ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বকাপে দুর্দান্ত নৈপুণ্যে মাশরাফিরা সংবর্ধিত

প্রকাশিত: ০৪:৪৩, ১২ এপ্রিল ২০১৫

বিশ্বকাপে দুর্দান্ত নৈপুণ্যে মাশরাফিরা সংবর্ধিত

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ দেরিতে হলেও অবশেষে বিশ্বকাপে দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখানোর পর সংবর্ধিত হলেন বিশ্বকাপে খেলা বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। শনিবার মানিক মিয়া এ্যাভিনিউতে সংবর্ধিত হলেন মাশরাফি, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ ও রুবেলরা। দুপুর আড়াইটা থেকে শুরু হয় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের কার্যক্রম। শুরুতে ব্যান্ড দলগুলো একে একে নেমেসিস, ক্রিপটিক ফেইট, ওয়ার ফেইজ, অর্থহীন, মাইলসের সঙ্গীত পরিবেশন করেন। এরপর বিকেল ৫টার পরে ক্রিকেটাররা অনুষ্ঠানের মঞ্চে ওঠেন। ক্রিকেটারদের সংবর্ধনা দেয়া হয়। সাকিব আল হাসান ছাড়া বাকি সব ক্রিকেটারই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। সংবর্ধনা দিতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন সিকদার, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন উপস্থিত থাকেন। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের পুরো আয়োজনটি জমজমাট হয়। লোকে-লোকরণ্য হয়ে যায়। জনতার ঢল নামে। দুপুরে জনতা কম দেখা গেলেও, সময় বাড়তে থাকে আর লোক বাড়তে থাকে। সবচেয়ে মজার ঘটনা ঘটে বাংলাদেশ পেসার রুবেল হোসেন মঞ্চে ওঠার পরই। রুবেল মঞ্চে উঠতেই জনতার কণ্ঠে একটি ধ্বনিই বের হয়, ‘হ্যাপী, হ্যাপী’। জীবন থেকে হ্যাপীকে সরাতে পারলেও, ভক্তদের কাছ থেকে হ্যাপী নামটি সরাতে পারছেন না রুবেল। একটি ধ্বনি যেন অনুষ্ঠানকেই আরও মুখরিত করে তোলে। অবশ্য রুবেল হোসেন প্রশংসাও পান। বিসিবি সভাপতি রুবেলের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে যান। বলেই ফেলেন, ‘রুবেল নিয়েছে এবার মোট আটটি উইকেট। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে ও আশিটা উইকেট নিয়েছে!’ সভাপতির এমন কথায় অনুষ্ঠানে আরও আনন্দ বেড়ে যায়। চিৎকারে ফেটে পড়ে মানিক মিয়া এ্যাভিনিউ। যেই মাশরাফি মঞ্চে কথা বলতে শুরু করেন, চিৎকার যেন থামেই না। আনন্দ আর আনন্দ, উৎসব আর উৎসবে ফেটে পড়ে পুরো এলাকা। এর মধ্যেই যখন আবার বিসিবি সভাপতি বিশ্বকাপের ম্যাচগুলো নিয়ে কথা বলেন, তখন সবার মাঝেই ভারতের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচের দুঃসহ স্মৃতি ফুটে ওঠে। হাজার হাজার মানুষ সেøাগান দিয়ে যেতে থাকেন। বিসিবি সভাপতির কণ্ঠেও হতাশার সুরই বাজল। তার কথাতেই তা পরিষ্কার হলো, ‘আমাদের আরও দূরে যাওয়ার কথা ছিল। তবে, বাংলাদেশ মাঠের লড়াইয়ে বিশ্বাস করে। মাঠেই আমরা সব কিছুর জবাব দেব। ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তানের মতো দলগুলো খেলতে আসবে বাংলাদেশে।’ যেন ভারতকেই ইঙ্গিত করলেন বিসিবি সভাপতি। বিশ্বকাপে নজরকাড়া পারফরমেন্স দেখায় বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে। প্রথম ম্যাচেই আফগানিস্তানকে ১০৫ রানে হারায়। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পরের ম্যাচটি বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়ে যায়। তৃতীয় ম্যাচে শ্রীলঙ্কার কাছে ৯২ রানে হারে। এর পরও বাংলাদেশের কাছে সুবর্ণ সুযোগ দাঁড় হয়। শুধু ইংল্যান্ডকে হারাতে পারলেই কোয়ার্টার ফাইনালে খেলবে বাংলাদেশ। এমন সমীকরণের সামনে দাঁড়ায়। চতুর্থ ম্যাচে স্কটল্যান্ডকে ৬ উইকেটে হারানোর পর ইংল্যান্ডকে ১৫ রানে হারিয়ে দিয়ে নকআউট পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে নেয় বাংলাদেশ। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে গিয়ে নিউজিল্যান্ডের কাছে ৩ উইকেটে হারলেও দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখায় বাংলাদেশ। কোয়ার্টার ফাইনালে আম্পায়ারও যেন বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলে। ভারতের বিপক্ষে ১০৯ রানে হারে বাংলাদেশ। তবে এ ম্যাচে আম্পায়ার যে একের পর এক ভুল সিদ্ধান্তগুলো দেয়, সেখানেই বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের মানসিক অবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে। হারও হয়। বিশ্বকাপ মিশন শেষ হয়ে যায়। দল যে এবার ভাল নৈপুণ্য করেছে এ জন্য সংবর্ধনা প্রাপ্যই ছিল। কিন্তু দ্রুতই সেই সংবর্ধনা দেয়া যায়নি। বিসিবি সভাপতিসহ অনেক পরিচালকই অস্ট্রেলিয়ায় ছিলেন। ফাইনাল ম্যাচ শেষেই দেশে ফিরেন। এরপর বিসিএল চলতে থাকায় অবশেষে গিয়ে শনিবার সংবর্ধনা দেয়া হয় ক্রিকেটারদের। সংবর্ধনায় ক্রিকেটপ্রেমীদের ভালবাসায় সিক্ত হন মাশরাফিরা।
×