ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংশ্লিষ্টরা উদ্বিগ্ন

ইউনাইটেড পাওয়ারে ভারসাম্য হারাচ্ছে পুঁজিবাজার

প্রকাশিত: ০৪:১৩, ৯ এপ্রিল ২০১৫

ইউনাইটেড পাওয়ারে ভারসাম্য হারাচ্ছে পুঁজিবাজার

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ তালিকাভুক্ত ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন এ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির লেনদেনে ভারসাম্য হারাচ্ছে পুজিবাজার। যার কারণে অস্বাভাবিক লেনদেনে কিছুটা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনসহ (বিএসইসি) বাজার সংশ্লিষ্টরা। লেনদেন শুরুর দিন রবিবার থেকেই বাজার কিছুটা অস্বাভাবিক আচরণ করছে। বিষয়টিকে বাজারের জন্য মোটেও স্বাস্থ্যকর মনে করছেন না নীতিনির্ধারকরা। বাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএসইসি কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। এখানে কোন অস্বাভাবিকতা আছে কি-না, কেউ কারসাজির চেষ্টা করছে কি-না তা বিশেষভাবে নজরে রাখার চেষ্টা করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। উল্লেখ্য, লেনদেন শুরুর চতুর্থ দিনের মাথায় ইউনাইটেড পাওয়ারের শেয়ারের দাম তার ইস্যু মূল্যের (আইপিওতে বিক্রি মূল্য) দ্বিগুণ ছাড়িয়ে গেছে। বুধবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) এ শেয়ারটি লেনদেনের শীর্ষে অবস্থান করে। দিনটিতে মোট ৩৯ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। সমন্বয় শেষে প্রতিটি শেয়ারের দর দাঁড়িয়েছে ১৫৩ দশমিক ৬০ টাকা। বিশ্লেষকদের মতে, বাজারে নতুন ফান্ড তেমন আসছে না। বিদ্যমান বিনিয়োগকারীরা হাতে থাকা এক কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করে অন্য কোম্পানির শেয়ার কিনছেন। গত তিন দিনে এদের একটি অংশ যে কোন মূল্যে হাতের শেয়ার বেচে ইউনাইটেড পাওয়ারের শেয়ার কেনার জন্য মরিয়া হয়ে উঠায় বাজারে অন্যান্য শেয়ার বিক্রির চাপ বেড়ে যায়। তাতে ওই সব কোম্পানি শেয়ারের দর হারায়। এর কিছুদিন আগে শাহজিবাজার পাওয়ার কোম্পানির ক্ষেত্রে এমনটি ঘটেছিল। তখনও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ যে কোন মূল্যে হাতের শেয়ার বিক্রি করে শাহজিবাজারের শেয়ার কেনার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। তাতে ভারসাম্য হারাতে থাকে বাজার। নানামুখী ব্যবস্থা নেয়ার পরও কাজ না হওয়ায় বিএসইসি কোম্পানিটির লেনদেন স্পট মার্কেটে নিয়ে যেতে বাধ্য হয়। একই সঙ্গে শেয়ারটিকে মার্জিনঋণের অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। এদিকে, শেয়ারটির মূল্য বৃদ্ধির ধারায় খোদ কোম্পানি কর্তৃপক্ষও কিছুটা অস্বস্তিতে আছে বলে জানা গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কোম্পানির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেছেন, শেয়ারটির বর্তমান দামকে তারা কোম্পানির মৌলভিত্তির সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ মনে করছেন না। তবে তাঁরা আশা করছিলেন, মূল্য বাড়লেও তা পর্যায়ক্রমে সময় নিয়ে বাড়বে। এমন রাতারাতি নয়। কোম্পানির পারফরম্যান্সের আলোকে শেয়ারের দাম বাড়বে বা কমবে। বেশি বেড়ে মূল্য সংশোধন হলে তা কোম্পানির ভাবমূর্তিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। অতীতে খুলনা পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (কেপিসিএল) শেয়ার লেনদেন নিয়ে অস্বাভাবিকতার কারণে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয় দেশের অন্যতম শীর্ষ এ শিল্পগোষ্ঠীকে। ভূমি দখল, খেলাপী ঋণ বা ওই জাতীয় কোন কেলেঙ্কারি না থাকায় ইউনাইটেড গ্রুপের ভাবমূর্তি তুলনামূলক স্বচ্ছ। উল্লেখ, ২০১০ সালের এপ্রিল মাসে সরাসরি তালিকাভুক্তির মাধ্যমে বাজারে আসে কেপিসিএল। নানা সমালোচনার মুখে বিএসইসি এর আগে বেসরকারী কোম্পানিগুলোর জন্য সরাসরি তালিকাভুক্তি পদ্ধতি বন্ধ করে দিলেও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে বিশেষ সুযোগ দেয়া হয় কোম্পানিটিকে। কোম্পানির দুই উদ্যোক্তা সামিট গ্রুপ ও ইউনাইটেড গ্রুপের মালিকরা বাজারে ৫ কোটি ২০ লাখ শেয়ার বিক্রি করেন। বেশিরভাগ শেয়ার বিক্রি হয় ৩০০ টাকার উপরে। অথচ তখন শেয়ারটির ইপিএস (শেয়ারপ্রতি আয়) ছিল মাত্র ২ টাকা ৬৯ পয়সা। বুধবার কেপিসিএলের শেয়ারের দাম ছিল ৫৮ টাকা। চার বছরেরও বেশি সময় পর প্রথম কোম্পানি হিসেবে সম্প্রতি বুকবিল্ডিং পদ্ধতিতে বাজারে আসে ইউনাইটেড পাওয়ার। আইপিওতে কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করা হয় ৭২ টাকা দরে। গত রবিবার দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জে একযোগে ইউনাইটেড পাওয়ারের লেনদেন শুরু হয়। এদিন শেয়ারটির দাম বেড়ে হয় ১৪০ টাকা।
×