ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মাওনা ফ্লাইওভার উদ্বোধনীতে প্রধানমন্ত্রী

খালেদাকে মানুষ পুড়িয়ে মারার অধিকার কে দিয়েছে?

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ১২ এপ্রিল ২০১৫

খালেদাকে মানুষ পুড়িয়ে মারার অধিকার কে দিয়েছে?

নিজস্ব সংবাদদাতা, গাজীপুর, ১১ এপ্রিল ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মানুষকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারা কোন্ ধরনের রাজনীতি। খালেদা জিয়া ৯২ দিনে ১৫০ সাধারণ নিরীহ মানুষকে পুড়িয়ে মারল। মানুষগুলোর কি অপরাধ ছিল? তাকে মানুষ পুড়িয়ে মারার অধিকার কে দিয়েছে? জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করা এত বড় গুনাহ আর কি হতে পারে। ১৯৭১ সালে পাক হান্দার বাহিনী নিরীহ মানুষকে যেভাবে হত্যা করেছিল বিএনপি নেত্রী ৯২ দিন হরতাল-অবরোধের নামে নিরীহ মানুষকে হত্যা করে। রাস্তায় যানবাহন ভাংচুর ও পেট্রলবোমা মেরে জ্বালিয়ে দেয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি চাই বেগম খালেদা জিয়া যখন রাস্তায় আসবেন তখন যেন মানুষ তার কাছে জানতে চায়, তিনি কেন মানুষ পুড়িয়ে মারলেন। মানুষকে পুড়িয়ে মারার অধিকার তাকে কে দিয়েছে? মানুষ পুড়িয়ে একেকটা পরিবারকে তারা ধ্বংস করেছে, পরিবারের উপার্জনের পথ বন্ধ করে দিয়েছে, স্বামীর কাছ থেকে স্ত্রী ও সন্তানকে কেড়ে নিয়েছে। তিনি শনিবার বিকেলে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ওপর নবনির্মিত গাজীপুরের শ্রীপুরে ‘মাওনা ফ্লাইওভার’ উদ্বোধন শেষে মাওনা পিয়ার আলী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ মাঠে স্থানীয় শ্রীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী সুধী সমাবেশে বলেন, মাওনা ফ্লাইওভারটি উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে আমাদের উন্নয়ন কর্মকা-ের ধারাবাহিকতায় আজ আরও একটি মাইলফলক যোগ হলো। বৃহত্তর ময়মনসিংহের সঙ্গে রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা যানজটমুক্ত ও নিরাপদ করার জন্য জয়দেবপুর চৌরাস্তা থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত ৮৭ কিলোমিটার মহাসড়ক ৪ লেনে উন্নীত করার কাজ আমরা শুরু করি ২০১০ সালে। এর মধ্যে জয়দেপুর চৌরাস্তা হতে নয়নপুর পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার মহাসড়ক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্পেশাল ওয়ার্কস অর্গানাইজেশন বাস্তবায়ন করেছে। বাকি অংশ সড়ক ও জনপথ অধিদফতর বাস্তাবায়ন করছে। প্রকল্পটি মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১হাজার ৮১৫ কোটি ১২ লাখ টাকা। ইতোমধ্যেই প্রকল্পের ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। আগামী জুনের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। এই মহাসড়কের ২৭তম কিলোমিটারে মাওনা ফ্লাইওভারটি নির্মাণ করা হয়েছে। ৪৫০ মিটার দীর্ঘ এবং ১৯ মিটার প্রশস্ত ফ্লাইওভারটির নির্মাণ ব্যয় হয়েছে প্রায় ৭০ কোটি ২৩ লাখ টাকা। শ্রীপুর-কালিয়াকৈর উপজেলা সংযোগকারী আঞ্চলিক মহাসড়কের সঙ্গে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের সংযোগস্থল মাওনা। এখানে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। ফ্লাইওভারটি নির্মাণের ফলে এখন থেকে এর ওপর দিয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহগামী যানবাহন এবং নিচ দিয়ে মাওনা-শ্রীপুরের যানবাহন নির্বিঘেœ চলাচল করতে পারবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতুর মতো বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে আমরা যে আজ পরনির্ভশীল নই, তা প্রমাণ করতে যাচ্ছি। পদ্মা সেতু নিয়ে একটা চ্যালেঞ্জ ছিল বাংলাদেশের জন্য। কারণ পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির একটা অভিযোগ তোলা হয়েছিল বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে। এ কারণে বিশ্বব্যাংক টাকা দেয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। ষড়যন্ত্রকারীরা ভেবেছিল, বিশ্বব্যাংকের সহায়তা না পেলে পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন করা যাবে না। আমি ঘোষণা দিয়েছিলাম, আমরা নিজস্ব অর্থায়নে এ পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ করব। আল্লাহ্র রহমতে আমরা পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করেছি। ইনাশাল্লাহ্, ২০১৮সালের মধ্যে পদ্মা সেতু চালু হবে। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারে থাকাকালে রাস্তাঘাটের উন্নয়নের কোন পরিকল্পনা গ্রহণ করেনি। সময়মতো পরিকল্পনা গ্রহণ করলে মানুষকে আজ ভোগান্তির শিকার হতে হতো না। একটা প্রকল্প গ্রহণ করে তা বাস্তবায়ন করতে সময়ের প্রয়োজন, ইনশাল্লাহ অদূর ভবিষ্যতে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে আর যানজট থাকবে না। তিনি আরও বলেন, আজ বাংলাদেশে ঠিক সে সময়েই বিএনপি- জামায়াত দেশের সম্পদ ধ্বংস করার কাজে লিপ্ত রয়েছে, তারা আন্দোলনের নামে গত ৩ মাস ধরে সাধারণ মানুষের ওপর অমানুষিক নির্যাতন করেছে। পেট্রোলবোমা দিয়ে শতাধিক মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে, ওরা দেশ ও দেশের মানুষকে চায় না, ওরা চায় ক্ষমতা, ক্ষমতায় গিয়ে জনগণের সম্পদ লুণ্ঠন করার জন্য ওরা মরিয়া হয়ে উঠেছে। কিন্তু জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। কারণ, জনগণ চায় উন্নয়ন ও শান্তি। আমি দৃঢ় প্রত্যয়ের সঙ্গে ঘোষণা করতে চাই, জনগণের ভাগ্য নিয়ে আমরা কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেব না। জনবিরোধী কোন কার্যকলাপ সহ্য করা হবে না। গঠনমূলক রাজনীতি করুন, মানুষ যদি আপনাদের ক্ষমতায় দেখতে চায়, তাহলে অবশ্যই আপনারা ক্ষমতায় যাবেন। কিন্তু, মানুষ না চাইলে ষড়যন্ত্র, সহিংসতা করে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখা বন্ধ করুন। সুধী সমাবেশে সাবেক প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট রহমত আলী এমপির সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক এমপি, এ্যাডভোকেট রহমত আলী এমপির ছেলে আওয়ামী লীগ নেতা জামিল হাসান দুর্জয়, হারিজ উদ্দিন আহমেদ, সামসুল আলম প্রধান, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, গাজীপুর সিটির ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ, শ্রীপুর উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল জলিল, এসএম আকবর আলী চৌধুরী, আবু আক্তার খান ভুলু, আমির হামযা, মোস্তাফিজুর রহমান বুলবুল, মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল হক, রফিকুল ইসলাম ম-ল, শেখ নজরুল ইসলাম, যুবলীগ নেতা ওসমান গণি, কৃষকলীগ নেতা কবির হোসেন। এ সময় মঞ্চে মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকী, জাহিদ আহসান রাসেল এমপি, সাবেক এমপি আখতার উজ জামান, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খান ও সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম। এর আগে প্রধানমন্ত্রী বিকেল সোয়া চারটার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ওপর নবনির্মিত মাওনা ফ্লাইওভার উদ্বোধন এবং ফলক উন্মোচন করেন। প্রধানমন্ত্রী মাওনা ফ্লাইওভারে এসে পৌঁছলে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক এমপি, সেনাবাহিনী ও সওজের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ তাকে স্বাগত জানান। পরে প্রধানমন্ত্রী মাওনা পিয়ার আলী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ মাঠে এক সুধী সমাবেশ যোগ দেন।
×