ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

ট্রেন চলল উল্টোপথে, চা খাচ্ছিলেন চালক!

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ১৩ এপ্রিল ২০১৫

ট্রেন চলল উল্টোপথে, চা খাচ্ছিলেন চালক!

নিজস্ব সংবাদদাতা, রাজবাড়ী, ১২ এপ্রিল ॥ রাজবাড়ী-ফরিদপুর যাত্রীবাহী আন্তঃনগর এক্সপ্রেস ট্রেনের চালক এবং গার্ড ছাড়াই রহস্যজনকভাবে অটো ব্যাক গিয়ারে পড়ে ৪টি স্টেশন পার হয়ে প্রায় এক ঘণ্টা পর টিটিই আনোয়ার হোসেনের চেষ্টায় ট্রেনের হোস পাইপ খুলে ট্রেনটি থামানো হয়। রবিবার সকালের এ ঘটনায় রাজবাড়ী রেলওয়ে স্টেশনসহ পশ্চিমাঞ্চলের রেল বিভাগে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয় । রাজবাড়ী জিআরপি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুনীল কুমার ঘোষ জানান, ৭৮৩ নম্বর এই আপ আন্তঃনগর ট্রেনটি রাজবাড়ী থেকে ফরিদপুরে ছেড়ে যাবার কথাছিল সকাল ৮টা ১০ মিনিটে। ট্রেনটি ছাড়ার বেশ কিছুক্ষণ আগে ট্রেনের চালক মোহাম্মদ আলী ইঞ্জিন স্টার্ট দিয়ে চা পান করতে ইঞ্জিন থেকে নিচে নেমে যায়। এ সময় হঠাৎই ট্রেনটি অটোমেটিক চালু হয়ে ফরিদপুরের দিকে না যেয়ে উল্টো পশ্চিমে কুষ্টিয়ার দিকে চলতে শুরু করে সূর্যনগর, বেলগাছী, কালুখালী এবং পাংশা এই ৪টি স্টেশন পার হয়ে ২৬ কিলোমিটার দূরে বাবুপাড়া ব্রিজের কাছে থামানো হয়। তবে এ সময় এ রেলপথে অন্য কোন ট্রেন চলাচল না থাকায় ট্রেনটি বড় ধরনের দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পায়। এ ঘটনায় কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। ট্রেনটি ছেড়ে যাবার কিছুক্ষণ পর রাজবাড়ী থেকে একটি লাইট ইঞ্জিন ট্রেনটি থামানোর জন্য দ্রুত ছুটে গেলেও এর আগেই ট্রেনটি থেমে যায়। রাজবাড়ী রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার কামরুজ্জামান জানান, ৬টি বগি নিয়ে ২ নম্বর প্লাটফর্মে ট্রেনটি ইঞ্জিন স্টার্ট অবস্থায় ফরিদপুর যাবার উদ্দেশে দাঁড়িয়ে ছিল। আকস্মিকভাবে ড্রাইভার ও গার্ড ছাড়াই ট্রেনটি উল্টোদিকে চলতে শুরু করলে ট্রেনে অবস্থানরত অর্ধশত যাত্রী হতবিব্বহল হয়ে পড়ে। এ সময় ট্রেনের টিটিই (ট্রেন টিকিট পরীক্ষক) আনোয়ার হোসেন চলন্ত ট্রেনের যাত্রীদের শান্ত করে ট্রেন থামানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে বাবুপাড়া এলাকায় বগির হুস পাইপ খুলে দিলে ট্রেনটি থেমে যায়। এ ঘটনায় রাজবাড়ী শহর থেকে শত শত উৎসুক জনতা রেলওয়ে স্টেশনে ভিড় জমায়। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে সারা শহরজুড়ে। দুর্ঘটনার আশঙ্কায় ছুটে আসে রাজবাড়ী সদর থানার এসআই ফরিদ হোসেনের নেতৃত্ব অতিরিক্ত পুলিশ, ফায়ার ব্রিগেড। পরে ১০টা ৩৫ মিনিটে ট্রেনটি বাবুপাড়া থেকে অন্য একটি ইঞ্জিনের মাধ্যমে রাজবাড়ীতে ফিরিয়ে আনা হয় এবং ১২টা ২৫ মিনিটে পুনরায় ফরিদপুরের উদ্দেশে ট্রেনটি যাত্রা করে। এই ঘটনায় রেলওয়ে পাকশী বিভাগ তাৎক্ষণিকভাবে ট্রেনের চালক মোহাম্মদ আলী, সহকারী চালক ফয়সাল এবং গার্ড সুভাস চন্দ্র সরকারকে সাময়িক বরখাস্ত করে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। দুপুরে তদন্ত কমিটি রাজবাড়ী পৌঁছে তদন্ত কাজ শুরু করেছে। এদিকে রেলওয়ে পুলিশ কর্তৃপক্ষ ট্রেনের গার্ড সুভাষ চন্দ্র সরকারকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলেও রহস্যজনক কারণে চালক মোহাম্মদ আলী এবং সহকারী চালক ফয়সাল এখনও পলাতক রয়েছে।
×