ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ইলিশের বাজারে বৈশাখী ঝড়, দাম বেড়েছে কয়েক গুণ

প্রকাশিত: ০৬:৩৩, ১১ এপ্রিল ২০১৫

ইলিশের বাজারে বৈশাখী ঝড়, দাম বেড়েছে কয়েক গুণ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বৈশাখ সামনে রেখে চাহিদা বাড়ায় দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠছে ইলিশ মাছ। বৈশাখী ঝড় বইছে ইলিশ মাছের বাজারে। অন্য সময়ের চেয়ে দাম বেড়েছে কয়েগুণ। তারপরও পছন্দসই ইলিশ মিলছে না। তবে দেশের অনেক মৎস্য আড়তে ইলিশের মজুদ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, বেশি দাম হাঁকিয়ে নেয়ার জন্যই এই মজুদ। সত্বর মজুদকৃত এসব ইলিশ ছাড় করা হলে শেষ পর্যন্ত কিছুটা কম দামে ইলিশ কেনার সুযোগ মিলতে পারে বলেও সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। জানা গেছে, খুচরা বাজারে মাঝারিমানের হালিপ্রতি ইলিশের দাম হাঁকা হচ্ছে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা। এক কেজির বেশি হলে দাম আরও বেশি। সেক্ষেত্রে হালিপ্রতি ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে ১৬-২০ হাজার টাকা পর্যন্ত। আধাকেজি বা তার নিচে হলে দামে কিছুটা স্বস্তি আছে। সেক্ষেত্রে হালিপ্রতি গুনতে হবে আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা। তবে দুই সপ্তাহ আগেও ইলিশের দাম এতটা চড়া ছিল না। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কাপ্তানবাজারের ইলিশ মাছ বিক্রেতা রণজিৎ দাস জনকণ্ঠকে বলেন, পহেলা বৈশাখ তাই দাম বাড়ছে। এটা আর নতুন কী। তিনি বলেন, বাজারে চাহিদা অনেক বেশি কিন্তু সে হারে মাছ আসছে না। তাই বেশি দামে কেনা, বেশি দামে বেচা। রাজধানীর মাছের বড় বাজার হিসেবে পরিচিত কাপ্তানবাজার, নিউমার্কেট, কাওরান বাজার এবং যাত্রাবাড়ী মাছের আড়তে এখন বিভিন্ন সাইজের ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। চাহিদা বাড়ার কারণে নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে ইলিশ। এ যেন পুরনো ঘটনারই পুনরাবৃত্তি! কোন কোন ক্রেতা বেশি করে ইলিশ সংগ্রহ শুরু করেছেন। উদ্দেশ্য বাংলা নববর্ষের দিন পরিবারের সবাই মিলে ‘পান্তা-ইলিশের’ স্বাদ নেয়া। বিক্রেতারা এই সুযোগ নিতে আগেভাগে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ইলিশের। পদ্মার ইলিশ হলে তো কথাই নেই। দরদাম যাই হোক বাজারে মাছ কিনতে এসে সবাই খোঁজ করছেন ইলিশের। দামে পটলে বাজারের ব্যাগে ঢুকিয়ে দিচ্ছেন আস্ত ইলিশ। যেন ইলিশ উৎসবের প্রস্তুতি চলছে। অধিকাংশ মৎস্য ব্যবসায়ীর ডালি ভরে উঠছে ইলিশ মাছে। বাড়তি লাভের প্রত্যাশায় মিঠাপানির মাছ বিক্রি ছেড়ে দিয়ে কেউ কেউ ইলিশ বিক্রি শুরু করেছেন। শুক্রবার বাংলা নববর্ষ উদযাপনে ঢাকার ফকিরাপুল বাজারে ইলিশ মাছ কিনতে এসেছেন খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা জাকির হোসেন। কথা প্রসঙ্গে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, ছুটির দিনে নববর্ষের জন্য ইলিশ মাছ কিনতে এসেছি। মাছ কিনে ওগুলো ফ্রিজে রেখে দেয়া হবে। রান্না হবে নববর্ষের আগের রাতে। পহেলা বৈশাখের সকালে পরিবারের সবাই ও আত্মীয়স্বজনদের নিয়ে পান্তা-ইলিশের ভোজ হবে। তিনি বলেন, এভাবে গত পাঁচ বছর ধরে নববর্ষের উৎসব পালন করা হচ্ছে। স্ত্রী, ছেলেমেয়ে ও আত্মীয়স্বজনরা পান্তা-ইলিশের ভোজ উৎসব খুব উপভোগ করে। আর এ কারণে বেশি করে ইলিশ মাছ সংগ্রহ করতে হচ্ছে। গত বছরের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ওই সময় আগের দিন বাজারে গিয়ে ভাল মাছ পাইনি। যাও বা পাওয়া গেছে তার দাম দিতে হয়েছে অনেক বেশি। এদিকে, এ অবস্থায় নিম্ন ও মধ্যবিত্তের ভরসা ছোট সাইজের টেম্পু ও জাটকা ইলিশ। বাজারে সামান্য হলেও পাওয়া যাচ্ছে মিয়ানমারের আমদানিকৃত ইলিশ। এছাড়া চট্টগ্রামের চন্দ্রা ইলিশও এই সময়ে বাজারে কিছুটা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু চাহিদা বাড়ায় জাতভেদ হিসাব-নিকাশ না করেই বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে ইলিশ মাছ। হাফ কেজি ওজনের প্রতিপিস ইলিশ ৭শ’ থেকে এক হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাছ ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে ইলিশ মাছের সঙ্কট রয়েছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হলে সামনে সঙ্কট আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। রাজধানীর কাওরান বাজার, হাতিরপুল, পালাশীসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, ৫০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের এক হালি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে সাত থেকে আট হাজার টাকা। বাজারে ছোট আকারের এই ইলিশ মাছের দাম এত বেশি কেন জানতে চাইলে পলাশী বাজারের মাছ ব্যবসায়ী রাশেদ মিয়া বলেন, পহেলা বৈশাখ এলে ইলিশ মাছের অনেক টান থাকে। মাছের উৎপাদন অনেক কম কিন্তু চাহিদা অনেক বেশি। তাই মাছের দামও বেশি। বাজার ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ ব্যবসায়ী ইলিশ মাছ কেজি দরে বিক্রি না করে হালি হিসাবে বিক্রি করছেন। হালি হিসাবে বিক্রির কারণ জানতে চাইলে রাশেদ মিয়া আরও বলেন, অধিকাংশ মাছ বেশ ছোট। ৫০০ থেকে ৭০০ গ্রামের। মাঝেমধ্যে দু-একটা মাছ ওজনে বেশি হয়। ছোট মাছ হালিতে বিক্রি লাভ বেশি। আর দুই থেকে তিন কেজি ওজনের একটি ইলিশ মাছ আট থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছেন বলেও জানান তিনি। ব্যবসায়ীরা জানান, ৫০০ থেকে ৭০০ গ্রাম ওজনের এক হালি ইলিশ গত কয়েক সপ্তাহ আগেও বিক্রি হয়েছে দেড় থেকে দুই হাজার টাকায়। এদিকে, যারা ইলিশ মাছের গরম বাজারে এসে চরম দাম নিয়ে দামাদামী করতে চান না তারা অনেকেই ছুটছেন রাজধানীর সুপারশপগুলোতে। র্যাঙ্কিন স্ট্রীটের একটি সুপারশপে গিয়ে দেখা যায়, মাঝারি আকারের প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ১৫০ টাকায়। এখানে বাজার করতে আসা রুবানা হাসান নামে এক গৃহিণী বলেন, আমি সুপারশপগুলো থেকেই বাজার করি। বাইরের বাজারগুলোতে সবকিছুর দাম নিয়ে অনেক দর কষাকষি করতে হয়, তাই ওই সব বাজারে যাই না। বৈশাখ সামনে রেখে ইলিশ কিনেছেন কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত কয়েক দিন আগে এখান থেকেই তিন কেজি ইলিশ কিনেছি চার হাজার টাকা দিয়ে। তিনি বলেন, এই সঙ্কট প্রতি বছর দেখা যাচ্ছে। তাই পহেলা বৈশাখে যাতে ইলিশের দাম নাগালের মধ্যে থাকে সে লক্ষ্যে সরকারেরও উদ্যোগ থাকা প্রয়োজন।
×