ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থবছরের প্রথম ৯ মাস বেনাপোলে ২৫ কোটি টাকা কম রাজস্ব আদায়

প্রকাশিত: ০৪:২৬, ১২ এপ্রিল ২০১৫

অর্থবছরের প্রথম ৯ মাস বেনাপোলে  ২৫ কোটি টাকা কম রাজস্ব আদায়

আবুল হোসেন, বেনাপোল ॥ ২০১৪-১৫ অর্থবছরের মার্চ মাসে বেনাপোল কাস্টম হাউসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৭ কোটি ২৬ লাখ টাকা কম রাজস্ব আদায় হয়েছে। আর অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে রাজস্ব আয় থেকে পিছিয়ে রয়েছে ২৫ কোটি ২৪ লাখ টাকা। ৯ মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৮২০ কোটি ৩১ লাখ টাকা। সেখানে আদায় হয়েছে ১ হাজার ৭৯৫ কোটি ৭ লাখ টাকা। বেনাপোল দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর। কলকাতা থেকে মাত্র আড়াই ঘণ্টায় মাল আনা-নেয়া করা যায় বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে। আর সে কারণে আমদানিকারকরা এ পথে আমদানি করতে চাইলেও কাস্টমস ও বন্দরে হয়রানি, শুল্ক ফাঁকি, চোরাচালানরোধসহ বন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও অব্যবস্থাপনা দূর করতে পারলে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ কয়েকগুণ বেশি হবে বলে মনে করছেন এখানকার ব্যবসায়ীরা। দেশের চাহিদার অধিকাংশ পণ্যই এই স্থলপথে আমদানি-রফতানি হয়ে থাকে। সম্প্রতি কাস্টমসের নানা হয়রানির ফলে বেনাপোল দিয়ে আমদানি কমতে শুরু করেছে। আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে দেয়া, প্রতিটি কেমিকেল পণ্য টেস্টে পাঠানো, দিনের পর দিন ফাইল আটকে রাখা, অতিরিক্ত অর্থ আদায়সহ নানাবিধ হয়রানির কারণে আমদানিকারকরা এ বন্দর থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছেন। কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাইয়ে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৯৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে ১৯৪ কোটি ২৭ লাখ টাকা। আগস্টে ১৯৭ কোটি ৮০ লাখ টাকার বিপরীতে আদায় হয়েছে ২০১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। সেপ্টেম্বরে ২২৭ কোটি ৬১ লাখ টাকার বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ২৩৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা। অক্টোবরে ১৬৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকার বিপরীতে রাজস্ব আসে ১৬৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। নবেম্বরে ১৬৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকার বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয় ২১৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। ডিসেম্বরে ১৯৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১৯০ কোটি ৭৭ লাখ টাকা, জানুয়ারি-১৫ মাসে ১৯৭ কোটি ২১ লাখ টাকার বিপরীতে আদায় হয়েছে ১৭২ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। ফেব্রুয়ারি মাসে ২১৭ কোটি ৭৭ লাখ টাকার বিপরীতে আদায় হয়েছে ১৮৬ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। মার্চ মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৫৯ কোটি ৯১ লাখ টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে ২৩২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। বেনাপোল সিএ্যান্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, লাগাতার অবরোধ আর দফায় দফায় হরতালের পাশাপাশি কতিপয় কাস্টমস কর্তাদের অহেতুক হয়রানির কারণে রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্য পূরণ করতে পারিনি। এ অবস্থা চলতে থাকলে রাজস্ব আদায় চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হবে। হয়রানি, বন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি দীর্ঘদিনের দাবিকৃত ক্লিয়ারিং হাউস চালু হলে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা কয়েকগুণ বাড়বে। তিনি আরও বলেন, রাসায়নিক পরীক্ষা ও আমদানিকৃত পণ্যের ওপর কাস্টমস কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত লোড না চাপালে রাজস্ব আদায় বাড়বে কয়েকগুণ। সবার আন্তরিকতা থাকলে আমদানি-রফতানি কার্যক্রমের গতিশীলতা যেমন বাড়বে তেমনি সরকারের রাজস্ব আদায়ও বেড়ে যাবে। বেনাপোল সিএ্যান্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের আইন বিষয়ক সম্পাদক মশিউর রহমান জানান, এ বন্দর দিয়ে কাঁচা ফলমূল আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, সীমান্তে চোরাচালান বন্ধ, বেনাপোল স্থলবন্দরের নানা বিড়ম্বনা, অনৈতিক সুযোগ গ্রহণ, ইক্যুইপমেন্ট সমস্যা, চুরিরোধসহ সুযোগ-সুবিধা বাড়লে আমদানি-রফতানির পরিমাণ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাড়বে রাজস্ব আদায়ও। বেনাপোল কাস্টমস হাউসের যুগ্ম কমিশনার মোঃ আতিকুর রহমান জানান, সরকারের রাজস্ব আদায়ের স্বার্থে কিছু কিছু পণ্যের রাসায়নিক পরীক্ষার প্রয়োজন বিধায় সেসব আইটেম পরীক্ষা করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের কোন কর্মকর্তা হয়রানি করলে আমাদের জানালে আমরা সেটা দেখব বলে তিনি জানান।
×