায়দায় ফেলে বিএনপি কৌশলে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে মোড় নিতে সক্ষম হয়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিএনপি-জামায়াতকে বাইরে রেখে আওয়ামী লীগ সমমনা দলগুলো নিয়ে নির্বাচন করে সরকার গঠন করলে আবার রাজনৈতিকভাবে বেকায়দায় পড়ে বিএনপি।
×