বিশেষ প্রতিনিধি ॥ মেয়র প্রার্থীর মত কাউন্সিলর পদেও একক প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে ঢাকা মহানগরের ওয়ার্ড, থানা নেতাদের নিদের্শ দিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, যোগ্য ব্যক্তিকেই কাউন্সিলর পদে সমর্থন দেয়া হবে। যাকেই সমর্থন দেয়া হোক বিজয়ী করতে তাঁর পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়েই সকলকে কাজ করতে হবে।
মঙ্গলবার রাতে গণভবনে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও মহানগরের প্রতিটি ওয়ার্ড-ইউনিয়নের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে দলটির সভানেত্রী এমন নির্দেশ দিয়েছেন বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে। মতবিনিময় সভাটি টানা তিন মাস বিএনপি-জামায়াত জোটের সন্ত্রাস-নাশকতার বিরুদ্ধে মাঠে থেকে মোকাবেলার জন্য নগর আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিনন্দন জানাতে ডাকা হলেও রুদ্ধদ্বার বৈঠকে আলোচনায় প্রাধান্য পায় আসন্ন তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের বিষয়টিই।
বৈঠক সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে রুদ্ধদ্বার বৈঠকের শুরুতেই ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দলের একক কাউন্সিলর প্রার্থী চূড়ান্ত করার ব্যাপারে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা স্ব স্ব এলাকার রিপোর্ট সভানেত্রীর কাছে জমা দেন। ঢাকা উত্তরের সমন্বয়ক লে. কর্নেল (অব) ফারুক খান এবং দক্ষিণের সমন্বয়ক ড. আবদুর রাজ্জাক দুই সিটিতে দলীয় কাউন্সিলর প্রার্থীদের ব্যাপারে একটি সামগ্রিক ধারণাপত্র বৈঠকে তুলে ধরেন।
তাঁরা দুজনে জানান, দুই সিটি কর্পোরেশনে প্রতিটি ওয়ার্ডে দলের একক কাউন্সিলর প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করার কাজটি প্রায় শেষ পর্যায়ে। বেশিরভাগ দলীয় কাউন্সিলর প্রার্থীরা আমাদের কাছে তাদের মনোনয়ন প্রত্যাহারের আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন। আর যারা দেননি তাদেরগুলো আশা করি দ্রুতই জমা দেবেন। দু’একদিনের মধ্যেই চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা সভানেত্রীর হাতে দেয়া হবে। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে কেউ প্রার্থিতা বহাল রাখলে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
জানা গেছে, বৈঠকে আসন্ন ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দল সমর্থিত মেয়র ও একক কাউন্সিলর প্রার্থীকে বিজয়ের ব্যাপারে নগরের নেতারা বিভিন্ন পরামর্শ তুলে ধরেন। বৈঠকে দল সমর্থিত একক প্রার্থীর পক্ষেই সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশ দেয়া হয়। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা জানান, দলীয় সভানেত্রী তাদের বলেছেন, মেয়র পদের মত কাউন্সিলর পদেও একক প্রার্থী করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী নগর নেতাদের উদ্দেশে করে বলেন, দল যাকেই সমর্থন দেবে, তার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। মনে রাখবেন, দল বিজয়ী হলে, আপনাদেরই লাভ। যারা দলের সিদ্ধান্ত মেনে না নিয়ে বিদ্রোহী হবেন, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। আগামীতে তাদের দলে স্থান দেয়া হবে না। দলীয় সভানেত্রী আরও বলেছেন, ব্যক্তির চেহারা পছন্দ নাও হতে পারে, তবে দলের প্রার্থী হিসেবে তাকে বিজয়ী করার দায়িত্ব আপনাদের। জনপ্রিয় ও যোগ্য প্রার্থীদেরই দলীয় সমর্থন দেয়া হবে।
এ সভা শেষে দুই সিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের নিয়ে আরেকটি বৈঠক করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ডাঃ দীপু মনি, ড. আবদুর রাজ্জাক, লে. কর্নেল (অব) ফারুক খান, এম এ আজিজ, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম প্রমুখ। এ বৈঠকে কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী আসনে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয় বলে বৈঠক সূত্র জানায়।
সহ-সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠক ॥ ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে নামনে রেখে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা মঙ্গলবার বৈঠক করেন দলের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদকদের সঙ্গে। বৈঠকে দল সমর্থিত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারে অংশগ্রহণের জন্য সহ-সম্পাদকরা যে যে ওয়ার্ডে বসবাস করেন, সেসব এলাকায় দায়িত্ব বণ্টন করে দেয়া হয়। একই সঙ্গে সহ-সম্পাদকদের নগরের প্রতিটি ভোটারের বাড়ি বাড়ি গিয়ে দল সমর্থিত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের পক্ষে ভোট প্রার্থনারও নির্দেশ দেয়া হয়।
ধানম-ির প্রিয়াঙ্কা কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সূচনা বক্তব্যে রাখনে দলের সভাপতিম-লীর সদস্য ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। দুই সিটির সমন্বয়ক ড. আবদুর রাজ্জাক ও লে. কর্নেল (অব) ফারুক খান ছাড়াও কেন্দ্রীয় নেতা আহমদ হোসেন, আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, বদিউজ্জামান ভূঁইয়া ডাব্লু, এনামুল হক শামীম, সুজিত রায় নন্দী এবং সহ-সম্পাদকদের মধ্যে শাহে আলম, শফি আহমেদ, কামরুজ্জামান আনছারী, তারেক শামস হিমু, বাহাদুর বেপারী, গোলাম রব্বানী চিনু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।