ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রবাসীদের কষ্ট

প্রকাশিত: ০৩:৪৮, ৯ এপ্রিল ২০১৫

প্রবাসীদের কষ্ট

দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখা ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশী প্রবাসীরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। অথচ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বাংলাদেশী প্রবাসী অনেকেই নানাভাবে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে, এসব দেশে শ্রমিকদের ওপর নানা ধরনের নিপীড়ন চলে। মাসের পর মাস বেতন আটকে রাখে মালিকরা। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে দূতাবাসের কর্মকর্তারা তেমন কোন ভূমিকা রাখছে না। এমন অভিযোগও রয়েছে, বাংলাদেশের কোন কোন দূতাবাসে টাকা ছাড়া কোন কাজ হয় না। সাহায্য চাইলে অনেক ক্ষেত্রে শ্রমিকদের নাজেহাল হতে হয়। মালয়েশিয়াসহ কয়েকটি দূতাবাস থেকে শ্রমিকদের পাসপোর্ট চুরির ঘটনাও ঘটেছে। কোন কোন দেশের দূতাবাস কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিদেশীদের যৌন হয়রানিসহ নানা অপরাধমূলক কাজ করার অভিযোগ রয়েছে। বলা যায়, বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোর দায়িত্বহীনতার কারণে প্রবাসী বাংলাদেশীদের দুর্ভোগ আরও দীর্ঘতর হচ্ছে। পদে পদে এরা বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন। বিদেশ যাওয়া থেকে শুরু করে বিদেশে অবস্থান, প্রায় প্রতিটি প্রক্রিয়ায় নানামুখী হয়রানির মুখে পড়তে হয় প্রবাসীদের। অথচ এসব সমস্যা লাঘবে প্রায় প্রত্যেক দেশেই রয়েছে দূতাবাস ও হাইকমিশন। সেখানে রয়েছে রাষ্ট্রের বেতনভোগী কর্মকর্তা-কর্মচারী। প্রশ্ন হচ্ছে, তাঁরা করছেন কি? তাঁদের কাছে নিজ দেশে নাগরিকদের সুযোগ-সুবিধা নয়, নিজেদের আখের গোছানোই যেন মূল কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে প্রবাসীদের সংকট সমস্যা সমাধানে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কার্যত কোন ভূমিকা রাখা যাচ্ছে না। অথচ সমস্যাগুলো দূর করতে পারলে বিদেশে বাংলাদেশীদের কর্মসংস্থান এবং তাঁদের পাঠানো রেমিটেন্সের পরিমাণ আরও বাড়ার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব মতে, দেশের জিডিপিতে বৈদেশিক আয়ের অবদান শতকরা ১০ ভাগের বেশি। গত ক’বছর আগেও এই অবদান ছিল মাত্র ৫ ভাগ। বৈদেশিক আয়ের প্রবাহ জিডিপির ১১ ভাগ ছাড়িয়েছে, যা এশিয়ার অন্য যে কোন দেশের চেয়ে অনেক বেশি। বিশ্বব্যাংকের তথ্য মতে, এশিয়ার অন্য দেশগুলোতে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের পরিমাণ মোট জিডিপির ৭ শতাংশ। এ কথা সত্য যে, সরকারের নানামুখী প্রচেষ্টায় দেশের শ্রমবাজার বেশ চাঙ্গা। নতুন শ্রমবাজার সৃষ্টি, প্রবাসে অবৈধভাবে অবস্থানকারীদের বৈধ করার সুযোগসহ অভিবাসীদের নানা সুবিধার দ্বার উন্মুক্ত হয়েছে। কিন্তু দূতাবাসের সহযোগিতা এবং সেবা পাওয়ার বিষয়টি যেন ক্রমশ দুরূহ হয়ে উঠছে। সম্প্রতি ইয়েমেন, ইরাক, সৌদি আরব, সিরিয়া, লিবিয়াসহ কয়েকটি দেশে অস্থিরতা চলছে। লিবিয়ায় দু’জন বাংলাদেশী আইএস জঙ্গীদের হাতে অপহরণ, পরে মুক্তির ঘটনায় প্রবাসী বাংলাদেশীরা বেশ উদ্বিগ্ন ও শঙ্কিত। অনেকে দেশে ফেরার চেষ্টা করেও আসার সুযোগ বা সহযোগিতা পাচ্ছেন না। সবচেয়ে সমস্যায় আছে ইয়েমেনে অবস্থান প্রায় ১০ হাজার বাংলাদেশী। সেখানে বাংলাদেশের কোন দূতাবাস নেই। ভারত-পাকিস্তানসহ এশিয়ার অন্যান্য দেশ তাদের নাগরিকদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করলেও আমরা সেই প্রচেষ্টা থেকে দূরে। ইয়েমেনের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে আমাদের দূতাবাস রয়েছে তারা এই ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে পারে। এটা এখন প্রকাশ্য অভিযোগ যে, বাংলাদেশের অনেক দূতাবাসের দায়িত্বপালনে অবহেলার কারণে শ্রমবাজার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যেসব অভিযোগ উঠেছে তা আমলে নিতে হবে। দূতাবাসগুলোকে আরও দায়িত্বশীল ও তৎপর হতে হবে। নইলে বিদেশে প্রবাসী বাংলাদেশীরা আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাদের দুর্ভোগ লাঘবে দূতাবাসগুলো আরও দায়িত্ববান হবে- এটা সবার প্রত্যাশা।
×