ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনা

প্রকাশিত: ০৩:৩৫, ১২ এপ্রিল ২০১৫

মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনা

সড়ক দুর্ঘটনা যেন নিত্যদিনের খবর। অধিকাংশ দুর্ঘটনাই যেন অনিবার্য মৃত্যুর ঘটনাও। এই মৃত্যুর মিছিল যেন থামছে না। প্রায় প্রতিদিনই দেশের নানা প্রান্ত থেকে এমন খবর মিলছে। বলা যায়, এমন কোন দিন নেই যেদিন দেশের কোন না কোন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে, প্রতিদিনই সড়ক-মহাসড়কে ঝরছে মূল্যবান জীবন। বহু পরিবার হারাচ্ছে তার একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটিকে। এসব দুর্ঘটনায় যারা আহত হয় তাদের অনেককেই সারাজীবনের মতো পঙ্গু হয়ে বেঁচে থাকতে হয়। বুধবার মধ্য রাতে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যাত্রীবাহী একটি বাস রাস্তার পাশে গাছের সঙ্গে ধাক্কা খায়। এতে ঘটনাস্থলেই ২২ যাত্রী মারা যায়। হাসপাতালে মারা যায় তিনজন। ঝরে যায় ২৫টি মূল্যবান জীবন। কোনভাবেই এই ট্র্যাজেডি বন্ধ হচ্ছে না। নিরাপদ সড়কের প্রত্যাশা আমাদের দীর্ঘদিনের। কিন্তু শতভাগ সেই প্রত্যাশা কবে পূরণ হবে তা নিশ্চিত করে বলা মুশকিল। বাংলাদেশে বছরে গড়ে ১৫ হাজারের মতো সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এসব দুর্ঘটনায় প্রতি বছর কমপক্ষে ১২ হাজার লোকের মৃত্যু হয়। আহতের সংখ্যা প্রায় তিনগুণ। পরিসংখ্যান মতে দেশের ৬১ শতাংশ চালক পরীক্ষা না দিয়ে লাইসেন্স নিচ্ছেন। প্রায় ১৬ লাখ চালক বৈধ লাইসেন্স ছাড়াই গাড়ি চালাচ্ছেন। অভিযোগ আছে গাড়ি চালাতে না জানলেও এখানে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া যায়। ধরা পড়লে কিছু টাকা দিলেই সব কিছু ম্যানেজ হয়ে যায়। রয়েছে চলাচলের অনুপযোগী লক্কড়ঝক্কড় মার্কা গাড়িও। ফিটনেসবিহীন যানবাহনের সঠিক পরিসংখ্যান কারও জানা নেই। অথচ এসব গাড়ি প্রকাশ্যেই সড়ক-মহাসড়কে চলাচল করছে। মূলত ফিটনেসবিহীন যানবাহন ও লাইসেন্সবিহীন চালকই এসব দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর জন্য চালকের অপরাধ প্রমাণিত হলে এক সময় মৃত্যুদণ্ডের বিধান ছিল। শেষ পর্যন্ত আইনটি বাতিল করা হয়। তারপর সরকার আসে সরকার যায়, কোন সরকারই আর কোন কঠিন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়নি। তাই নানা চেষ্টার পরও সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করা যায়নি। কিন্তু এভাবে আর কতকাল? ভাঙ্গার এই বাসটির বেঁচে যাওয়া যাত্রীরা বলেছেন, রাতে বাসটি চলছিল বেপরোয়া গতিতে। কেউ বলেছেন, চালক ঘুমিয়ে পড়েছিল। তাকে বার বার সতর্কও করা হয়েছে যাত্রীদের পক্ষ থেকে। এ কথা ঠিক সড়কে দুর্ঘটনা নানা কারণে হয়ে থাকে। অপ্রশস্ত রাস্তা, চালকের অসচেতনতা, গাড়ির ত্রুটিসহ নানা কারণ থাকতে পারে এতে। ভাঙ্গার দুর্ঘটনার পেছনে চালক ভিন্ন কথা বললেও যাত্রীরা চালকের অসতর্কতাকে দুষছেন। ঘটনার কারণ উদঘাটনে দুটি তদন্ত কমিটি কাজ করছে। তারা নিশ্চয়ই সঠিক কারণ উদঘাটন করবেন। চালক দায়ী হলে শাস্তি পাবেন এটাই স্বাভাবিক। তবে একথা সত্য যে, পথচারী কাউকে চাপা দেয়া কিংবা বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর কারণে কারও শাস্তির নজির আমাদের দেশে খুবই কম। আইনের দুর্বলতাও এখানে অন্যতম কারণ। সড়কপথে দুর্ঘটনা রোধে এই বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দেয়া উচিত। পথের দূরত্ব যাই হোক, চালকদের হাতেই থাকে যাত্রীর নিরাপত্তা। তাই চালকের সচেতনতাই এখানে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এই ক্ষেত্রে ফিটনেসবিহীন গাড়ি যাতে কেউ চালাতে না পারে, সেটাও নিশ্চিত করা দরকার। সড়ক-মহাসড়কে অসংখ্য বাঁক রয়েছে। সেগুলোর ব্যাপারেও সাবধানতা অবলম্বন জরুরী। এখন রাজধানী ঢাকা থেকে দেশের প্রায় সব স্থানেই সড়কপথে অতি সহজে যাওয়া যায়। এসব পথে বেড়েছে যানবাহনের চলাচল। তাই যেভাবেই হোক নিরাপদ সড়কপথের নিশ্চয়তা দরকার। সড়কপথ যেন আর মানুষের মৃত্যুফাঁদ না হয় সেই প্রত্যাশা সবার।
×