ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

ব্যবসায়ী নেতাদের স্বতঃস্ফূর্ত প্রস্তুতি

প্রকাশিত: ০৪:২৭, ৯ এপ্রিল ২০১৫

ব্যবসায়ী নেতাদের স্বতঃস্ফূর্ত প্রস্তুতি

এম শাহজাহান ॥ মেয়র নির্বাচনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের পার্লামেন্ট খ্যাত এফবিসিসিআই নির্বাচন জমে উঠেছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থী ব্যবসায়ী নেতারা স্বতঃস্ফূতভাবে পরিচালক পদে নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিয়েছেন। পূর্ণাঙ্গ দুটি প্যানেল দেয়ার লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছেন আবদুল মাতলুব আহমাদ এবং মনোয়ারা হাকিম আলী। দু’জনই সভাপতি প্রার্থী। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অতি আস্থাভাজন হিসেবেও দু’জনের বেশ পরিচিাত রয়েছে। তাই এই দুই প্রার্থীকে সামনে রেখেই এবার এফবিসিসিআইয়ের ভোট লড়াই শুরু হচ্ছে। চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীলতায় ফিরিয়ে এনে দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয়ে শুরু হচ্ছে এই নির্বাচন। এ কারণে এবারের নির্বাচনে দুটি প্যানেল থেকে পরিচালক পদে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিএনপিপন্থী ব্যবসায়ী নেতাদের অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়ে নির্বাচনী মাঠে নিয়ে আসা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, আগামী ২৩ মে এফবিসিসিআইয়ের ২০১৫-১৭ মেয়াদের কার্যকরী পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বর্তমান কমিটির মেয়াদ আর একদিনও বাড়ানো হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এছাড়া কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিটির অধিকাংশ সদস্য আর সময় বাড়ানোর পক্ষে নয়। এ কারণে সময় বাড়ানোর জন্য নির্বাচন বোর্ডে কোন আবেদন করা হয়নি। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। সিডিউল অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক এটাই আমার প্রত্যাশা। এ কারণে বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের পক্ষ থেকে সময় বাড়ানোর আবেদন করা হয়নি। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে দেশের তিন সিটিতে মেয়র নির্বাচন জমে উঠেছে। এফবিসিসিআই নির্বাচনের ফলে ব্যবসায়ীদের মধ্যেও উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। তিনি বলেন, দু’বছরে অনেক কাজ করেছি। এত রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও দেশের অর্থনীতি ভাল অবস্থায় আছে। আরও ভাল হবে যদি রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল হয়। বিএনপির শুভ বুদ্ধির উদয় হয়েছে। তারা সহিংসতা থেকে ফিরে এসে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। তিনি বলেন, যারা নাশকতা ও সহিংসতা করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটবে তাদের বিপক্ষে অবস্থান নেবে এফবিসিসিআই এটাই আগামী কমিটির কাছে প্রত্যাশা থাকবে। এদিকে, নির্বাচন বোর্ড কর্তৃক ঘোষিত সিডিউল অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি এগিয়ে চলছে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ২৩ মে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ লক্ষ্যে গত ৩০ মার্চ প্রাথমিক ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এতে চেম্বার ও এ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে মোট ২ হাজার ১৯৩ জনকে প্রাথমিকভাবে ভোটার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭৮টি চেম্বার থেকে ৪৩০ জন এবং ৩৫৫টি এ্যাসোসিয়েশন থেকে ১ হাজার ৭৬৩ জনকে ভোটার করা হয়েছে। এবার চেম্বার ও এ্যাসোসিয়েশন গ্রুপে ১৬টি করে মোট ৩২টি পদে সরাসরি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সর্বমোট ৫২ জন পরিচালক নিয়ে এফবিসিসিআইয়ের বোর্ড গঠন হবে। এর মধ্যে ৩২ জন পরিচালক সরাসরি নির্বাচন করবেন। বাকি ২০ জন পরিচালক দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ চেম্বার ও এ্যাসোসিয়েশন থেকে মনোনীত হয়ে আসবেন। এফবিসিসিআইর পরিচালক পদে সম্ভাব্য প্রার্থীরা দুই প্যানেল নেতার সঙ্গে নানাভাবে যোগাযোগ শুরু করেছেন। নিটল-নিলয় গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুল মাতলুব আহমাদ নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে তাঁর অফিসেও নিয়মিত বৈঠক করছেন বলে জানা গেছে। বসে নেই ইন্ট্রাকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান ও এফবিসিসিআইয়ের বর্তমান প্রথম সহ-সভাপতি মনোয়ারা হাকিম আলী। এফবিসিসিআইতে নিয়মিত অফিস করার পাশাপাশি নিজ অফিস গুলশান