ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের ৫৫ দেশেই মৃত্যুদণ্ডের বিধান

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১২ এপ্রিল ২০১৫

যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের ৫৫ দেশেই মৃত্যুদণ্ডের  বিধান

বিকাশ দত্ত ॥ জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াত নেতা বদর কমান্ডার কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড স্থগিত করার আহ্বান জানালেও খোদ আমেরিকাসহ বিশ্বের ৫৫টি দেশে এখনও মৃত্যুদ- কার্যকরের বিধান রয়েছে। ১৯৭৬ সাল থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ১৪০৪ জনের মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়েছে, যার মধ্যে ২০১৪ সালে কার্যকর করা হয়েছে ৩৫টি। যুক্তরাষ্ট্রে প্রাণঘাতী ইনজেকশনের মাধ্যমে এ সকল অপরাধীকে মৃত্যুদ- দেয়া হয়েছে। এমনকি লন্ডনে বিশ্বাসঘাতকতা ও গুপ্তচরবৃত্তির জন্যও মৃত্যুদ- অনুমোদন দেয়া হয়। বিশ্বে সাতটি দেশে মৃত্যুদ- নিষিদ্ধ থাকলেও আবার তারা মৃত্যুদ-ে ফিরে এসেছে। বাংলাদেশে যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছিল তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- দেয়া হচ্ছে। কোনভাবেই একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের বিচার ব্যবস্থার সিদ্ধান্তকে কার্যকর না করার আহ্বান আইনসিদ্ধ নয়। দেশের আইন বিশেষজ্ঞগণ বলেছেন, এই আহ্বান দেশের সার্বভৌমত্ব ও সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তকে প্রকারান্তরে অবজ্ঞা করার শামিল। এদিকে, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী ও জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদ-ের বিরোধিতার প্রেক্ষিতে জাতিসংঘকে জবাব দিয়েছে সরকার। বুদ্ধিজীবীসহ ৩৫৫ হত্যার নায়ক মিরপুরের কসাই কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের মধ্যদিয়ে ৪২ বছর পর বাংলাদেশে শুরু হয় গ্লানি মুক্তির দিন। কাদের মোল্লাকে দিয়েই শুরু হলো সর্বোচ্চ শাস্তি কার্যকর। কাদের মোল্লাকে সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ ২০১৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- কার্যকরের রায় প্রদান করেন। আর তার মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয় ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর। এরপর জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদ- বহাল রাখেন সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ। ২০১৪ সালের ৩ নবেম্বর কামারুজ্জামানের মৃত্যুদ- বহাল রেখে রায় প্রদান করেন আপীল বিভাগ। পরে আসামিপক্ষের রিভিউ আবেদনও খারিজ করে মৃত্যুদ- বহাল রাখা হয়েছে। অবশেষে তার রায়ও কার্যকর করা হয়েছে। বাংলাদেশের আইনেই অভিযুক্তদের বিচার করা হচ্ছে। এখানে বিদেশীদের করার কিছু নেই। এ প্রসঙ্গে সুপ্রীমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ শ ম রেজাউল করিম জনকণ্ঠকে বলেছেন, জাতিসংঘ এবং কিছু মানবাধিকার সংগঠনের আহ্বান কোনভাবেই যুক্তিসঙ্গত নয়। প্রকৃত বাস্তবতায় অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করা, আইনে উল্লিখিত শাস্তি প্রদান করা স্ব স্ব দেশের আইনানুগ অধিকার। কোনভাবেই একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র বিচার ব্যবস্থা সিদ্ধান্তকে কার্যকর না করার আহ্বান আইনসিদ্ধ নয় এবং সংশ্লিষ্ট দেশের সার্বভৌম ও সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তকে প্রকারান্তরে অবজ্ঞা করার শামিল। বাংলাদেশে সংঘটিত ভয়াবহতা এত ব্যাপক ছিল যে, তার বিচারের ক্ষেত্রে মৃত্যুদ-ের চেয়েও কঠিন কোন