ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী বিচার ॥ দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক ৫ জনের অবস্থান জানতে

প্রকাশিত: ০৬:৪১, ১১ এপ্রিল ২০১৫

যুদ্ধাপরাধী বিচার ॥ দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক ৫ জনের অবস্থান জানতে

বিকাশ দত্ত ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক দ-প্রাপ্ত পলাতক ৫ জনের অবস্থান জানার জন্য ইন্টারপোলের সহায়তা নেয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হওয়ার আগে ও পরে দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে যারা পলাতক আছেন তাদের মধ্যে ৪ জনের মৃত্যুদ- ও একজনের যাবজ্জীবন কারাদ- প্রাদান করেছেন ট্রাইব্যুনাল। মৃত্যুদ-প্রাপ্তরা হলেন- জামায়াতের সাবেক রুকন বাচ্চু রাজাকার হিসেবে পরিচিত আবুল কালাম আজাদ, বুদ্ধিজীবী হত্যার অন্যতম জামায়াত নেতা আশরাফুজ্জামান খান, চৌধুরী মাঈনুদ্দিন, বিএনপি নেতা জাহিদ হোসেন খোকন ও জাতীয় পার্টির আমৃত্যু কারাদ-প্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার আব্দুর জব্বার। তদন্ত সংস্থা, প্রসিকিউশন ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় সূত্রে এ খবর জানা গেছে। তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক সানাউল হক বলেছেন, যাদের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল দ- দিয়েছেন এমন পলাতক আসামিদের অবস্থান জানার জন্য অনেক আগেই একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত সংস্থা, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও প্রসিকিউটরের সমন্বয়ে এ কমিটি গঠন করা হয়। যার সার্বিক দায়িত্বে রয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়। দীর্ঘদিন হলো এ কমিটি কোন বৈঠক করছে না। আশা করছি সত্বর আবার বৈঠক করা হবে। যুদ্ধাপরাধ মামলায় মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আলবদর নেতা চৌধুরী মঈন উদ্দিনের ঠিকানা নিশ্চিত করতে ইন্টারপোলের সহায়তা চাইবে সরকার। পলাতক আসামিদের মধ্যে মোঃ আশরাফুজ্জামান খান আমেরিকায়, চৌধুরী মাঈনুদ্দীন লন্ডনে, বাচ্চু রাজাকার হিসেবে পরিচিত পাকিস্তান, ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জব্বার আমেরিকা ও জাহিদ হোসেন খোকান সুইডেনে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে এবং জাহিদ হোসেন খোকন পলাতক রয়েছেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাকেও মৃত্যুদ- প্রদান করেছেন। বর্তমানে তিনি সুইডেনে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে। সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, খোকন রাজাকারের ছেলে লিনকন, মেয়ে সামছুন্নাহার বেগম ও জামাতা মোঃ বদিউজ্জামান শেখ সুইডেনে বসবাস করছেন। সেখানেই খোকন রাজাকার বহাল তবিয়তে রয়েছেন। তার ঠিকানা ব্রিড্যানগভাগেন, এপার্টমেন্ট ১০০১, ১২৭ ৩২ সার্কহোলমেন, স্টকহোম সুইডেন। টেলিফোন নাম্বার ০৮-৩৮৬৮২৯। খোকন রাজাকারের ছেলে সম্প্রতি যুবদল সুইডেন সাখার সাধারণ সম্পাদক নিযুক্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে। ১৯৭০-৭১ সালে জামায়াতে ইসলামীর নেতা ছিলেন। তার নেতৃত্বে নগরকান্দায় রাজাকার বাহিনী গঠন করা হয়। পরবর্তীতে খোকন রাজাকার বিএনপির সঙ্গে যুক্ত হয়। বর্তমান নগরকান্দা পৌরসভার মেয়র। মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার তদন্ত শুরু