ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রকল্পগুলো শেষ করতে দশ সিদ্ধান্ত ;###;পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেলের সময় কমিয়ে আনা হচ্ছে ;###;রূপপুর বিদ্যুত কেন্দ্রের চুক্তি সম্পাদনের তাগিদ;###;রামপাল কেন্দ্রের সভরেন গ্যারান্টির নির্দেশ ;###;চার মাস পর পর মনিটরিং

সরকারের বিশেষ ব্যবস্থা ॥ মেগা ৮ প্রকল্প দ্রুত শেষ করুন

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ৮ এপ্রিল ২০১৫

সরকারের বিশেষ ব্যবস্থা ॥ মেগা ৮ প্রকল্প দ্রুত শেষ করুন

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ পদ্মা সেতুসহ মেগা প্রকল্পের বাস্তবায়ন দ্রুত করতে বিশেষ ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার। এজন্য প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে অহেতুক সময় ক্ষেপণ এড়াতে কোন কোন প্রকল্পের বাস্তবায়ন সময় কমিয়ে আনা হচ্ছে। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া প্রকল্পগুলোর গতি বাড়াতে ইতোমধ্যেই দশ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সর্বশেষ ফাস্ট ট্র্যাক প্রজেক্ট মনিটরিং কমিটির সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে জানা গেছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে অধিকতর স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে এবং অনিয়ম প্রতিরোধের জন্য প্রণীত কর্মপন্থা (মডালিটি) গত জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত ফাস্ট ট্র্যাক প্রজেক্ট মনিটরিং কমিটির তৃতীয় সভায় উপস্থাপন করেন।এটি পর্যালোচনা করা হয় এবং পরবর্তীতে প্রণীত এ কর্মপন্থা যথাযথভাবে অনুসরণের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে সচেষ্ট থাকার নির্দেশ দেন প্রধান মন্ত্রী ও ফাস্ট ট্র্যাক প্রজেক্ট মনিটরিং কমিটির সভাপতি শেখ হাসিনা। বাস্তবায়ন সময় কমিয়ে আনা প্রসঙ্গে পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক শফিকুল ইসলাম জনকণ্ঠকে জানান, সময় এক বছর এগিয়ে নেয়া বিষয়ে আমি এখনও অবগত হয়নি। তবে ঠিকাদারদের সঙ্গে আমাদের চুক্তি আছে ২০১৮ সাল পর্যন্ত। এর মধ্যে যদি ফাস্ট ট্র্যাক প্রজেক্ট মনিটরিং কমিটির সভায় ২০১৭ সাল পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করা হয়, তাহলে বিষয়টি ভেবে দেখতে হবে। এ নিয়ে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান, মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি সমন্বয় করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের পরিকল্পনা ও লক্ষ্য অনুযায়ীই কাজ এগিয়ে চলছে। সূত্র জানায়, দেশের সর্ববৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্প পদ্মা সেতুর কাজ এগিয়ে চলছে দ্রুত গতিতে। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে এটি বাস্তবায়নের সময়কাল নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০১৮ সালের নবেম্বর মাস পর্যন্ত। কিন্তু পরবর্তীতে যেভাবে কাজ এগিয়ে চলছে এতে নিদিষ্ট সময়ের আগেই বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে বিবেচনায় বাস্তবায়নকাল কমিয়ে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে। ঢাকা মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট প্রকল্প (মেট্রোরেল) প্রকল্প সমাপ্তির সময় নির্ধারিত ছিল ২০২৪ সাল পর্যন্ত। কিন্তু প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনা করে পাঁচ বছর কমিয়ে সেটি করা হয়েছে ২০১৯ সাল পর্যন্ত। ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত অপর প্রকল্প এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য একটি সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা (টাইম বাউন্ড এ্যাকশন প্ল্যান) প্রস্তুত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত অন্য প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন দ্রুত করতে নেয়া হয়েছে নানা সিদ্ধান্ত। প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে সর্বশেষ গত জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত সভায় যেসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে সেগুলো হচ্ছে, ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত প্রকল্পগুলো পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) চার মাস অন্তর মনিটর করবে। এই মনিটরিং প্রতিবেদন মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে গঠিত ফাস্ট ট্র্যাক টাস্কফোর্স কমিটির কাছে জমা দিতে হবে। এ বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি), আইএমইডি এবং ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত প্রকল্প সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) ও কারিগরি প্রকল্প প্রস্তাব (টিপিপি) প্রণয়ন ও অনুমোদন পদ্ধতি সহজ করা এবং সময় কমানোর পদক্ষেপ নিতে হবে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পরিকল্পনা বিভাগকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যত কেন্দ্র স্থাপন সংশ্লিষ্ট অন্যান্য চুক্তি দ্রুত সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।এ বিষয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়কে তাগিদ দেয়া হয়েছে। রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্রের জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী দ্রুত ইক্যুইটির অর্থ বরাদ্দ প্রদান এবং ইসিএ ঋণের বিপরীতে প্রয়োজনীয়তার নিরীখে সভরেন গ্যারান্টি প্রদান করতে হবে। এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে অর্থ বিভাগ ও বিদ্যুত বিভাগকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এলএনজি টার্মিনালের বাস্তবায়ন দ্রুত করতে ফাস্ট ট্র্যাক টাস্কফোর্স কমিটিকে প্রকল্পটির কার্যক্রম নিবির মনিটরিংয়ের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। পায়রা বন্দরকে পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দরে রূপান্তরিত করতে সম্ভাব্যতা যাচাই করতে বলা হয়েছে। মাতারবাড়ি ২ী৬০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার প্রজেক্ট এলাকায় প্রকল্পের জন্য মহেশখালি ও মাতারবাড়ি এলাকায় চিহ্নিত জমি মূল্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে হস্তান্তর প্রক্রিয়া বন্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ভূমি মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে মহেখালী এলাকার খাসজমি দ্রুত চিহ্নিত করে দখলে নিতে হবে। প্রকল্প এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত লবণচাষীদের পুনর্বাসনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। পরিকল্পনা গ্রহণ ও অনুমোদনের বিষয়ে দীর্ঘমেয়াদে কাঠামোগত পরিবর্তনের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব সংশ্লিষ্ট সচিবদের সঙ্গে পরামর্শ করে একটি সুপারিশমালা প্রণয়ন করবে। এটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয় মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে। ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত ৮ প্রকল্প হচ্ছে, পদ্মা সেতু, রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র, রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র, মেট্রোরেল, এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প, গভীর সমুদ্রবন্দর, পায়রা সমুদ্র বন্দর এবং মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্র প্রকল্প। এসবের সর্বশেষ অগ্রগতি সম্পর্কে জানা গেছে, দ্রুত এগিয়ে চলেছে দেশের সর্ববৃহৎ অবকাঠামো পদ্মা সেতুর কাজ। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত মূল সেতু, নদী শাসন, সংযোগ সড়ক, তদারকী ও পরিবেশ কার্যক্রমসহ অন্যান্য অংশ মিলে বাস্তবায়ন হয়েছে ৩৪ দশমিক ১২ শতাংশ কাজ। চলতি বছরের জুনের মধ্যেই শেষ হচ্ছে ভূমি অধিগ্রহণ, এর পরেই লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী শেষ হবে পুনর্বাসনের কাজও। পদ্মা সেতুর খাতভিত্তিক অগ্রগতি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, মূল সেতুর কাজ শুরু হয় ২০১৪ সালের নবেম্বর মাসে। মূল সেতুর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ৩টি ড্রেজার, ৩টি ফ্লোটিং ক্রেন, ২টি টাগবোট এবং একটি এঙ্কর বোট মাওয়া সাইটে এনেছে। সেতুর সেন্টার লাইন বরাবর নেভিগেশন চ্যানেল ড্রেজিং শুরু হয়েছে। মূল সেতুর মাটি পরীক্ষা এবং সার্ভের কাজ গত বছরে ১ নবেম্বর শুরু হয়। ঠিকাদারের নিজস্ব স্থাপনা যেমন, অফিস ল্যাবরেটরি, ওয়ার্কশেড, লেবার শেড এবং হারবার (জেটি) এর নির্মাণ কাজ চলছে। পদ্মা সেতু প্রকল্পের অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেছে ফাস্ট ট্র্যাক প্রজেক্ট মনিটরিং কমিটি। ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে শুরু হয় জাজিরা সংযোগ সড়ক নির্মাণ অংশ। গতবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত এ অংশের বাস্তবায়ন হয়েছে ৩০ শতাংশ। মাওয়া সংযোগ সড়ক নির্মাণ অংশের কাজ শুরু হয় গত বছরের জানুয়ারি মাসে। গত বছরের ডিসেম্বর বাস্তবায়ন হয়েছে ২২ শতাংশ। সার্ভিস এড়িয়া-২ এর গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়েছে ১৫ শতাংশ। নদী শাসন কাজ শুরু হয়েছে ২০১৪ সালের নবেম্বরে। ইতোমধ্যেই নদী শাসন কাজ করতে তিনটি ড্রেজারের প্রথম চালান এসেছে। পদ্মা সেতু প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হয় ২০০৬ সালের আগস্ট মাসে। গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯৯ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন কাজও এগিয়ে চলেছে দ্রুতই। জাজিরা সংযোগ সড়ক, মাওয়া সংযোগ সড়ক ও সার্ভিস এরিয়া-২ এর নির্মাণ কাজ তদারকীর কাজ গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৬ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। মূল সেতু ও নদী শাসন কাজের তদারকি অংশে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে মূল সেতু ও নদী শাসন কাজের ডিজাইন রিভিউ শুরু হয়েছে। বহুল আলোচিত রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রের কার্যক্রম এগিয়ে চলছে। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ প্রকল্পের ২০ শতাংশ ভৌত কাজ শেষ হয়েছে, সেই সঙ্গে আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ১২ শতাংশ। এমনই তথ্য দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। প্রথম পর্যায়ের কাজ বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ৫ হাজার ৮৭ কোটি ৯ হাজার টাকা। রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনে ইন্টারন্যাশনাল এ্যাটোমিক এনার্জি এজেন্সি (আইএইএ) এবং প্রযুক্তি সরবরাহকারী দেশ রাশিয়ান ফেডারেশনের সহায়তার জন্য ইতোমধ্যেই প্রকল্প এলাকায় প্রাথমিক পর্যায়ের সেফটি সংক্রান্ত স্টাডি সম্পাদন করা হয়েছে। প্রযুক্তি সরবরাহকারী দেশ রাশিয়ান ফেডারেশন প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দেয়ার নিশ্চয়তা দিয়েছে। ইতোমধ্যেই সরকার এবং রাশিয়ান ফেডারেশন রুপপুর এলাকায় দুটি পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনে কোঅপারেশন এগ্রিমেন্ট কন্সারনিং দ্য কনস্ট্রাকশন অব নিউক্লিয়ার পাওয়া প্লান্ট বিষয়ক চুক্তি করেছে। ফাস্ট ট্র্র্যাক প্রজেক্ট মনিটরিং কমিটির সভায় অগ্রগতি সম্পর্কে জানানো হয় যে, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন ও রাশিয়ান ফেডারেশনের মধ্যে স্বাক্ষরিত প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় চুক্তির আওতাধীন অধিকাংশ কাজ সন্তোষজনকভাবে