ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আজ আপীল বিভাগে সাকা, মুজাহিদের মামলার শুনানি

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ৮ এপ্রিল ২০১৫

আজ আপীল বিভাগে সাকা, মুজাহিদের মামলার শুনানি

বিকাশ দত্ত ॥ ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল নিষ্পত্তিতে এবার জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর পালা। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াত নেতা মোহাম্মদ কামারুজ্জামানকে ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদ- বহাল রেখে সুপ্রীমকোর্টের দেয়া রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন সুপ্রীমকোর্ট। এখন কামারুজ্জামানের মৃত্যুদ- কার্যকর করা সময়ের ব্যাপার। এর আগে আরও দুটি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লা ও নায়েবে আমির দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী। বর্তমানে আপিল বিভাগে ৮টি মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। মঙ্গলবার মুজাহিদ ও সাকার মামলাটি কার্যতালিকায় থাকলেও শুনানি হয়নি। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা (এসকে সিনহা)র নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে এ দুইটি মামলা আজ বুধবার কার্যতালিকায় রয়েছে। আপিল বিভাগের অন্য বিচারপতিদের মধ্যে রয়েছেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসানের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, লুণ্ঠন, অপহরণ, দেশত্যাগে বাধ্য করা ও অগ্নিসংযোগের দায়ে সাতটি অভিযোগের মধ্যে ৫টি প্রমাণিত হওয়ায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- প্রদান করেন। সাত অভিযোগের পাঁচটি ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে ট্রাইব্যুনালের রায়ে। মধ্যে সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনসহ বুদ্ধিজীবী হত্যা এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর বর্বর হত্যা-নির্যাতনের দায়ে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মুজাহিদের মৃত্যুদ- কার্যকর করার আদেশ প্রদান করেন ট্রাইব্যুনাল। সাতটি অভিযোগের মধ্যে ২টি অভিযোগ (২ ও ৪) প্রমাণিত না হওয়ায় অভিযোগের দায় থেকে মুজাহিদকে খালাস দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে ৫টি অভিযোগ (১, ৩, ৫, ৬ ও ৭) সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল তাকে ৩নং অভিযোগ ৫ বছর ও ৫নং অভিযোগ যাবজ্জীবন কারাদ- প্রদান করেছে। ৬ ও ৭নং অভিযোগে মুজাহিদকে মৃত্যুদ- প্রদান করা হয়েছে। ১নং অভিযোগটি ৬নং অভিযোগের সঙ্গে একীভূত করায় ১নং অভিযোগে পৃথক কোন দ- দেয়া হয়নি। আসামি পক্ষ এ রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ১১ আগস্ট আপিল করেন। অন্যদিকে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর মৃত্যুদ- প্রদান করেন। তার বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ, নির্যাতন জোর করে ধর্মান্তরিত করাসহ ২৩ অভিযোগের মধ্যে ৯টি অভিযোগ প্রমাণিত হয়। এর মধ্যে চারটি চার্জ ৩, ৫, ৬ ও ৮ নম্বর অভিযোগে হত্যা ও গণহত্যার দায়ে সাকা চৌধুরীকে মৃত্যুদ- দেয়া হয়। ১৭ ও ১৮ নম্বর অভিযোগে অপহরণ ও নির্যাতনের দায়ে ৫ বছর করে ১০ বছর কারাদ-। ২, ৪ ও ৭ নম্বর অভিযোগে হত্যা, গণহত্যা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও দেশান্তরে বাধ্য করার মতো