হওয়ার পর থেকেই তিনি দেশ থেকে পালিয়ে যান। বর্তমানে তিনি সুইডেনে বসবাস করছেন। খোকনের বিরুদ্ধে ২০১২ সালের ১৬ এপ্রিল তদন্ত শুরু হয়ে ২৯ মে শেষ হয়। এদিকে পুলিশের তরফ থেকে চৌধুরী মঈন উদ্দিনের সঠিক ঠিকানা নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। তদন্ত করার সময় তদন্ত সংস্থা তার বাসার ঠিকানা নিশ্চিত করেছিল। ‘মৃত্যুদ-ে দ-িত আসামি চৌধুরী মঈন উদ্দিন যুক্তরাজ্যে বসবাস করেন। তার যুক্তরাজ্যের ২টি ঠিকানার মধ্যে সঠিক ঠিকানা নিরূপণের জন্য ইন্টারপোলের সহায়তা নেয়া যেতে পারে।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় ইন্টারপোলের সহায়তা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এজন্য ব্যবস্থা নিতে পুলিশ প্রধানকে বুধবার নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়। ’সূত্র জানায়, যুক্তরাজ্যে বসবাসরত চৌধুরী মঈন উদ্দিনের অবস্থান নিশ্চিত করতে অনুসন্ধান চালাচ্ছে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ। তার বসবাসের দুটি ঠিকানাও পাওয়া গেছে। সঠিক ঠিকানা নিরূপণের জন্য ইন্টারপোলের সাহায্য চাওয়া হবে। তদন্ত সংস্থা দুটি বাসার ঠিকানা দিয়েছে তার মধ্যে রয়েছে, আসামি চৌধুরী মাঈনুদ্দীন জামায়াতে ইসলামী সংশ্লিষ্ট মুসলিম এইড ইউকে নামীয় সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা। ওই সংস্থায় তিনি পরবর্তীতে ট্রেজারারের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে ওই প্রতিষ্ঠানের ট্রাস্টি পদে রয়েছেন। এছাড়া টোটেনহাম মসজিদ বর্তমানে মাজিদ আয়েশা টোটেনহাম (ইসলামী কমিউনিটি সেন্টার, ১১৫ সেলিড রোড, লন্ডন, এনআই ৫ জেএইচ) চেয়ারম্যান, ব্রিটেনের ন্যাশনাল হেল্থ সার্ভিস মুসলিম স্পিরিচুয়াল কেয়ার প্রভিশন ইন ন্যাশনাল হেলথ-এর পরিচালক। লন্ডন মুসলিম সেন্টার/ঈস্ট মসজিদের ভাইস-চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পদে তিনি অধিষ্ঠিত রয়েছেন। জামায়াতে ইসলামী সংশ্লিষ্ট সংগঠন দাওয়াতুল ইসলামের সঙ্গেও আসামি জড়িত। বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীর বিচার শুরু হওয়ার পর মুসলিম এইড ইউকে ও লন্ডন মুসলিম সেন্টার/ঈস্ট লন্ডন মসজিদের ওয়েবসাইট থেকে তার নাম ও ঠিকানা প্রত্যাহার করা হয়েছে। একাত্তরে বাংলাদেশের চূড়ান্ত বিজয়ের পূর্ব ক্ষণে জাতিকে মেধাশূন্য করার নীলনক্সা বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দেন চৌধুরী মঈন উদ্দিন। এই আলবদর নেতাকে মৃত্যুদ- প্রদান করা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তার রায়ে বলেন, ‘একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যাকা-ের মূলনায়ক ছিলেন তিনি। এই নৃশংস অপরাধের জন্য তিনি শুধু এবং শুধুমাত্র ফাঁসির যোগ্য। তাদের মৃত্যুদ- না হলে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে না।’ ২০১০ সালে ট্রাইব্যুনাল গঠন করে যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরুর পর মঈন উদ্দিনের বিরুদ্ধেও তদন্ত শুরু হয়। মঈন উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত করেন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তা মোঃ আতাউর রহমান। ২০১৩ সালের ৩ নবেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ মঈন উদ্দিনের বিরুদ্ধে ১১টি অভিযোগের সবই প্রমাণিত হওয়ায় তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- নিশ্চিত করার আদেশ দেন।
×