ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আন্তর্জাতিক সেমিনারে ভিডিও বার্তায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী

বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা উন্নয়নশীল দেশের মডেল

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ১০ এপ্রিল ২০১৫

বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা উন্নয়নশীল দেশের মডেল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, স্বাস্থ্য বিষয়ক সহস্রাব্দ লক্ষ্য অর্জনে এ দেশের বেশ অগ্রগতি হয়েছে। দেশের সর্বত্র বিস্তার লাভ করেছে ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবার নেটওয়ার্ক। এমন মজবুত অবকাঠামোর ওপর দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবার ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবার অবকাঠামো বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশের মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে। জনবল বৃদ্ধি, অবকাঠামোর উন্নয়ন, মাতৃ ও শিশুমৃত্যু হ্রাস, ওষুধের সরবরাহ বৃদ্ধি, কমিউনিটি ক্লিনিক চালু, স্বাস্থ্য খাতে ডিজিটাল বাংলাদেশ কার্যক্রম ইত্যাদি উন্নয়নমূলক উদ্যোগ গ্রহণ করে সরকার। দেশের ৯৯ ভাগ উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে রয়েছে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবার ব্যবস্থা। বর্তমানে প্রতি মাসে ৮০ থেকে ৯০ লাখ মানুষ কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে সেবা নেন। দেশে অনুর্ধ ১২ মাস বয়সের শিশুদের সকল টিকা প্রাপ্তির হার ৮১ ভাগ। বৃহস্পতিবার রাজধানীর হোটেল রেডিসনে সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে করণীয় বিষয়ে আয়োজিত এক আন্তর্জাতিক সেমিনারে পাঠানো ভিডিওবার্তায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পাওয়ার এ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্স সেন্টার (পিপিআরসি) এ সেমিনারের আয়োজন করে। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন পিপিআরসির নির্বাহী সভাপতি ড. হোসেন জিল্লুর রহমান। বক্তব্য রাখেনÑ অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান, ভারত থেকে আগত ডাঃ ডিকে গুপ্তা, থাইল্যান্ডের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী সোমসাক গুণধারা, বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ একে আজাদ খান প্রমুখ। সেমিনারে প্রধান অতিথি থাকার কথা থাকলেও বিশেষ কারণে উপস্থিত থাকতে পারেননি স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। এজন্য তিনি সেমিনারে আগতদের উদ্দেশে একটি ভিডিওবার্তা পাঠান। ভিডিওবার্তায় দেশের স্বাস্থ্য সেক্টরের বিভিন্ন দিক উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নে সরকারের সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা রয়েছে। একটি সুস্থ জাতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে ক্লিনিক চালু করা হয়েছে। এসব ক্লিনিকে প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাদের দেয়া হয়েছে ল্যাপটপ ও ইন্টারনেট সংযোগ। রোগীদের বিনামূল্যে ওষুধ দেয়া হচ্ছে। আর চালু করা হয়েছে ই-হেলথ ও টেলিমেডিসিন সেবা কার্যক্রম। স্বাস্থ্যসেবা নেটওয়ার্কের স্তরগুলো উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্যকর্মী, প্রাইমারি, সেকেন্ডারি, টারসিয়ারি ও বিশেষায়িত হাসপাতাল এবং উভয়মুখী রেফারেন্স পদ্ধতি প্রবর্তন করেছি। যা বিশ্বে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত বিষয়গুলোকে কর্মপরিকল্পনায় গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। দেশে গড়ে উঠেছে ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবার মজবুত অবকাঠামো। স্বাস্থ্য খাতে সাফল্য অর্জনের মাধ্যমে দেশের জনগণের প্রতি নিজেদের অঙ্গীকার পূরণ করছে বর্তমান সরকার। আর সার্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা করতে নিজেদের দেয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নেও সরকার সব সময় আন্তরিক। তিনি আরও জানান, দেশের সাধারণ মানুষ আজ ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবার সুবিধা পাচ্ছে। ডিজিটাল বাংলদেশ এখন আর শুধু সেøাগান নয়, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এর সুবিধা পৌঁছে গেছে। দেশের সকল পর্যায়ের হাসপাতালে বেডের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। স্থাপন করা হয়েছে আধুনিক যন্ত্রপাতি। নির্মাণ করেছি নতুন নতুন জেনারেল হাসপাতাল ও বিশেষায়িত হাসপাতাল। সরকার নতুন নতুন মেডিক্যাল কলেজ, ডেন্টাল কলেজ, হেলথ টেকনোলজি ইনস্টিটিউট, নার্সিং কলেজ এবং নার্সিং ট্রেনিং ইনস্টিটিউট স্থাপন করেছে। আর ডাক্তার, নার্সসহ স্বাস্থ্য খাতের প্রতিটি বিভাগেই জনবল বাড়ানো হয়েছে। দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষা, জেন্ডার সমতা, নারীর ক্ষমতায়ন এবং পরিকল্পিত পরিবার নিশ্চিত করতে সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছি। নারী ও শিশুস্বাস্থ্য উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে নারী ও শিশুর স্বাস্থ্য এবং জীবনমান সহায়ক নানামুখী সেবা ও সহায়তা কর্মসূচী বাস্তবায়ন করছে সরকার। জাতিসংঘের মা ও শিশুস্বাস্থ্য বিষয়ক বিশ্ব কৌশলপত্র বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমরা দেশব্যাপী মা ও শিশুর নিবিড় পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি প্রবর্তন করেছি। এক্ষেত্রে জাতিসংঘের ‘কমিশন অন ইনফরমেশন এ্যান্ড এ্যাকাউন্টেবিলিটি অন উইমেনস এ্যান্ড চিল্ড্রেনস হেলথ’ এর ১১টি সূচক ব্যবহার করা হচ্ছে। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই ইলেক্ট্রনিক নিবন্ধন পদ্ধতি নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্য বিষয়ক সহস্রাব্দ লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশের বেশ অগ্রগতি হয়েছে। পোলিওমুক্ত দেশ হিসেবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সার্টিফিকেট গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর হার কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে সাফল্যের জন্য বাংলাদেশের এমডিজি পুরস্কারপ্রাপ্তি এবং স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের সাফল্য নিয়ে ব্রিটিশ চিকিৎসা সাময়িকী ল্যানসেটে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশ হওয়ার পরেও গত ৪০ বছরে স্বাস্থ্য খাতে ‘যুগান্তকারী সফলতা’ অর্জন করেছে বাংলাদেশ।
×