অপরাধে জড়িত থাকা এবং এর পরিকল্পনা করার দায়ে ২০ বছর করে ৬০ বছর কারাদ- দেয়া হয়েছে। আর প্রমাণিত অপহরণ ও নির্যাতনসংক্রান্ত অভিযোগে আনা হয়েছে, ১৭ নম্বর অভিযোগে নিজাম উদ্দিন আহম্মেদকে অপহরণ ও নির্যাতন, ১৮ নম্বর অভিযোগে সালেহ উদ্দিন আহমেদকে অপহরণ ও নির্যাতন। আর এ দুই অভিযোগে সাকাকে দেয়া হয়েছে ৫ বছরের সশ্রম কারাদ-। ২, ৪ ও ৭ নম্বর অভিযোগে তাঁকে দেয়া হয়েছে ২০ বছরের কারাদ-। আর যে সব অভিযোগ থেকে তাঁকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে সেগুলো হলো ১, ১০, ১১, ১২, ১৪, ১৯, ২০ ও ২৩ নম্বর অভিযোগ। এ ছাড়াও যে অভিযোগগুলো নিয়ে আদালত কিছু বলেনি সেগুলো হলো ৯, ১৩, ১৫, ১৬, ২১ ও ২২ নম্বর অভিযোগ। মৃত্যুদ-ের বিরুদ্ধে সাকা ২০১৩ সালের ২৯ অক্টোবর সুপ্রীমকোর্টে আপীল করেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মানবতাবিরোধী অপরাধের ১৭টি মামলার ১৮ জনের বিরুদ্ধে দ- প্রদান করেছেন। এর মধ্যে ১৪ জনকে মৃত্যুদ-, একজনকে যাবজ্জীবন, একজনকে ৯০ বছরের কারাদ- এবং দুই জনকে আমৃত্যু করাদ- প্রদান করেছেন। পরবর্তীতে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদ- প্রদান দিলেও পরে সুপ্রীমকোর্টের আপিল বিভাগ তাকে মৃত্যুদ- প্রদান করেন। তার দ- কার্যকর করা হয়েছে। জামায়াতের নায়েবে আমির দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীকে ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদ- প্রদান করলেও পরবর্তীতে আপিল নিষ্পত্তিতে তাকে মৃত্যুদ- কমিয়ে আমৃত্যু করাদ- প্রদান করা হয়। মুজাহিদ-সাকা ছাড়াও বর্তমানে আরও ৬ জন ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদ-ের বিরুদ্ধে আপীল করেছেন। যারা আপীল করেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, জামায়াতের নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর কাশেম আলী, আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত মোঃ মোবারক হোসেন, জাতীয় পার্টির সাবেক মন্ত্রী সৈয়দ মোঃ কায়সার, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজাহারুল ইসলাম, জামায়াতের নায়েবে আমির আব্দুস সুবহান। অন্যদিকে আমৃত্যু কারাদ-ের বিরুদ্ধে সাজা বাড়ানোর জন্য রাষ্ট্রপক্ষ পলাতক আব্দুল জব্বারের বিরুদ্ধে আপীল করেছেন। পলাতক থাকায় চারজন আপিল করেননি। তাদের মৃত্যুদ- সাজা বহালই রয়ে গেছে। এরা হলেন, জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সদস্য পলাতক আবুল কালাম আজাদ, আল-বদর সদস্য চৌধুরী মাঈনুদ্দীন, আশরাফুজ্জামান খান, বিএনপি নেতা নগরকান্দা পৌর মেয়র জাহিদ হোসেন খোকন ওরফে খোকন রাজাকার ও জাতীয় পার্টির সাবেক সাংসদ পলাতক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জব্বার (রাষ্ট্র পক্ষ আপিল করেছে)। ট্রাইব্যুনালে আমৃত্যু কারাদ-প্রাপ্ত বিএনপি নেতা আব্দুল আলিম ও যুদ্ধাপরাধীদের নেতা গোলাম আযমকে ট্রাইব্যুনাল দিয়েছিল ৯০ বছর কারাদ-। তার সর্বোচ্চ শাস্তিযোগ্য অপরাধ হলেও বয়স বিবেচনায় এ রায় দেন ট্রাইব্যুনাল। এ দু’জনই আপীল বিভাগে ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করেছিলেন। কিন্তু তার আগেই তারা মারা যান, ফলে আপিল বিভাগ তাদের আপিল অকার্যকর করেছেন। অন্যদিকে রাজাকার বাহিনী প্রতিষ্ঠাতা একেএম ইউসুফ ট্রাইব্যুনালে বিচার চলাকালীন সময়ে অসুস্থ অবস্থায় মারা যায়। ফলে ট্রাইব্যুনাল আর মামলাটি না চালানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
×