দ-ের বিধান থাকলেও তা অনুমোদনযোগ্য ছিল না। ইতোপূর্বে জন কেরির একটি আহ্বানকে বাংলাদেশের মানুষ বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করেছেন, কারণ খোদ আমেরিকাতেই মৃত্যুদ-ের বিধান রয়েছে এবং কার্যকরও করা হয়েছে। সেই আমেরিকার বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায় বাস্তবায়ন না করার আহ্বান দ্বৈত ভূমিকা ছাড়া আর কিছু নয়। ’৭১ সালে এরা মানবতার বিরুদ্ধে পাকিস্তানী ও তাদের দোসরদের অপরাধ সংঘটনে সহযোগিতা করেছিল। কামারুজ্জামানের রিভিউ আবেদন বাতিল রায় প্রদানের এক অংশে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক এক জায়গায় বলেছেন, সত্য হলো এটাই, ১৯৭৫ সালে স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে এ বিচারকাজ বিলম্বিত করেছে। নয়ত বহু আগেই এসব অপরাধী শাস্তি পেত। মৃত্যুদ-ের বিষয়ে রায়ে বলা হয়েছে, আসামিপক্ষের আইনজীবীরা শুনানিতে যুক্তি উপস্থাপন করেছেন, সারা পৃথিবী মৃত্যুদ- থেকে দূরে সরে এসছে। এমনকি ভারতও বলছে, যেখানে মৃত্যুদ- নিতান্তই প্রয়োজন সেখানেই মৃত্যুদ- দেয়া হবে। এ বিষয়ে রায়ে আদালত বলেন, আমরা যদি নিতান্তই প্রয়োজন মনে করেই মৃত্যুদ- দেই, তাহলে এর চেয়ে আর বেশি প্রয়োজন আর কী হতে পারে। একাত্তরে কামারুজ্জামানদের অত্যাচার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার নাৎসি বাহিনীর অত্যাচারকেও হার মানায়। তাদের অত্যাচার ওই সময় বিশ্ব বিবেককেও প্রকম্পিত করেছিল। যুক্তরাষ্ট্রের ৫২টি অঙ্গরাজ্যের মধ্যে ৩২টিতে মৃত্যুদ-ের বিধান রয়েছে। কয়েকটি দেশ আগে মৃত্যুদ-ের বিধান নিষিদ্ধ করলেও আবার তারা মৃত্যুদ- চালু করেছে। যার মধ্যে রয়েছেÑ মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, সৌদি আরব, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো। এমনকি লন্ডনে বিশ্বসঘাতকতা ও গুপ্তচরবৃত্তির জন্যও মৃত্যুদ- অনুমোদন দেয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৪ সালে প্রাণঘাতী ইনজেকশনের মাধ্যমে ৩৫ জন এবং ২০১৫ সালে ১০ জনের মৃত্যুদ- কার্যকরা করা হয়েছে। ২০১৪ সালে যাদের প্রাণঘাতী ইনজেকশনের মাধ্যমে মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেনÑ আসকারী মাহমুদ, মাইকেল ওয়ালসন, ডেনিস মেগগিউর, ইদগার টামায়ো, ক্যানেথ হোগান, হারবাট সুমলিস, সুজানি বাসো, জুযান চেভিস, মাইকেল টেলর, পাউল হাযেল, রে জসপার, রোবাট হ্যানরি, জেফারি ফারগুসন, এন্থেলি ডোয়েল, ডমি সিলস, রমিওর হারনাদেশ, জোস ভিলিগেস, উইলিয়াম রোসেন, রবার্ট হেনড্রিক্স, ক্লাইটন লোকেটস, মারকাস উইলিওনস, জন অয়েন ফিল্ড, ইডি ডেভিস, জন মিডিলটন, জোসেফ উড, মাইকেল ওরথ গোটন, এরিল রিনগো, ইউলি টোরটি, লিসা কলিমেন, মিগিএল পিরিডেস, চাডিক ব্যাঙ্ক, লেওন টেইলর, রবার্ট হোলসি, পাউল গুডইন। অন্যদিকে, চলতি বছরে যাদের মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেনÑ এনড্রো হাওয়ার্ড ব্রাননা, ক্রারলিস ফেডারিক ওরনা, জোনি সেইন কোরমনডি, আরনোলড প্রিইটো, ওরান হিল, রবার্ট কারলিস লেইড, ডোনাল্ড কিথড নেইবারি, ওয়ালটার টিমোথি স্টোরে, মেনুয়াল ভাসকুয়িস, সিলিএল ক্লাইটন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মৃত্যুদ-ের বিধান ভিন্ন ভিন্ন। ফাঁসিতে ঝুলিয়ে, প্রাণঘাতী ইনজেকশনের মাধ্যমে, ফায়ারিং স্কোয়াডের মাধ্যমে, শিরñেদের মাধ্যমে, বৈদ্যুতিক চেয়ার, গ্যাস চেম্বার, পাথর ছোড়া, উঁচু জায়গা থেকে ফেলে দেয়া। ইন্দোনেশিয়া, চীন, সৌদি আরব, তাইওয়ান, উত্তর কোরিয়াসহ কয়েকটি দেশে গুলি করে মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়। বাংলাদেশসহ আফগানিস্তান, ভারত, ইরান, ইরাক, জাপান, মালয়েশিয়া