ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আগুন, গৃহদাহ ও প্রতিরোধ

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ১৩ এপ্রিল ২০১৫

আগুন, গৃহদাহ ও প্রতিরোধ

জঙ্গীবাদের প্রতি নীরব, পরোক্ষ সহযোগী, মদদদাতা সুশীলদের অনুরোধ করি টিভির চতুষ্কোণের বাক্স ছেড়ে বাইরে আসুন। যেসব বইতে ধুলো জমে গেছে, যে পাঠাগারে অনেক দিন পা পড়েনি বা যে চশমার কাঁচে সুবিধাবাদের আস্তর পড়েছে, সাফ করে দুনিয়া দেখুন। আমরা যখন আঠারো বছর আগে অভিবাসী হয়ে এদেশে এসেছিলাম তখনকার অস্ট্রেলিয়া আর আজকের বাস্তবতায় দুস্তর তফাৎ। একটি স্বাধীন, ধর্মনিরপেক্ষ, উদার ও আধুনিক দেশের গণতান্ত্রিক ধারায় বসবাস করেও মানুষ কতটা অন্ধ ও আগ্রাসী হয়ে উঠতে পারে তার নমুনা দেখছি এখন। বলাবাহুল্য, এটি যেহেতু সংখ্যাগরিষ্ঠ ঘরে খ্রীস্টান অথবা নাস্তিকের (বিশ্বাস-অবিশ্বাস নিয়ে যারা মাথা ঘামায় না তাদের অর্থে) দেশ এখানে জঙ্গীরা কোণঠাসাই থাকবে। কিন্তু তারপরও মুখোমুখি অবস্থানে যাবার মতো বাস্তবতা তৈরি হয়ে গেছে। যে বিষয়টা কিছুতেই মাথায় ঢোকে না বা বুঝতে পারি না, এই সেদিনও মানুষ কিন্তু এত উগ্র আর একরোখা ছিল না। মানুষের বিশ্বাস নিয়ে এত তর্ক-বিতর্ক বা বাদানুবাদ দেখিনি। একদিকে সাম্রাজ্যবাদ অধুনা অর্থনৈতিক আধিপত্যবাদের যুদ্ধংদেহী মনোভাব, অন্যদিকে আত্মরক্ষা ও জিহাদের নামে গজিয়ে ওঠা বাহিনী। মানুষকে যে কোন একপক্ষ অবলম্বনে প্রায় বাধ্য করার মতো পরিস্থিতি তৈরি করছে এরা। অথচ এর একটাও গ্রহণযোগ্য নয়। খোদ আমেরিকার রাষ্ট্রপতি যখন বলেন, ‘হয় তুমি আমার দলে নয় সন্ত্রাসী’ তখন রুজভেল্টের দেশে হিটলারের মুখ ভেসে ওঠে। সে হিটলারীয় আগ্রাসনে জন্ম নেয়া তালেবান পরবর্তীতে আইএসের কর্মকা- আজ এখানেও ছড়িয়ে পড়ছে। সমাজতত্ত্ববিদ বা সমাজ গবেষকরা এখনও খুঁজছেন কেন এবং কি কারণে স্বাধীন, গণতান্ত্রিক, উদার জীবন ফেলে মরুভূমির টানে তারুণ্য জীবন দিতে ছুটে যায়। ইদানীং তরুণী বা যুবতীদের আগ্রহ নিয়েও পৃথিবী স্তম্ভিত। এসব কারোই অজানা নয়। আমরা যেটি নিয়ে চিন্তিত বা যা আমাদের করণীয় সে কথা বলাই জরুরী। বিলেতে বা পৃথিবীর অনেক দেশে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত বিদেশী নাগরিকদের কেউ কেউ এই প্রক্রিয়ায় জড়িয়ে গেছে। যুদ্ধে যাওয়া, ট্রেনিং নেয়া, মানুষের জীবনকে তুচ্ছ করে তলোয়ারের কোপে উড়িয়ে দেয়ার নামে তারা এখন অন্ধ ও উগ্র। যারা মনে করেন বাংলাদেশ নিরাপদ বা এখানে গোঁজামিলে জীবন পার করা যাবে তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। এই সেদিনও দুটো তাজা তরুণ প্রাণের করুণ পরিণতি দেখেছি আমরা। এর আগেও নানাভাবে নানা উপায়ে জীবন নাশ দেখেছি। এখন যা ঘটছে বা নিকট অতীতে যেসব হত্যাকা-, তার ভেতর একটা যোগসূত্র রয়েছে। সে যোগসূত্র এখন বেপরোয়া। বলেÑ কয়ে হিটলিস্ট বানিয়ে রাষ্ট্র ও সরকারকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে দেশে-বিদেশে মুক্তবুদ্ধি নিধনের সহায়ক শক্তিকে আজ পদানত করতে না পারলে জাতির দুর্ভোগ কখনও যাবে না। কান টানলে মাথা চলে আসার মতো অনেক বিষয় অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। খুঁজলে দেখা যায় এদের পেছনে কাজ করছে জামায়াত, নিরপেক্ষতার ভান করে মদদ দিচ্ছে সুশীল সমাজ আর হোতা তারেকের বিএনপি। এদের আন্তর্জাতিক কানেকশনও ভয়ের ব্যাপার। বাংলাদেশে বা যে কোন দেশে বিনা বিচারে নিরীহ সাধারণ মানুষের একাধিকবার ফাঁসি বা মৃত্যু হলেও এদের কিছু যায় আসে না। অথচ দাগি যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসিতে বিবৃতির অন্ত নেই। এই মায়াকান্নার নেপথ্য কারণ বোঝা কি খুব কঠিন কিছু? টাকার লবিং আর আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসের সঙ্গে পরোক্ষ সংযোগেই এরা এগুলো করতে পারছে। ভয়াবহ এবং দুঃখজনক হলেও সত্য, আধুনিক নামে পরিচিত অগ্রসর উন্নত বিশ্বের সংস্থাই আজ জঙ্গীবাদের নেপথ্য সহচর। একদিকে দেশে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে অসম লড়াই, আরেক প্রান্তে জঙ্গীবাদের নেপথ্য সহচর। এদের ইন্ধনেই দেশে গজিয়ে উঠেছে নব্য রাজাকারের মুখোশে সুশীল সমাজ, বিদেশী প্ররোচনা আর ইন্ধনে ইসলামের আসল দুশমন ভুলে মুক্তবুদ্ধি আর মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতায় নেমেছেন এরা। বদলে যাওয়া ডান বাম মধ্য সকলের চেহারা ও চরিত্রে আজ যে বৈপরীত্য তাকে সিঙ্গেল আউট বা বিচ্ছিন্নভাবে দেখলে চলবে না। সিডনিতে যে মুখোমুখি অবস্থান প্রগতির সঙ্গে প্রতিক্রিয়ার লড়াই সেখানেও এ জাতীয় চরিত্রগুলো কাজ করেছে। বাঙালীদের ভেতর চলছে ভাঙ্গা-গড়ার নিরন্তর লড়াই। ভিন্ন ধর্মাবলম্বী হবার কারণে অনেক সময় ন্যায্য কথাও বলা যায় না। অধিকন্ত সাম্প্রদায়িকতা তো আছেই। অথচ আজ এই উন্নত দেশ ও সমাজেও আমরা না পারছি সঙ্গে চলতে, না নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে। এ দ্বন্দ্ব, সংঘাত আর প্রতিকূলতার অবসান না হলে দেশেও শান্তি আসবে না। ভয়ের আরেকটি দিক পাশ্চাত্যে নিজেদের অবস্থান ও সুনাম হারিয়ে ফেলা। সেটা যে ঘটতে যাচ্ছে তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ দেখি না। তারপরও আমাদের দেশের বুদ্ধিবৃত্তি খালেদা জিয়া ও জঙ্গীবাদের নামে উন্মাদ। এরা যেদিন ধর্মের নির্যাসটুকুও চিবিয়ে খাবে সেদিন যদি তাদের হুঁশ ফেরে। এই কারণে দেশে-বিদেশে প্রগতির বিকল্প নেই। বিকল্প নেই মুক্ত চিন্তা ও উদারতার আশ্রয়ে জীবনযাপনের। আমরা যেন ভুলে না যাই বিদেশেও বিপদ বাড়ছে। তাই ঘর সামলানোই জরুরী। জরুরী প্রতিবাদ নয়, প্রতিরোধ এবং তা কার্যকর অর্থে।
×