কার্যালয়েও নির্বাচানী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেন, আমি পুরোপুরিভাবে নিজেকে নির্বাচনী মাঠে রেখেছি। সভাপতি হতে পারলে আগামী দু’বছর শুধু দেশের ব্যবসাবাণিজ্য ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজ করব। শুধু তাই নয়, যারা আমার প্যানেল থেকে নির্বাচন করছে তাদেরও এ বিষয়ে ইন্টারভিউ নিচ্ছি। কেন তাঁরা পরিচালক হতে চান এবং নিজ ব্যবসার পাশাপাশি সংগঠনে সময় দিতে প্রস্তুত কি না? তিনি বলেন, পৃথিবীর ফ্যাক্টরি হচ্ছে বাংলাদেশ। আমি সারা বিশ্বের বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে নিয়ে আসতে চাই। দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে চাই। তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ী উন্নয়ন পরিষদের’ ব্যানারে আমার প্যানেল থেকে নির্বাচন করা হবে। তাই আমরা প্রথম কাজই হচ্ছে ব্যবসাবাণিজ্যের উন্নয়ন। এদিকে, আজ মনোয়ারা হাকিম আলী আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছেন। ওই দিন তাঁর ব্যানারের নাম ঘোষণা করা হবে। তবে কৌশলগত কারণে পূর্ণাঙ্গ প্যানেলের নাম ঘোষণা করবেন মাতলুব আহমাদের প্যানেল ঘোষণার পর। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা সব সময় অর্থনৈতিক উন্নয়ন চায়। এ লক্ষ্যেই নির্বাচন। আমার নেতৃত্বে চেম্বার ও এ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে দুটি পূর্ণাঙ্গ প্যানেল দেয়ার সম্পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। যথাসময়ে প্যানেল পরিচিতি অনুষ্ঠান করা হবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী একজন নারী, তাই এফবিসিসিআইয়ের মতো একটি সংগঠনেও নারী নেতৃত্ব আসতে পারে বলে অনেকে উৎসাহ দিচ্ছেন। আমি সকলকে সঙ্গে নিয়েই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব। জানা গেছে, আবদুল মাতলুব আহমাদ এবার রাজশাহী চেম্বার থেকে মনোনীত পরিচালক হয়েছেন। তাই তাঁকে সরাসরি নির্বাচন করতে হবে না। কিন্তু মনোয়ারা হাকিম আলীকে ভোটারদের ভোটে সরাসরি নির্বাচিত হতে হবে। এদিক দিয়ে কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছেন আবদুল মাতলুব আহমদ। আর পুরুষদের পাশাপাশি নারী ভোটারদের সমর্থনে এগিয়ে রয়েছেন মনোয়ারা হাকিম আলী। ফলে এই দুই প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাডি লড়াই হবে বলে মনে করছেন সাধারণ ভোটাররা। নির্বাচনে প্রার্থী হতে মাঠে রয়েছেন জনতা ব্যাংকের পরিচালক আবু নাসের। তিনি বলেন, একটি শক্তিশালী এফবিসিসিআই গড়তে ভোট যুদ্ধে অংশগ্রহণ। তাই প্যানেল মুখ্য নয়, নির্বাচনের লড়াইটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। একইভাবে এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক আলহাজ বজলুর রহমান এবার সহসভাপতি পদে প্রার্থী হতে আগে-ভাগে কাজ শুরু করেছেন। তিনি বলেন, জয়ী হতে পারলে দেশের চেম্বারগুলোকে শক্তিশালী করা হবে। পরিচালক প্রার্থী এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে। পরিচালক হতে পারলে নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতে ভূমিকা রাখব। এছাড়া রফতানি বাণিজ্যের বাধাগুলো অপসারণে কাজ করা হবে। যারা প্রার্থী হতে চান ॥ চট্টগ্রাম উইমেন চেম্বার থেকে মনোয়ার হাকিম আলী, বগুড়া চেম্বারের মমতাজ উদ্দিন, সাতক্ষীরার আবুল কাশেম আহমদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আব্দুল ওয়াহেদ, ফেনীর শাহেদ রেজা শিমুল, কুড়িগ্রামের কামাল উদ্দিন আহমদ, রাজবাড়ীর নজিবুর রহমান, লক্ষ্মীপুরের দেওয়ান সুলতান আহমদ, নেত্রকোনার নাগিবুল ইসলাম দিপু, ভৈরবের বজলুর রহমান, নরসিংদীর প্রবীর কুমার সাহা, মুন্সীগঞ্জের কহিনুর ইসলাম, ময়মনসিংহের আমিনুল হক শামীম, গাজীপুরের আনোয়ার সাদ’ত সরকার, মাদারীপুরের জালাল উদ্দিন ইয়ামীন, ফরিদপুরের মিজানুর রহমান, সুনামগঞ্জের নুরল হক মুকুট, নওগাঁর মোহাম্মদ আলী দ্বীন, নীলফামারীর আবদুল ওয়াহেদ সরকার, মানিকগঞ্জের তোবারক তোসাদ্দেক হোসেন টিটু, সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার থেকে হাসিনুর রহমান, কিশোরগঞ্জ চেম্বার থেকে গোলাম শাহারিয়ার গাজী, সিলেট উইমেন চেম্বার থেকে মানতাশা ইসলাম, চাঁদপুর চেম্বার থেকে জাহাঙ্গীর আকন্দ সেলিম, গাইবান্ধার মোঃ মোরসালিন, জয়পুরহাটের আমিনুল বারী, সিরাজগঞ্জের ফারিতা মোশাররফ মিতু, বরিশাল মেট্রোপলিটন চেম্বার থেকে মীর নিজাম উদ্দিন, নাটোর চেম্বার থেকে আমিনুল হক, কুষ্টিয়ার বিজয় কেজরিওয়াল, চুয়াডাঙ্গার দিলীপ কেজরিওয়াল, শেরপুরের মাসুদুর রহমান, নেত্রকোনার আহমেদ খান মোমেন পাঠান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তানজিল আহমেদ এবং কুমিল্লা চেম্বারের ইমরান পারভেজ।
×