ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক

নির্মাণ শেষ হওয়ার আগেই বেহাল

প্রকাশিত: ০৪:২৮, ১২ এপ্রিল ২০১৫

নির্মাণ শেষ হওয়ার আগেই বেহাল

নিজস্ব সংবাদদাতা, সীতাকু-, চট্টগ্রাম, ১১ এপ্রিল ॥ চলতি বছরের জুনে বহুল প্রত্যাশিত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চারলেন প্রকল্পের কাজ বুঝিয়ে দেয়ার কথা থাকলেও আদৌ শেষ হচ্ছে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের একাধিক স্থান দেবে বেহাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দফায় দফায় সময় বাড়লেও প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি চলছে। এই অবস্থায় আসন্ন বর্ষায় এ চারে লেন সড়কের অবস্থা ঠিক কোন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকে তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে পরিবহন মালিকরা। সূত্রে জানা যায়, ২০০৪ সালে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে অর্থনীতির লাইফ লাইন খ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এ চারলেন সম্প্রসারণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। চট্টগ্রামের সিটি গেট থেকে কুমিল্লার দাউদকান্দি টোলপ্লাজা পর্যন্ত ১৯২ দশমিক ৩০ কিলোমিটার এ চারলেন প্রকল্পটি শুরু থেকে নানা প্রতিবন্ধকতার কবলে পড়ে। দফায় দফায় প্রকল্প পরিচালনার ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনা হলেও নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করতে পারেনি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। প্রকল্পের ১০টি প্যাকেজের মধ্যে ৭টি প্যাকেজের কাজ করছে সিনোহাইড্রো করপোরেশন নামের একটি বিদেশী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। বাকি ৩টি প্যাকেজের কাজ করছে যৌথভাবে দেশীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রেজা কন্সট্রাকশন ও তাহের এন্ড ব্রাদার্স । ইতোমধ্যে দেশীয় ঠিকাদারী এ দুই সংস্থার ৩টি প্যাকেজের প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে তারা দাবি করেন। তবে ফৌজদারহাট হযরত কালুশাহ মাজার সংলগ্ন ওভার ব্রিজের নির্মাণের কাজ অত্যন্ত ধীরগতিতে চলছে বলে অভিযোগ উঠে। টানা ৪ বছরের মধ্যেও ওভার ব্রিজটি নির্মাণের ৪০ শতাংশ কাজ শেষ হয়নি। একইসঙ্গে বারআউলিয়ার হাফিজ জুট মিলের অভ্যন্তরে যাওয়া চারলেন বাইপাস সড়কের নির্মাণ কাজটিও এখনও দৃশ্যমান হয়নি। সিটি গেট থেকে ঘোড়ামারা পর্যন্ত আইল্যান্ডের কাজ, ফুটপাথ, কার্নেকটিং সড়ক, ড্রেনেজ ব্যবস্থা, পার্কিং ব্যবস্থার কাজও পুরোপুরি শেষ হয়নি। জনগুরুত্বপূর্ণ হাট-বাজার, স্কুল-কলেজ, হাসপাতালসহ প্রশাসনিক দফতরস্থলে ফুটওভার বাইপাস নির্মাণ করা হয়নি। অপরদিকে সিনোহাইড্রো কর্পোরেশনের নির্মাণাধীন অংশের কাজে দেখা দিয়েছে চরম বেহাল দশা। নির্মিত রাস্তা কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেয়ার আগে বহু অংশে বড় বড় খানাখন্দকের সৃষ্টি হয়েছে। বাড়বকু- ও শুকলালহাট এলাকায় দেবে আইলেনে পরিণত হয়েছে। এছাড়া নির্মিত চারলেন সংযোগ স্থাপনের কাজও সম্পূর্ণ হয়নি। এতে করে বর্ষার মৌসুমে ঘোড়ামরা, দক্ষিণ বাঁশবাড়িয়া, ফকিরহাট, সদর বাইপাস সড়ক, পন্থিছিলা, বটতল এলাকায় প্রচ- যানজট সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাছাড়া আইল্যান্ডের পানি নিষ্কাশনেরও কোন ব্যবস্থা করা হয়নি। নামমাত্র চার লেনের কাঠামোগত মেরামত করতে গিয়ে পুরনো সড়কে তিন থেকে পাঁচ ফুট পর্যন্ত পিচঢালাই মাটি দিয়ে ডেকে দিচ্ছে ঠিকাধারী সংস্থাটি। এতে করে বড় ধরনের আর্থিক লোকসানসহ সরু হয়ে উঠে সড়কটি। একই সঙ্গে মহাসড়কে যাতায়াতকারী যাত্রী সাধারণের ভোগান্তির শেষ নাই। বাংলাদেশ ট্রাক ও কাবার্ডভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক এ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব আবু মোজ্জাফর বলেন, ‘আসন্ন বর্ষার আগে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেন সম্প্রসারণ কাজ সম্পূর্ণ না হলে পরিবহন সেক্টর অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হবে। পাশাপাশি এ দীর্ঘ ৮০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে প্রচ- যানজট সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।’ চট্টগ্রাম চার লেন প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী অরুণ আলো বড়ুয়া এসব বিষয়ে বলেন, ‘প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত মান নিয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না। যে সকল স্থান দেবে আইলেন পরিণত হচ্ছে, তা চিহ্নিত করে পুনরায় নির্মাণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঠিকাধারী কাজ সম্পূর্ণ করার তাগাদা দিয়ে আসছি আমরা। চলতি বছরের ডিসেম্বরে চারলেন সম্প্রসারণের এ কাজ শেষে যান চলাচলে উন্মুুক্ত করে দেয়া হবে বলে তিনি জানান।’
×