ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

তিন সিটি নির্বাচন

মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন আজ

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ৯ এপ্রিল ২০১৫

 মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন  আজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকা ও চট্টগ্রামের তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন আজ। যেসব প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েও নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে চান তাদের আজকের মধ্যে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিতে হবে। এরপরে আর কোন প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের কোন সুযোগ নেই। আইন অনুযায়ী প্রত্যাহারের শেষ দিনের পর যারা থাকবেন তারা নির্বাচনে চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত হবেন। তাদের নামে নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে। কমিশন জানিয়েছে আগমীকাল শুক্রবার প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে। প্রতীক বরাদ্দ নিয়েই পূর্ণাঙ্গ প্রচারে নেমে পড়বেন প্রার্থীরা। ইতোমধ্যে মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে আলাদা প্রতীক বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গত ১৮ মার্চ ঢাকার উত্তর দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদ। তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ দিনে তিন সিটি কর্পোরেশনে মেয়র পদে ৬০ জন প্রার্থী, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৩৫৯ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১ হাজার ৪১৪ জন মোট ১ হাজার ৮৩৩ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে মেয়র পদে ২৬ জনসহ সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১৫৩ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৬৩২ জনসহ মোট ৮১১ মোট প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। ঢাকা উত্তরের মেয়র ২১ জন সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১৩৫ ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৪৯৪ জনসহ মোট ৬৫০ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। এছাড়া চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে ১৩ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৮৮ এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৭১ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র জমা দেয়। এছাড়া কোর্টের নির্দেশে আর ১৪ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা নেয়া হয়। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর ৫ জন ও দক্ষিণে ৯ জন। রিটার্নিং কর্মকর্তা ১ ও ২ এপ্রিল এসব প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাছাই করে। বাছাই ঢাকা দুই সিটি কর্পোরেশনে মেয়র পদে ৫ জন ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে ১ জন বাদে সবার প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা করা হয়। বাছাইয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে মেয়র পদে ২৩ জন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১২২ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৫৩৩ জন প্রার্র্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ বলে ঘোষণা করা হয়। ঢাকা উত্তরের মেয়র পদে ১৯ জন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১১৩ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৪৪৬ প্রার্থী বৈধ বলে বিবেচিত হয়। এছাড়া মেয়র পদে ১২ জন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৬১ জন ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৫৭ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়। ঢাকা বিভাগীয় কমিশনের অফিস সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনে বাছাইকালে যাদের মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে তাদের মধ্যে মেয়র, কাউন্সিলর, সংরক্ষিত কাউন্সিলরসহ মোট ১৭৯ জন প্রার্থী আপীল করে। এর মধ্যে একজন মেয়রসহ বেশ কিছু কাউন্সিলর প্রার্থী আপীলে তাদের প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছে। কমিশন জানিয়েছে আজ প্রত্যাহারের শেষ দিনে যারা প্রার্থী হিসেবে থাকবেন তারা নির্বাচনে কমিশনের চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত হবেন। এদিকে জানা গেছে, প্রত্যাহারের শেষ দিনে মেয়র কাউন্সিলর পদে অনেক প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিতে পারেন। