ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘অহন অর বউও বুঝবো বিদুফা অইলে কিবা নাগে’

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১২ এপ্রিল ২০১৫

‘অহন অর বউও বুঝবো বিদুফা অইলে কিবা নাগে’

রফিকুল ইসলাম আধার, শেরপুর ॥ ‘আমগর পোলাপান বাপ ডাকপার পায় নাই এই কামারুজ্জামানের ল্যাইগা। আমরা সোয়ামী আরাইয়া বিদুফা অইছি। মাইনসের বাড়ি বাড়ি ৫টা পুনাই নিয়া ঘুরছি। ভিক্ষা কইরা খাইছি। অহন অর পুলাপানেরাও বাপ না থাহনের কষ্ট কিবা বুঝবো, অর বউও বুঝবো বিদুফা অইলে কিবা নাগে।’ শাড়ির আঁচলে চোখের পানি মুছতে মুছতে ওই কথা বলেন শেরপুরের সীমান্তবর্তী নালিতাবাড়ী উপজেলার সোহাগপুর বিধবাপল্লীর শহীদ হাতেম আলীর স্ত্রী অজুফা বেওয়া। ১১ এপ্রিল শনিবার রাতে কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকরের খবরে আনন্দে আবেগাপ্লুত হয়ে তিনি বলেন, ‘এতদিন আমরা অর ফাঁসির অফেক্ষায় ছিলাম। অহন ফাঁসিডা অওয়ায় বুহের কষ্টডা জুড়াইল।’ শহীদ জসিমুদ্দিনের স্ত্রী নূরেমান বেওয়া বলেন, ‘ওই সুময় ছোড ছোড তিন পুলা-মাইয়া নিয়া কত কষ্ট করছি তার আর কওয়ন নাই। ঈদ-পরব আইলে মাইনষে পুলা-মাইয়া নিয়া কত আউস-আফিত্তি করে, উলামেলা (আনন্দফুর্তি) করে, কিন্তু বেডাইন না থাহনে কাইন্দা কাইন্দা চোক্কের পানি ফালানি ছাড়া কিছুই করবার পাই নাই। ভিক্ষা করবার গেলেও মাইনষে দূর দূর কইরা খেদাই দিছে। ওহ! কী কষ্ট কবার সোমার (বলার শেষ) নাই। অহন কামারুজ্জামানের বউ-পুলাপানও আংগর নাহাল কষ্ট কিছুডা টের পাবো।’ শহীদ ফজর আলীর স্ত্রী অজুফা বেওয়া কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘শ্যাষ পর্যন্ত কামারুজ্জামানের ফাঁসটা অইয়া বুহে থাইক্কা কষ্টের পাত্তরডা নাইম্যা গেলো।’ শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সোহাগপুর বিধবাপল্লীর বিধবারা কেবলই অপেক্ষার প্রহর গুনছিলেন কখন তাঁরা শুনতে পাবেন কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকরের খবর। শনিবার সন্ধ্যায় সোহাগপুর বিধবাপল্লীতে গিয়ে শহীদ পরিবারের স্বজনদের সঙ্গে কথা বললে এভাবেই তাঁরা নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানান। কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় তাঁদের মাঝে চূড়ান্ত স্বস্তি ফিরে এসেছে। শহীদ ছফির উদ্দিনের ছেলে রাষ্ট্রপক্ষের অন্যতম সাক্ষী ও স্থানীয় শহীদ পরিবার কল্যাণ সমিতির সভাপতি জালাল উদ্দিন বলেন, কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় শহীদদের আত্মার শান্তির পাশাপাশি আমাদের প্রাণটাও আজ জুড়িয়েছে। ১৯৭১ সালের ২৫ জুলাই শেরপুর জেলা সদর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে নালিতাবাড়ী উপজেলার সোহাগপুর গ্রামে আলবদর কমান্ডার কামারুজ্জামানের নেতৃত্বে ও পরিকল্পনায় পাক হানাদার বাহিনী নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ওই গ্রামের ১শ’ ২০ জন পুরুষকে হত্যা করে। নারীদের ওপর চালানো হয় পাশবিক নির্যাতন। এরপর থেকে সোহাগপুর গ্রামটির নাম পাল্টে হয়ে যায় বিধবাপল্লী।
×