ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

৭ খুনের চার্জশীট

প্রকাশিত: ০৫:২১, ১১ এপ্রিল ২০১৫

৭ খুনের চার্জশীট

নারায়ণগঞ্জে চাঞ্চল্যকর সাত খুনের ঘটনার প্রায় এক বছর পর আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশীট) দাখিল করা হয়েছে। ওই ঘটনায় করা দুই মামলায় র‌্যাবের ২৫ সদস্যসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ। এদের মধ্যে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) সাবেক তিন কর্মকর্তা এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের একজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর হোসেন রয়েছেন। নূর হোসেন ভারতে কারাবন্দী রয়েছেন। আর ৩৫ আসামির মধ্যে ২২ জন কারাগারে আছেন, অন্যরা পলাতক। কিছুটা বিলম্বে হলেও এই চার্জশীট প্রদানের ঘটনায় মানুষ অনেকটা স্বস্তি বোধ করবে। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পথেও এটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। রোমহর্ষক সাত খুনের সঙ্গে যেহেতু র‌্যাব সদস্যদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে তাই জনমনে এমন একটি ধারণা বা সন্দেহ তৈরি হয়েছিল যে আসামিদের রক্ষার জন্য কৌশলের আশ্রয় নেয়া হবে। বিশেষ করে ওই হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত এক ব্যক্তি একজন মন্ত্রীর নিকটাত্মীয় হওয়ায় সন্দেহটি বড় হয়ে উঠেছিল। এজন্য অবশ্য মানুষকে দোষ দেয়া যাবে না। বাংলাদেশের ইতিহাসে এমনটাই চলে আসছে এতকাল। কোন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে ছোট-বড় নানা অভিযোগ উঠলেও চূড়ান্ত পর্যায় পর্যন্ত সেই অভিযোগগুলো পৌঁছেনি। বলা যায় এবার তার বিশেষ ব্যতিক্রম ঘটল। এ নিয়ে রাজনীতি করার অপচেষ্টাও কম হয়নি। উল্লেখ্য, এই ঘটনার পর বিএনপির একজন শীর্ষ নেতা র‌্যাবকে ‘ভাড়াটে খুনী’ বলে আখ্যায়িত করে বলেছিলেন, ‘টাকার বিনিময়ে তাঁরা খুন করছে। র‌্যাব মানুষের নিরাপত্তা দেয়ার পরিবর্তে জীবন নিয়ে নিচ্ছে। এই বাহিনীর আর প্রয়োজন নেই। অবিলম্বে এই বাহিনীকে বিলুপ্ত করতে হবে।’ বলাবাহুল্য, কোন বাহিনীর দু-একজনের নামে অভিযোগ উঠলেই গোটা বাহিনীকে দায়ী করা উচিত নয়। কেউ অপরাধ করলে শাস্তি হবে, এটাই আইনের বিধান। অপরাধ যাদের নিয়ন্ত্রণ করার কথা তাদের কেউ যদি অপরাধ করে সে ক্ষেত্রে শাস্তি হওয়া উচিত কঠোর এবং দৃষ্টান্তমূলক। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কোন সদস্য অপরাধকর্মে যুক্ত হয়ে পড়লে তার প্রভাব পুরো সমাজে পড়তে থাকে। কিছুকাল আগে র‌্যাবের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার ও জঙ্গী সংগঠনের অপতৎপরতা দমনে এলিট ফোর্স র‌্যাব দেশের জনগণের শান্তি, নিরাপত্তা ও আস্থার প্রতীকে পরিণত হয়েছে। জঙ্গী ও সন্ত্রাস দমন, অপহরণ, ভেজালবিরোধী অভিযান, অবৈধ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ এবং অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারে র‌্যাবের সাফল্য সর্বজনস্বীকৃত।’ আইন সবার জন্য সমান এবং সব অপরাধীকেই আইনের আওতায় নিয়ে আসা রাষ্ট্রের কর্তব্য। বর্তমান সরকারের এক বছরের কিছু বেশি সময়কে আইনের শাসন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার বছর হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে। সরকার সব হত্যাকা-কে বিচারের আওতায় আনার চেষ্টা করছে। আইন ও বিচার ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে। দেশের বিচার ব্যবস্থার প্রতি জনগণ এখন আস্থাশীল। আলোচিত ৭ খুনের ঘটনায় র‌্যাবের সদস্যদের বিরুদ্ধে চার্জশীট প্রদানের বিষয়টি সেই আস্থা আরও দৃঢ় করল।
×