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের মেয়র পদে আওয়ামী সমর্থিত ১ জন করে প্রার্থী নির্বাচনে রয়েছে। তবে ঢাকা দক্ষিণে মেয়র পদে এখন বিএনপির একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। জানা গেছে, মির্জা আব্বাস ছাড়া বাকি প্রার্থীরা তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেবেন। এছাড়া জানা গেছে, বিএনপির পক্ষ থেকে কাউন্সিলর পদে একজন করে প্রার্থী দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যেসব ওয়ার্ডে বিএনপির একাধিক প্রার্থী রয়েছে তাদের আজকের মধ্যে প্রত্যাহার করে নিতে বলা হবে। তবে কোন ওয়ার্ডে কাকে প্রার্থী করা হয়েছে কৌশলগত কারণে এখন বিএনপির পক্ষ থেকে কিছু বলা হয়নি। তবে যারা দলীয় সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করবেন তাদের গোপনে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। উত্তরে মেয়র পদে মিন্টুর আপীল শুনানির পরে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে কাকে এ সিটিতে মেয়র পদে মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে। জানা গেছে, যদি মিন্টু আপীল আবেদনে প্রার্থিতা ফিরে পান তাহলে তাকেই মেয়র প্রার্থী করা হবে। আর যদি শেষ পর্যন্ত মিন্টুর প্রার্থিতার ক্ষেত্রে বাতিলের সিদ্ধান্ত বহাল থাকে তাহলে বিকল্পধারার মাহী বি চৌধুরী অথবা তবিথ এম আউয়ালকে বিবেচনা করা হতে পারে। জানা গেছে, মাহীর বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে ইতিবাচক মনোভাব থাকলেও ২০ দলীয় জোটের শরীক জামায়াত ও এলডিপিসহ কয়েকটি দলের পক্ষ থেকে মাহী বিষয়ে আপত্তি জানানো হয়েছে। তবে সব কিছু বিচার-বিশ্লেষণ করে খালেদা জিয়া চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন। অপরদিকে ঢাকার দুই সিটিতে মেয়র প্রার্থীর পাশাপাশি একক কাউন্সিলর প্রার্থীও চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। যাদের কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে তারা ছাড়া বাকি প্রার্থীরা আজকে তাদের মনোনয়পত্র প্রত্যাহার করে নেবেন বলে জানা গেছে। তবে আওয়ামী লীগ অফিস সূত্রে জানা গেছে, কাউন্সিলর পদে ঢাকার দুই সিটিতে সাড়ে ৬ শতাধিক প্রার্থী মনোনয়নপত্রে স্বাক্ষর নেয়া হয়েছে। তারা আজকে তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেবেন বলে জানা গেছে। নির্বাচনে আচরণবিধি ভঙ্গ করলে ব্যবস্থাÑ শাহনেওয়াজ ॥ নির্বাচন কমিশনার মোঃ শাহনেওয়াজ বলেছেন, সরকারের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, স্পীকার, ডেপুটি স্পীকারসহ সরকারী সুবিধাভোগী ব্যক্তিরা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না। সুবিধাভোগীরা নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিলে আচরণবিধি বহির্ভূত বলে গণ্য হবে। তারা যদি আচরণবিধি ভঙ্গ করেন তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে সে যেই হোক না কেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, যেহেতু মন্ত্রীরা বিভিন্ন পদে রয়েছেন সেজন্য তারা তাদের নিয়মিত কাজ করতে যেতে পারবেন। তবে কোন নির্বাচনী কর্মকা-ে অংশ নিতে পারবেন না। চট্টগ্রামের মন্ত্রীদের বিধি লঙ্ঘন প্রসঙ্গে বলেন, চট্টগ্রামে তিন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর নির্বাচনী কৌশল সংক্রান্ত যে বৈঠকটি হয়েছে, তাতে বিধি লঙ্ঘন হয়নি। কারণ এটা রুদ্ধদ্বার বৈঠক ছিল। জনসম্মুখে তারা কোন কর্মসূচীতে অংশ নেননি। রিটার্নিং অফিসার আবদুল বাতেন ওই বৈঠকের বিষয়ে একটি তদন্ত প্রতিবেদন কমিশনে পাঠিয়েছেন। চট্টগ্রামের রিটার্নিং অফিসার তদন্ত করে রিপোর্ট দিয়েছেন। তদন্ত করে দেখা গেছে বৈঠকে তিন মন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। তবে তারা নির্বাচনী কর্মকা-ে সরাসরি অংশ নেননি। যেহেতু রিটার্নিং অফিসারই জানিয়েছেন এতে সরাসরি কোন আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়নি। সেখানে আর কোন ব্যবস্থা নেয়ার প্রশ্ন আসে না। তবে রিটার্নিং অফিসার সবাইকে আচরণবিধি মেনে চলতে অনুরোধ করেছেন। বুধবার নিজের অফিসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
×