ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তেপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ১০ এপ্রিল ২০১৫

বায়ান্ন বাজার তেপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ যারপরনাই ঘৃণ্য অপরাধী কামারুজ্জামান। পাকিস্তানী বাহিনীর এই লাঠিয়াল নিজ দেশের জন্মের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস স্বজাতির রক্তে হাত ধুয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশেও হেসে খেলে কাটিয়েছে দীর্ঘকাল। আর তারপর বিচারের মুখোমুখি। বিচার সম্পন্নও হয়েছে। এখন রায় কার্যকরের অপেক্ষা। ঠিক তখন শুরু হয়েছে নাটকীয়তা। কখনও বলা হচ্ছে, আজ ফাঁসি। কখনও কালকের জন্য অপেক্ষা। এই করে করে অনেকদিন গত হয়েছে। সব মিলিয়ে অস্বস্তিকর এক অবস্থা। এ অবস্থায় বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির শহর পুরোটাই যেন কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নিয়েছে। দিন নেই, রাত নেই, ভিড় লেগে আছে এখানে। সকলেই শুনতে চান, রায় কার্যকরের ঘোষণা। গণমাধ্যমের কর্মীরা মহাব্যস্ত খবর সংগ্রহে। নিরাপত্তাও জোরদার করা হয়েছে গোটা এলাকায়। কিন্তু বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এ ফিচার লেখা পর্যন্ত ফাঁসির খবর নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বরং এ নিয়ে আরও বিলম্বের আভাস দেয় বিভিন্ন সূত্র। ফলে হতাশা ক্রমশ বাড়ছে। এ প্রসঙ্গে কারাগারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকাদের একজন আলি আশরাফ বলেন, গত কয়েকদিন ধরে যা ঘটছে তা সত্যি অবাক হওয়ার মতো। আইনী প্রক্রিয়ার যত রকম অপব্যবহার করা যায়, করে দেখাচ্ছে কামারুজ্জামান! তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, এভাবে কী অনন্তকাল চলবে? আরও একটি বছর গত হচ্ছে। কয়েকদিন পর কালের গর্ভে হারাবে ১৪২১ বঙ্গাব্দ। এখন চলছে পুরনোকে বিদায় আর নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর প্রস্তুতি। সারাদেশের মতো বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির শহর ঢাকাতেও চলছে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ। প্রতিবারের মতোই পহেলা বৈশাখ খুব ভোরে সরব হয়ে ওঠবে রমনা বটমূল। ছায়ানট এখানে আয়োজন করবে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের। এ আনুষ্ঠানিকতা ১৯৬০-এর দশকে শুরু হয়েছিল। এখন তা বাঙালী সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এবারও গানে গানে শিল্পীরা নতুন বছরকে স্বাগত জানাবেন। এখন চলছে সে প্রস্তুতি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিদিনই চলছে মহড়া। ছায়ানট ভবনে নবীন প্রবীণ শিল্পীরা আসছেন। মঞ্চে যে গানগুলো হবে, গাইছেন। দেখে মনে হয়, উৎসব শুরু হয়ে গেছে! ছায়ানট সূত্র জানায়, মঞ্চ পরিকল্পনার পুরো কাজ শেষ হয়েছে ইতোমধ্যে। শিল্পীরাও প্রস্তুত। মঞ্চ তৈরি হয়ে গেলে সেখানে অনুষ্ঠিত হবে চূড়ান্ত মহগড়া। মঙ্গল শোভাযাত্রা আয়োজনের কাজও এগিয়ে চলেছে পুরোদমে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা দিন রাত কাজ করছেন। গড়ছেন নানা শিল্পকর্ম। এক্ষেত্রে প্রাধান্য পাচ্ছে ফোক মোটিফ। লোকজ সংস্কৃতির নানা উপাদান জীবন্ত করে তুলছেন শিল্পীরা। রং তুলিতে ছবি আঁকছেন। চলছে সরাচিত্রের কাজ। মুখোশ তৈরি হচ্ছে। একইসঙ্গে চলছে বিক্রি। এই টাকায় মঙ্গল শোভাযাত্রায় খরচ হবে। চারুকলার লিচুতলা ঘুরে দেখা যায়, একে একে স্পষ্ট হচ্ছে ভাস্কর্য। বাঁশ ও কাঠে শক্ত কাঠামো গড়া হয়েছে। আয়োজকরা জানান, পাখি মাছ ইত্যাদি আগামী দুই এক দিনের মধ্যে স্পষ্ট হবে। এদিকে, উৎসবের প্রস্তুতি দেখতে প্রতিদিনই এখানে আসছেন বিভিন্ন বয়সী মানুষ। অনেক রাত পর্যন্ত থাকছেন তারা। নাচছেন। গাইছেন। ছবি তুলছেন। সব মিলিয়ে বৈশাখের আগমন স্পষ্ট।
×