ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কারাগারে ভয়ার্ত কামারুজ্জামান, কেটেছে বিনিদ্র রাত

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ৮ এপ্রিল ২০১৫

কারাগারে ভয়ার্ত কামারুজ্জামান, কেটেছে বিনিদ্র রাত

শংকর কুমার দে ॥ ফাঁসির রুজ্জু গলায় পরার প্রতীক্ষার প্রহর গুনে কারা প্রকোষ্ঠে সময় কাটছে এখন কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা কামারুজামানের। সর্বোচ্চ আদালত আপীল বিভাগে মৃত্যুদ-াদেশ বহাল রাখার পর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের আট নম্বর কনডেমড সেলের ভেতরে নির্বাক দৃষ্টিতে মৃত্যুর পরোয়ানা দেখার অপেক্ষায় বিচলিত, চিন্তিত, চুপচাপ আছেন তিনি। যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লাকে যে ফাঁসির মঞ্চে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছিল, সেই একই ফাঁসির মঞ্চে ফাঁসিতে ঝোলানো হচ্ছে কামারুজ্জামানকেও। সোমবার তার পরিবারের সদস্যরা দেখা করে আসার পর জেনে গেছেন মৃত্যু তার দ্বারপ্রান্তে, ওপর দিয়ে দৃঢ়চেতার ভাব দেখালেও ভেতরে এই সুন্দর পৃথিবীর মায়া ছেড়ে যাওয়ার মৃত্যুভয় তাড়া করতে শুরু করেছে তাকে। মৃত্যুভয় কার নেই, এই প্রশ্ন কারা কর্মকর্তার। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্রে এ খবর জানা গেছে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি জানান, যুদ্ধাপরাধী হিসেবে মৃত্যুদ-াদেশপ্রাপ্ত কামারুজ্জামান এখন তৃতীয় শ্রেণীর কয়েদীর মর্যাদা ভোগ করছেন। কারাগারের আট নম্বর সেলের ভেতরে আছেন তিনি একাই। আট নম্বর সেলের সামনে দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টায় পালাক্রমে প্রহরা দিচ্ছেন কারারক্ষীরা। মৃত্যুদ-াদেশপ্রাপ্ত কয়েদীর সঙ্গে কারারক্ষীদের কথা বলা নিষেধ। শুধুই সতর্ক দৃষ্টি। তার ওপর আছে আবার সিসি ক্যামেরা দিয়ে কারাভ্যন্তরের দৃশ্য পর্যবেক্ষণ। রুটি, সবজি, ডাল, ভাত, মাছ দিয়ে তিন বেলায় খাবার দিলেও তার খাবারের প্রতি কেমন যেমন অরুচি দেখা দিয়েছে। তবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় ও দোয়া দরুদ পাঠ করছেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মৃত্যুদ-াদেশ সর্বোচ্চ আদালত বহাল রেখে আদেশ দেয়ার পর এখন রায়ের কপির জন্য অপেক্ষা করছে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ। তারপর রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে এই যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের ফাঁসিতে ঝুলে যাওয়ার ভাগ্য অপেক্ষা করছে। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয়। তখন তিনি রায়ের কপি না পাওয়ায় ফাঁসি দেয়ার প্রস্তুতি নেই ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, আমরা ঘুমিয়ে আছি, আপনারাও গিয়ে ঘুমান। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, যুদ্ধাপরাধী কামারুজ্জামানের সোমবার রাতেই ফাঁসি হয়ে যাচ্ছে, এমন সম্ভাবানার ভিত্তিতেই তার পরিবারের লোকজনের সঙ্গে সাক্ষাত করতে দেয়া হয়। পরিবারের লোকজনের সাক্ষাত শেষেই নির্বাক, নিস্তব্দ হয়ে যান তিনি। ধরেই নিয়েছেন, রাতেই তার গলায় ফাঁসির রুজ্জু ঝুলছে। এজন্য সোমবার তিনি বিনিদ্র রাত কাটান। মঙ্গলবার খুব ভোরে ওঠেন তিনি। সারাদিনে তার ফাঁসির রায়ের কপি কারাগারে না পৌঁছানোর খবরও পেয়েছেন তিনি। ফাঁসি হয়ে গেলে সব শেষ, কিন্তু ফাঁসির জন্য প্রতীক্ষার প্রহর গোনা যে কী কঠিন শাস্তি, মৃত্যুভয়ের আতঙ্কে স্তব্দ সারাক্ষণ বিড় বিড় করে দোয়া দরুদ পড়ে দিনক্ষণ কাটানোর নির্মম সাক্ষী কামারুজ্জামান।
×