ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আজ বেলা এগারোটায় আইনজীবীরা দেখা করবেন

কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর প্রক্রিয়া ॥ বাকি প্রাণভিক্ষা

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ৯ এপ্রিল ২০১৫

কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর প্রক্রিয়া ॥ বাকি প্রাণভিক্ষা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কামারুজ্জামানের মৃত্যুদ- কার্যকরে বাকি শুধু প্রাণভিক্ষার প্রক্রিয়া। মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে সুপ্রীমকোর্টের দেয়া চূড়ান্ত রায়ের বিরুদ্ধে কামারুজ্জামানের করা রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেয়া রায়ের অনুলিপিতে বুধবার স্বাক্ষর করেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাসহ বেঞ্চের অন্য বিচারপতিরা। পরে রায়ের অনুলিপি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল হয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছানোর পর এই যুদ্ধাপরাধীর দণ্ড কার্যকরে বাকিসব প্রক্রিয়াই সম্পন্ন হয়। কারাকর্তৃপক্ষ কামারুজ্জামানকে রিভিউ খারিজের রায়ের অনুলিপি পড়ে শোনানোর পর, প্রাণভিক্ষার বিষয়টি আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলেই জানাবেন বলে জানিয়েছেন। সে অনুযায়ী কামারুজ্জামানের আইনজীবীদের আজ সকাল ১১টায় দেখা করার সময় দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এর আগে গত সোমবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বাধীন আপীল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ সর্বসম্মতিক্রমে আপীল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে কামারুজ্জামানের দায়ের করা রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেন। বেঞ্চের অন্য বিচারপতিরা হলেন, বিচারপতি আব্দুল ওয়াহ্্হাব মিয়া, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। চার সদস্যের এই বেঞ্চের মধ্যে রিভিউর রায়টি লিখেন বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। তিনি বুধবার দুপুরে ৩৬ পৃষ্ঠার এ রায়টি লিখা শেষ করলে বেঞ্চের বাকি সদস্যরা এ রায়ে স্বাক্ষর করেন। পরে বিকেল তিনটার দিকে সুপ্রীমকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রায়ের অনুলিপিটি পৌঁছে বলে জানান, সুপ্রীমকোর্টের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার (২) মোঃ সাব্বির ফয়েজ। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ট্রাইব্যুনাল থেকে রায়ের অনুলিপি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও কারা কর্তৃপক্ষকে পাঠানো হয়। এছাড়া সুপ্রীমকোর্ট থেকেই রায়ের অনুলিপি পাঠানো হয় স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয় এবং এ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে। রায়ের অনুলিপির বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি রেজিস্ট্রার আফতাবুজ্জামান জানান, প্রথমে ওই নথি ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারকদের কাছে উপস্থাপন করেন তিনি। পরে তাদের নির্দেশনা পেয়ে তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তা পৌঁছে দেন সন্ধ্যা পৌনে ৬টায়। আইনজীবীদের সঙ্গে দেখা করবেন কামারুজ্জামান ॥ রিভিউর রায়ের অনুলিপি কামারুজ্জামানকে কারাকর্তৃপক্ষ পড়ে শোনানোর পর প্রাণভিক্ষা চাওয়ার বিষয়ে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় চেয়েছেন এই কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী। জানা গেছে, কামারুজ্জামান আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন। কামারুজ্জামানের আইনজীবী শিশির মনির বলেন, তিনি আমাদের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছেন। আমরা আগেই তার সঙ্গে দেখা করার জন্য আবেদন করে রেখেছিলাম। তিনি আরও বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় ওনার সঙ্গে দেখা করতে আমাদের সময় দেয়া হয়েছে। এদিকে, বুধবার সন্ধ্যায় কামারুজ্জামানের ফাঁসির চূড়ান্ত রায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছানোর পরেও তার পরিবারের সদস্যদের ডাকা হয়নি। এ থেকেও সংশ্লিষ্ট মহল জানিয়েছে, রায় কার্যকরের আগে পরিবারকে অবশ্যই দেখা করার সুযোগ দেয়া হবে। রাত পৌনে আটটা পর্যন্ত পরিবারের কাছে দেখা করার কোন পত্র পৌঁছায়নি। রিভিউর রায়ে যা বলা বলেছেন সুপ্রীমকোর্ট ॥ বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের লেখা এই রায়ে বলা হয়, আসামি পক্ষ এই রিভিউ আবেদনে নতুন এভিডেন্স হিসেবে একটি বই দাখিল করে। তারা দাবি করে, ট্রাইব্যুনালের ক্যামেরা ট্রায়ালে দেয়া রাষ্ট্রপক্ষের এক সাক্ষীর দেয়া জবানবন্দীতে কামারুজ্জামান সাক্ষীর স্বামীকে হত্যা করেছে এবং তাকে ধর্ষণ করেছে এমন কথা বলা হলেও, ওই বইতে একই নারীর দেয়া সাক্ষাতকারে ওই ধরনের কোন বক্তব্য আসেনি। আসামি পক্ষের আইনজীবী শুনানিতে দাবি করেন, বইতে ওই নারীর দেয়া সাক্ষাতকারে বলা হয়েছে, পাকিস্তানী আর্মিরা তার স্বামীকে হত্যা করে এবং তাকে ধর্ষণ করে। আসামি পক্ষের এসব দাবির বিষয়ে রায়ে বলা হয়েছে, ওই বইটি একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বই। বইটি পড়লে বোঝা যায়, একাত্তরে রাজাকার-আলবদররা কোন অপরাধই করেনি। রায়ে কামারুজ্জামানের আইনজীবী খন্দকার মাহবুবের একটি যুক্তি উল্লেখ করে বলা হয়েছে, আসামি পক্ষের আইনজীবীরা শুনানিতে বলেন, বঙ্গবন্ধু তো সবাইকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। নতুন করে এটা আবার তুলে ধরার দরকার কি? এ বিষয়ে রায়ে বলা হয়, আসামি পক্ষের আইনজীবীর এই বক্তব্যটি সত্য নয়। বঙ্গবন্ধু শুধু যারা কোন ফৌজদারী অপরাধ করেনি তাদের ক্ষমা করেছেন। তবে যারা ফৌজদারী অপরাধ করেছে তাদের ক্ষমা করেননি। রায়ে আরও বলা হয়, সত্য হলো এটাই, ১৯৭৫ সালে স্বাধীনতা বিরোধীরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে এ বিচার কাজ বিলম্বিত করেছে। নয়ত বহু আগেই এসব অপরাধীরা শাস্তি পেত। মৃত্যুদ-ের বিষয়ে রায়ে বলা হয়েছে, আসামি পক্ষের আইনজীবীরা শুনানিতে যুক্তি উপস্থাপন করেছেন, সারা পৃথিবী মৃত্যুদ- থেকে দূরে সরে এসেছে। এমনকি ভারতও বলছে, যেখানে মৃত্যুদ- নিতান্তই প্রয়োজন সেখানেই মৃত্যুদ- দেয়া হবে। এ বিষয়ে রায়ে আদালত বলেন, আমরা যদি নিতান্তই প্রয়োজন মনে করেই মৃত্যুদ- দেই, তাহলে এর চেয়ে আর বেশি প্রয়োজন আর কি হতে পারে। একাত্তরে কামারুজ্জামানদের অত্যাচার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার নাৎসী বাহিনীর অত্যাচারকেও হার মানায়। তাদের অত্যাচার ওই সময় বিশ্ব বিবেককেও প্রকম্পিত করেছিল। এর ফলে যারা প্রাণ হারিয়েছে শুধু তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হননি। গোটা জাতিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রায়ে আদালত বলেন, সাধারণত রিভিউ আবেদন দায়ের করা হয় ভুল-ভ্রান্তি দেখার জন্য। তবে আমরা আমাদের এই রায়ে কোন ভুল-ভ্রান্তি আবিষ্কার করতে পারিনি। ট্রাইব্যুনালের বিচারিক কার্যক্রম ॥ ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগের মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুলাই কামারুজ্জামানকে গ্রেফতার করা হয়। ২ আগস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার দেখানো হয়। ৫ ডিসেম্বর কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) ট্রাইব্যুনালে জমা দেয় প্রসিকিউশন। তবে সেটি সঠিকভাবে বিন্যস্ত না হওয়ায় আমলে নেয়ার পরিবর্তে ফিরিয়ে দেন ট্রাইব্যুনাল। ২০১২ সালের ১২ জানুয়ারি প্রসিকিউশন কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে পুনরায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন। ৩১ জানুয়ারি ৮৪ পৃষ্ঠার আনুষ্ঠানিক অভিযোগটি আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। ২০১২ সালের ৪ জুন কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। তার বিরুদ্ধে একাত্তরে হত্যা, গণহত্যা, নির্যাতন, দেশত্যাগে বাধ্য করাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি অভিযোগ আনা হয়। ২ জুলাই কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে ৮১ পৃষ্ঠার ওপেনিং স্টেটমেন্ট (সূচনা বক্তব্য) উত্থাপন করেন প্রসিকিউটর একেএম সাইফুল ইসলাম ও নূরজাহান বেগম মুক্তা। ২০১২ সালের ১৫ জুলাই থেকে ২০১৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) আব্দুর রাজ্জাক খানসহ রাষ্ট্রপক্ষের মোট ১৮ জন সাক্ষী সাক্ষ্য প্রদান করেন। অন্যদিকে কামারুজ্জামানের পক্ষে ২০১৩ সালের ৬ থেকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত মোট ৫জন সাফাই সাক্ষী সাক্ষ্য দেন। ২০১৩ সালের ২৪ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত