ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সন্ত্রাসী তালিকা থেকে কিউবা বাদ

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ১৩ এপ্রিল ২০১৫

সন্ত্রাসী তালিকা থেকে কিউবা বাদ

প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সন্ত্রাসের মদতদাতা রাষ্ট্রগুলোয় মার্কিন তালিকা থেকে কিউবার নাম বাদ দেবেন কি-না, আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই সেই সিদ্ধান্ত নেবেন। পানামায় ওবামা ও কিউবার প্রেসিডেন্ট রাউল ক্যাস্ট্রোর মধ্যে বৈঠকের পর এক সিনিয়র কর্মকর্তা এ কথা জানান। খবর আরইটি ও গার্ডিয়ান অনলাইনের। কিউবান নেতা রাউল ক্যাস্ট্রো এবং মার্কিন নেতা বারাক ওবামা শনিবার এক ঐতিহাসিক বৈঠকে মিলিত হলেও কিউবান নেতা দৃশ্যত হৃদ্যতা গড়ে তুলতে তাড়াহুড়ো করা মনোভাব দেখাননি। এটি ছিল সম্ভবত ৫০ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে দুটি দেশের নেতাদের প্রথম বৈঠক। ওই দু’নেতা সামিট অব দ্য আমেরিকাসে তাদের দেশের সম্পর্কোন্নয়নের বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে কথা বলেন। এ বৈঠক মূলত প্রতীকমূলকই ছিল এবং এতে কোন সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি। কিউবান প্রেসিডেন্ট ক্যাস্ট্রো তাঁর প্রতিপক্ষকে বলেন, আমরা সবকিছু নিয়ে আলোচনা করতে ইচ্ছুক কিন্তু আমাদের খুবই ধৈর্য্য ধারণ করা প্রয়োজন। সাবেক ঠা-া লড়াইকালীন দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ, তাদের সম্পর্ক স্বাভাবিক করায় উদ্যোগ নেবে বলে ডিসেম্বরের ঘোষণার পর এটিই তাদের প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক। ওবামা তার ভাষায় এ ঐতিহাসিক বৈঠকে আরও আশাব্যঞ্জক মনোভাব ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, আমরা এখন ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থানে রয়েছি। যথাসময়ে আমাদের পক্ষে আরও ইতিবাচক উপায়ে চিন্তা-ভাবনা করা এবং আমাদের দুটি দেশের মধ্যে এক নতুন সম্পর্ক গড়ে তোলা সম্ভব হবে। পানামা সিটিতে সামিট অব দ্য আমেরিকাসের ফাঁকে আয়োজিত ওই সংক্ষিপ্ত বৈঠকে খুব কম সুনির্দিষ্ট আলোচ্য বিষয়ই ছিল। ওবামা বলেন, তিনি সন্ত্রাসবাদের রাষ্ট্রীয় মদতদাতা হিসেবে কিউবার অবস্থান সম্পর্কে আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই একটি সিদ্ধান্ত নেবেন। রাউল ক্যাস্ট্রো বলেন, তিনি দুটি সাবেক বৈরী দেশের সম্পর্ক দুটি দেশ প্রয়োজনবোধে ভিন্নমত পোষণ করতে সম্মত হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা যে কোন বিষয়ে ধৈর্য্যরে সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছুক। কোন কোন বিষয়ে আমরা একমত হবো, এবং অন্যান্য বিষয়ে হবো না। ওইদিন এর আগে দেয়া এক ভাষণে ক্যাস্ট্রো তার দেশের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে এবং গুয়ানতানামো দ্বীপ ফিরিয়ে দিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান। মার্কিন সেনাবাহিনী দ্বীপটি অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। দু’নেতার বৈঠকের আগে সামিটের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে প্রায়ই উত্তপ্ত কাব্য বিনিময় হয়। সেখানে ওবামা ঘনিষ্ঠতর আঞ্চলিক সম্পর্কের সম্ভাবনার দিকে মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করেন। আর বামপন্থী নেতারা ওই গোলার্ধে অতীতের মার্কিন আগ্রাসন ও হস্তক্ষেপের কথা যুক্তরাষ্ট্রকে স্মরণ করিয়ে দেন। কিউবান নেতা তার ভাষণে ওবামাকে এক ‘সৎ ব্যক্তি’ বলে অভিহিত করেন। তিনি এর আগে যুক্তরাষ্ট্র ও কিউবার সম্পর্কের ইতিহাস তুলে ধরেন। রাউল ক্যাস্ট্রো বলেন, যখন আমি বিপ্লবের কথা বলি, তখন আমি আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়ি। আমি প্রেসিডেন্ট ওবামার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। তিনি তার সময়ের আগের ঘটনাগুলোর জন্য দায়ী নন। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট দিলমা রৌসেফ যুক্তরাষ্ট্র ও কিউবার সমঝোতাকে এক সাহসী প্রয়াস বলে স্বাগত জানান। আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট ফার্নান্ডেজ ডি কিটনার কিউবাকেই মূল কৃতিত্ব দেন। তিনি বলেন, দেশটি অভূতপূর্ব মর্যাদা সহকারে যুক্তরাষ্ট্রের অবরোধের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। ১৯৫৯ সালে ফিডেল ক্যাস্ট্রো ও তার ভাই রাউল এক বিপ্লবের নেতৃত্ব দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত প্রেসিডেন্ট ফুলগোনসিও বাতিস্তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর যুক্তরাষ্ট্র কিউবার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে। ক্যাস্ট্রো ভ্রাতৃদ্বয় সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলে এক বিপ্লবী সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। ওয়াশিংটনের মতে, কিউবার রাজনৈতিক সংস্কার ও মানবধিকার পরিস্থিতিই বড় ইস্যু। সামিট অব দি আমেরিকাসে উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকান নেতারা সমবেত হয়ে থাকেন। এটি সপ্তম সামিট এবং এতে কিউবা প্রথম বারের মতো যোগ দেয়।
×