ও কুয়েতে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- কার্যকরের প্রচলন রয়েছে। এছাড়া সৌদি আরবে শিরñেদের মাধ্যমে মৃত্যুদ- কার্যকরের পদ্ধতি প্রচলিত আছে। আফগানিস্তান পাকিস্তান ও ইরানে মাটিতে পুঁতে বা কোনকিছুর সঙ্গে বেঁধে পাথর ছুড়ে মৃত্যুদ- কার্যকরের ধরন চলে আসছে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারে দ- কার্যকর করার সময় বেশকিছু মানবাধিকার সংগঠন বিবৃতি দিয়েছে। তারা এ দ- স্থাগিত করার আহ্বান জানিয়েছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল জনকণ্ঠকে বলেছেন, প্রতিটি রায়ের পর পরই দেখা যায় যে, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গোষ্ঠী, এমনকি বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী বা সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণও রায়ের সমালোচনা করে বক্তব্য দেন। এদের মধ্যে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন অন্যতম। তারা সব সময়ই মৃত্যুদ- স্থগিত করার কথা বলে। এ ধরনের বক্তব্য দেয়ার সময় তাদের মনে রাখা উচিত, মৃত্যুদ- বিশ্বের ৫৫টি দেশে এখনও চালু আছে, যার ভেতর ভারত, সৌদি আরব অন্যতম। যুক্তরাষ্ট্রের অর্ধেকেরও বেশি অঙ্গরাজ্যে মৃত্যুদ- এখনও বহাল আছে, ১৯৭৬ সাল থেকে এই পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ১৪০৪ জনের বিরুদ্ধে মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়েছে, যার মধ্যে ২০১৪ সালে কার্যকর করা হয়েছে ৩৫টি। এসব সংগঠন ও ব্যক্তি ভারত, সৌদি আরব বা যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুদ- কার্যকর করার বিষয়ে কখনও প্রতিবাদ করেছে বলে শোনা যায়নি। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বাংলাদেশে হরতাল-অবরোধের সময় পেট্রোলবোমা ও আগুনে পুড়ে মানুষ মারা যাওয়ার সময় তাদের সরব হয়ে উঠতে দেখা যায় না, তারা সরব হয়ে ওঠে ’৭১-এর নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালীর ওপর যারা নির্মমভাবে হত্যা, নির্যাতন চালিয়েছিল, তাদের যখন একটি স্বাধীন দেশের সুষ্ঠু বিচার প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে প্রদত্ত রায়ে উল্লিখিত শাস্তি কার্যকর করা হয়- তখন। আমার কাছে ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়েছে যে, কোন সংগঠন বা ব্যক্তি মন্তব্য করার আগে বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট বা বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়সমূহে প্রদত্ত ব্যাখ্যা বা যুক্তি পড়ে দেখেন না। দেখলে তারা আর এ ধরনের মন্তব্য করতে পারতেন না। একই সঙ্গে তাদের আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে ‘কমপি মেন্টারিটি’ মতবাদের অধীনে যে এখতিয়ার রয়েছে সেটাও তাঁরা ভুলে যান বলে আমার কাছে মনে হয়েছে। শুধু মানবতাবিরোধী অপরাধেই অভিযুক্তদের বিচারে মৃত্যুদ- দেয়া হয়নি। এর আগে অনেক হত্যাকা-ের বিচারেই ফাঁসি দেয়া হয়েছে এবং অভিযুক্তদের দ-ও কার্যকর করা হয়েছে। সালেহা হত্যাকা-ে তার স্বামী ডাঃ ইকবালকেও ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়েছে। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ১২ জন সামরিক কর্মকর্তাকেও ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- প্রদান করা হয়েছে। রিমা হত্যার দায়ে মুনিরের ফাঁসি, এরশাদ সিকদারের ফাঁসিসহ অনেকেরই ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। তখন কেউ কিছু বলেননি। অথচ মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচারে দ- কার্যকর করার সময় এমন আহ্বান আসছে। কাদের মোল্লার ফাঁসির সময় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি ফোন করেছিলেন। গুয়ান্তানামো বেতে বন্দীদের সঙ্গে কী ধরনের আচরণ করা হচ্ছে তা সবাই জানে। অথচ সেখানকার পরিস্থিতির জন্য এসব সংগঠন কিছুই বলেনি। সম্প্রতি পাকিস্তানে যে কোনো অপরাধে মৃত্যুদ-প্রাপ্তদের দ- কার্যকরের ওপর স্থগিতাদেশ তুলে নেয়া হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার পর এ পর্যন্ত কয়েক ডজন অপরাধীর মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়েছে। ২০১৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর পেশোয়ারে স্কুলশিশুদের ওপর জঙ্গী হত্যাযজ্ঞের পর সন্ত্রাসী অপরাধে মৃত্যুদ-প্রাপ্তদের দ- কার্যকরের ওপর থেকে প্রায় সাত বছর ধরে চলে আসা নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছিল পাকিস্তান সরকার। পাকিস্তানে আট হাজারেরও বেশি মানুষকে বিভিন্ন অপরাধে মৃত্যুদ- দেয়া হয়েছে। তাদের মাঝে প্রায় এক হাজার অপরাধীর আপীল ও প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ হয়ে গেছে। অন্যদিকে, মিসরে নিষিদ্ধঘোষিত ইসলামিক দল মুসলিম ব্রাদারহুডের আরও ১৮০ জনের বেশি সমর্থকের বিরুদ্ধে মৃত্যুদ-ের সাজা ঘোষণা করেছেন আদালত। গত কয়েক দিনের ব্যবধানে পাঁচ শতাধিক কর্মী-সমর্থককে মৃত্যুদ- দেয়া হয়েছে। জাতিসংঘকে জবাব দিয়েছে সরকার ॥ একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী ও জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদ-ের বিরোধিতার প্রেক্ষিতে জাতিসংঘকে জবাব দিয়েছে সরকার। যুদ্ধাপরাধী কামারুজ্জামানের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে জাতিসংঘের নিকট ব্যাখ্যা পাঠানো হয়েছে। শনিবার পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন। ইয়েমেনে আটকে পড়া বাংলাদেশীদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক। এ সময় যুদ্ধাপরাধী কামারুজ্জামানের মৃত্যুদ-ের বিরোধিতা করে বিবৃতি দেয়ার প্রেক্ষিতে সরকার থেকে এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে কি-না জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব জানান, কামারুজ্জামানের মৃত্যুদ-ের বিরোধিতা করে জাতিসংঘের দেয়া বিবৃতির প্রেক্ষিতে ওই সংস্থার নিকট সরকারের পক্ষ থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে। চিঠিতে বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। জাতিসংঘের বিবৃতির প্রতিটি লাইনের ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদ- স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। যে কোন ধরনের মৃত্যুদ-ের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান রয়েছে। সে অনুযায়ী কামারুজ্জামানের মৃত্যুদ- স্থগিতের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি বুধবার জেনেভায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জনারেল কামারুজ্জামানের মৃত্যুদ- স্থগিত করার আহ্বান জানান। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনের মুখপাত্র বলেন, সোমবার উচ্চ আদালতের আপীল বিভাগে পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ হওয়ায় কামারুজ্জামানের মৃত্যুদ- কার্যকর করা এখন সময়ের ব্যাপার বলে বলা হচ্ছে। তার মৃত্যুদ- স্থগিত করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আমরা জরুরিভিত্তিতে আহ্বান জানাচ্ছি। বাংলাদেশে বিদ্যমান মৃত্যুদন্ডের বিধানেরও বিরোধিতা করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশন। এ বিবৃতির প্রেক্ষিতে জাতিসংঘের নিকট এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে সরকার।
×