এবং ১৬ এপ্রিল ৫ কার্যদিবসে রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে। অন্যদিকে ৩ থেকে ১৬ এপ্রিল ৪ কার্যদিবসে আসামিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে। ২০১৩ সালের ১৬ এপ্রিল বিচারিক কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ায় রায় ঘোষণা অপেক্ষমাণ রাখেন ট্রাইব্যুনাল। ৯ মে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে কামারুজ্জামানকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ-াদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-২। আপীল মামলার কার্যক্রম ॥ ট্রাইব্যুনালের ফাঁসির আদেশ থেকে খালাস চেয়ে ওই রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ৬ জুন আপীল বিভাগে আপীল করেন কামারুজ্জামান। তবে সর্বোচ্চ সাজা হওয়ায় কামারুজ্জামানের দ-ের বিরুদ্ধে আপীল করেনি রাষ্ট্রপক্ষ। ১২৪টি যুক্তিতে আপীল করে আসামিপক্ষ। তাদের মূল আবেদন ১০৫ পৃষ্ঠার। আর এর সঙ্গে দুই হাজার পাঁচ শ’ ৬৪ পৃষ্ঠার আনুষঙ্গিক কাগজপত্র জমা দেয়া হয়। ২০১৩ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর আপীলের সার-সংক্ষেপ জমা দেয় আসামিপক্ষ। সে সময়কার প্রধান বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হোসেন নিজে এ আপীল মামলার শুনানিতে না থেকে আপীল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি (বর্তমান প্রধান বিচারপতি) এস কে সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের পৃথক আপীল বেঞ্চ গঠন করে দেন। বেঞ্চের অন্য তিন সদস্য হলেন- বিচারপতি আব্দুল ওয়াহ্হাব মিয়া, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। এ বেঞ্চে গত বছরের ৫ জুন থেকে আপীল শুনানি শুরু হয়। ওই দিন থেকে মোট ১৭ কার্যদিবসে আপীল শুনানি শেষ হয়। এরমধ্যে গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ও ১৭ সেপ্টেম্বর ১৫ কার্যদিবসে আসামিপক্ষে শুনানি করেন কামারুজ্জামানের প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহাবুব হোসেন, এসএম শাহজাহান ও এ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম। অন্যদিকে গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রপক্ষে চার কার্যদিবস শুনানি করেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। আপীল শুনানি শেষ হওয়ায় গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর আপীল মামলাটির রায় অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখে আপীল বিভাগ। পরে ৩ নবেম্বর কামারুজ্জামানকে ট্রাইব্যুনাল-২ এর দেয়া মৃত্যুদ-াদেশ বহাল রেখে চূড়ান্ত রায় সংক্ষিপ্ত আকারে দিয়েছিল আপীল বিভাগ। এরপর গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কামারুজ্জামানের এ ফাঁসির রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করে সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ। ওই দিন দুপুরে চার বিচারপতি রায়ে স্বাক্ষর দেয়া শেষ করলে ৫৭৭ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশ করা হয়। লাল কাপড়ে মোড়ানো মৃত্যু পরোয়ানা ॥ পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর গত ১৯ ফেব্রুয়ারি রাতেই আপীল বিভাগ থেকে ফাঁসির রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি পৌঁছে দেয়া হয় বিচারিক আদালত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। একই সঙ্গে পাঠানো হয় ট্রাইব্যুনালের রায় ও অন্যান্য ডকুমেন্ট, যেগুলো আপীল শুনানির জন্য পাঠানো হয়েছিল আপীল বিভাগে। ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার মোস্তাফিজুর রহমান পূর্ণাঙ্গ রায় গ্রহণ করে মৃত্যু পরোয়ানা জারির প্রক্রিয়া শুরু করেন। পরদিন ১৯ ফেব্রুয়ারি চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানসহ ট্রাইব্যুনাল-২ এর তিন বিচারপতি মৃত্যু পরোয়ানায় স্বাক্ষর করেন। অন্য দুই বিচারপতি হলেনÑ বিচারপতি মোঃ মুজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি শাহীনুর ইসলাম। পরে ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার মোস্তাফিজুর রহমান মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন। এরপর লাল কাপড়ে মোড়ানো মৃত্যু পরোয়ানা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়। মৃত্যু পরোয়ানার সঙ্গে আপীল মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপিও পাঠায় ট্রাইব্যুনাল। কারাগারে পৌঁছানোর পর কামারুজ্জামানকে মৃত্যু পরোয়ানা পড়ে শোনানো হয়। তিনি আইনজীবীর সঙ্গে আলাপ করে রিভিউ আবেদন করার সিদ্ধান্ত নেন। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের কপিটি আইজিপির (প্রিজন) বরাবর পাঠানো হয়। এছাড়াও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পাঠানো হয় মৃত্যু পরোয়ানার অনুলিপি। রিভিউ মামলার কার্যক্রম ॥ আইন অনুসারে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের দিন থেকে রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করার জন্য ১৫ দিনের সময় পায় আসামিপক্ষ। সে অনুসারে গত ৫ মার্চ আপীল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিভিউ আবেদন দাখিল করেন কামারুজ্জামানের আইনজীবীরা। পরে সুপ্রীমকোর্টের চেম্বার বিচারপতির আদালতে শুনানির দিন ধার্যের আবেদন জানান এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এ আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ৮ মার্চ চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী রিভিউ আবেদনটি শুনানির জন্য পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন। মোট ৭০৫ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদনে ৪৪টি যুক্তি দেখিয়ে কামারুজ্জামানের ফাঁসির আদেশ বাতিল ও তাঁর খালাস চায় আসামিপক্ষ। আসামিপক্ষের সময়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে দু’দফায় পিছিয়েছে শুনানির দিন। অবশেষে গত রবিবার ৫ এপ্রিল সকালে শুনানি শেষ হলে ৬ এপ্রিল সোমবার রায়ের দিন ধার্য করে সর্বোচ্চ আদালত। আসামিপক্ষে কামারুজ্জামানের প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন এবং রাষ্ট্রপক্ষে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম শুনানি করেন। সোমবারের রায়ে আপীল বিভাগ রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেয়ায় কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় চূড়ান্তভাবে বহাল রয়েছে। আজ সকাল এগারোটায় আইনজীবীদের সঙ্গে সাক্ষাত শেষে ফাঁসি কার্যকরের আগে পরিবারের সঙ্গে শেষ সাক্ষাতের সুযোগ পাবেন একাত্তরের কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কামারুজ্জামান। কারাসূত্র জানায়, জেলকোড অনুযায়ী পরিবারের সঙ্গে শেষ সাক্ষাতের বিষয়টি নির্ভর করছে কামারুজ্জামান রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি না তার ওপর। প্রাণভিক্ষা না চাইলে আজই কারা কর্তৃপক্ষ কামারুজ্জামানের সিদ্ধান্ত জানিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেবেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কারা কর্তৃপক্ষকে ঐ চিঠির প্রেক্ষিতে ফাঁসি কার্যকরের জন্য নির্দেশ প্রদান করবে। এরপর কারা কর্তৃপক্ষ কামারুজ্জামানের পরিবারকে শেষ সাক্ষাতের জন্য বাহক মারফত চিঠি প্রদান করবেন। আর এ সাক্ষাতের পর ফাঁসি কার্যকরে আইনত আর কোন বাধা থাকবে না। তবে প্রাণভিক্ষার সিদ্ধান্তের এসব কিছুই আজকের মধ্যেই সম্পন্ন করতে কর্তৃপক্ষ এ জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও সম্পন্ন করে রেখেছেন বলে জানা গেছে। কারাসূত্র জানায়, প্রথা অনুযায়ী প্রতিটি ফাঁসির আসামিকে নিম্ন ও উচ্চ আদালতের ফাঁসির রায়ের পর কারা কর্তৃপক্ষ সে আসামির পরিবারকে আসামির সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য কারা কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে জানানো হয়। এরই অংশ হিসেবে সোমবার কামারুজ্জানের পরিবারকে তার সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ দেয়া হয়। এদিকে গণভবন সূত্রে জানা গেছে, বুধবার রাতে দলের শীর্ষ আইনজীবীরা সাক্ষাত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে। গণভবনে অনেক রাতে দলসমর্থিত আইনজীবীরা কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর বিষয়ে সর্বশেষ আইনগত অবস্থান নিয়ে কথা বলেন। সূত্র জানায়, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী সাফ জানিয়ে দেন, সকল আইন মেনেই যেন আদালতের রায় কার্যকর করা হয়। কোনভাবেই যেন আইনের ব্যত্যয় না ঘটে। অনানুষ্ঠানিক এ বৈঠকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু, সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামসহ সিনিয়র আইনজীবিগণ উপস্থিত ছিলেন।
×