ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আমতলী আদালতে মায়ের আকুতি

‘মোর পোলাডারে মুই ফিররা পাইতে চাই’

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ৯ এপ্রিল ২০১৫

‘মোর পোলাডারে মুই ফিররা পাইতে চাই’

নিজস্ব সংবাদদাতা, আমতলী, বরগুনা, ৮ এপ্রিল ॥ পুত্রবধূ নাজমা বেগমের (১৮) বরগুনা নারী শিশু নির্যাতন আদালতের মামলায় শাশুড়ি জাহানারা বেগমকে (৫০) আমতলী থানা পুলিশ গ্রেফতার করেছে। পুলিশ বুধবার শাশুড়িকে আমতলী জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করেন। ওই সময় তার কোলে ছিল তিন বছরের শিশু নাতি রাফসান। রাফসানের মা নাজমা বেগম সন্তানকে ফিরে পেতে আদালতে হাজির হয়। আদালত প্রাঙ্গণে তার কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। অবশেষে বিচারক বৈজয়ন্তী বিশ্বাস শিশু রাফসানকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেয় এবং দাদীকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। জানা গেছে, বরগুনা জেলার আমতলী উপজেলার চাওড়া ইউনিয়নের ঘটখালী গ্রামের রাজ্জাক মোল্লার ছেলে রাসেল মোল্লার সঙ্গে ৪ বছর পূর্বে নাজমার বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে তাদের দাম্পত্য জীবন ভালই চলছিল। তাদের কোলে আসে শিশু রাফসান। এক বছর পূর্বে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। এতে স্বামী রাসেল তার পুত্র রাফসানকে রেখে স্ত্রী নাজমাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয় এবং দ্বিতীয় বিয়ে করে। এ ঘটনায় ওই বছরই নাজমা বরগুনা নারী ও শিশু নির্যাতন আদালতে স্বামী, শাশুড়ি ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরওয়ানা জারি হয়। বুধবার সকালে আমতলী থানা পুলিশ ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি জাহানারা বেগমকে গ্রেফতার করে। ওইদিন দুপুরে পুলিশ জাহানারা বেগমকে যখন আদালতে নিয়ে আসে তখন তার কোলে ছিল শিশু নাতি রাফসান। জাহানারা বেগম জানান, রাফসানকে আমি লালন পালন করছি। আমার নাতি আমার সঙ্গেই থাকবে। অপরদিকে নাজমা বেগম খবর পায় শিশু রাফসানকে নিয়ে তার শাশুড়ি আদালতে গেছে। সে তার সন্তানকে ফিরে পেতে ছুটে আসেন আদালতে। আদালত প্রাঙ্গণে এসে নাজমা কান্নাকাটি শুরু করে। নাজমা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, মুই আর কিছু চাই না মুই মোর পোলাডারে ফিররা পাইতে চাই। এক বছর আগে মোর বাচ্চা পোলাডারে রাইখ্যা ওরা মোরে তাড়াইয়্যা দেছে, এহন মোর পোলাডারে কোর্টে লইয়্যা যাইবে হ্যাইয়া মুই অইতে দিমু না। আইজ কতদিন অইলো মুই মোর পোলাডারে দেহি নাই। তার আকুতিতে আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে উঠে। এ সময় বিচারক এজলাসে বিচারকার্য পরিচালনা করছিলেন। দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে জাহানারা বেগমকে নাতি রাফসানসহ আদালতে হাজির করা হয়। মা নাজমা তার সন্তানকে ফিরে পেতে আদালতে আবেদন করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল আদালতের বিচারক বৈজয়ন্তী বিশ্বাস শিশু রাফসানকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেয় এবং শাশুড়ি জাহানারা বেগমের জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠিয়ে দেয়ার আদেশ দিয়েছেন।
×