সম্পন্ন হয়েছে। কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ এগিয়ে চলছে। চতুর্থ চুক্তির আর্থিক ও কারিগরি বিষয়সমূহ উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত করা হয়েছে। চতুর্থ চুক্তির আওতায় প্রধান কাজ হবে মূল নির্মাণ কাজের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করা। এছাড়া মূল প্ল্যান্টের ডিজাইন ডকুমেন্টেশন প্রণয়ন বা মূল নির্মাণ কাজের জন্য জেনারেল কন্ট্রাক ও ইন্টার গবর্নমেন্টাল ক্রেডিট এগ্রিমেন্টের (আইজিসিএ) তৈরির কার্যক্রম চলছে। সূত্র জানায়, এনার্জি রেগুলেটরি অথরিটি এ্যাক্ট ২০১২-এর অধীন পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় লাইসেন্স গ্রহণের জন্য যাবতীয় কার্যক্রম সম্পাদন করা, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পরমাণু প্রযুক্তি বিষয়ে যোগ্য ও দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন, প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়ক স্থাপনা ও ফ্যাসিলিটিজ ক্রয় ও নির্মাণ, বিদ্যমান প্রকল্প সাইট ও আবাসিক এলাকার ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়ন, আবাসিক ভবন ও প্রকল্প অফিসের জন্য যাবতীয় আসবাবপত্র ও অন্যান্য অত্যাবশকীয় যন্ত্রপাতি সংগ্রহ, প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ২০টি যানবাহন ক্রয়, ২ হাজার ৭৮৫ সেট স্থানীয় যন্ত্রপাতি এবং ২০ সেট বৈদেশিক যন্ত্রপাতি সংগ্রহ এবং প্রয়োজনীয় ইলেকট্রিক্যাল ইক্যুইপমেন্ট সংগ্রহ করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের অগ্রগতি বিষয়ে রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র প্রকল্পের পরিচালক ড. শওকত আকবর জনকণ্ঠকে জানান, ২০১৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত যেসব কাজ সমাপ্ত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল তার সবই বাস্তবায়ন হয়েছে। কোন ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রার বেশি বেশি কাজ হয়েছে। পরিকল্পিতভাবে এগিয়ে চলছে স্বপ্নের মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে উত্তরা থেকে মাত্র ৩৮ মিনিটেই যাওয়া যাবে মতিঝিলের বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে। আগামী জুলাইয়ের মধ্যে শেষ হবে ডিটেইল ডিজাইন তৈরির কাজ। গত ডিসেম্বরের মধ্যে বেসিক ডিজাইনের কাজ শেষ করার লক্ষ্য ছিল। গত নবেম্বর মাস পর্যন্ত এ প্রকল্পের ব্যয় হয়েছে ৩৯৫ কোটি ৬৯ লাখ টাকা, এর মধ্যে সরকারী তহবিলের ১০৫ কোটি ১৪ লাখ এবং বাকি টাকা জাইকার তহবিল থেকে ব্যয় করা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে মাটি পরীক্ষাসহ চারটি সার্ভের কাজ চলছে জোরেশোরেই। ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে তিনটি সার্ভের কাজ। অন্যদিকে আইন-কানুনের বিষয়টিও এগিয়েছে অনেকদূর। চলতি বছরের মধ্যেই স্টেশনসহ বিভিন ভৌত কাজের দরপত্র আহ্বাান করা হবে বলে জানা গেছে। ডিপোর জন্য ২২ হেক্টর জমি পাওয়া গেছে রাজউক থেকে। সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের ৩০ জুন ঢাকা মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) জয়েন্ট স্টেক কোম্পানিজ এ্যান্ড ফার্মস-এ নিবন্ধিত হয়েছে এবং ২০১৪ সালের ১৬ নবেম্বর এর প্রথম বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান তাদের কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছে। মেট্রোরেল বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ৭টি সার্ভে পরিচালনা করা হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে টোপো গ্রাফিক্যাল সার্ভে শুরু হয়েছে ২০১৪ সালের ৬ মে, শেষ হয় ডিসেম্বর মাসে। ট্রাফিক সার্ভে ২০ মে মাসে শুরু হয়ে শেষ হয়েছে আগস্ট মাসে। জিও টেকনিক্যাল সার্ভে ৩ জুলাই শুরু হয়ে শেষ হয়েছে ২৫ আগস্ট। রাইট টু এ্যাওয়ে সার্ভে শুরু হয়েছে ১০ সেপ্টেম্বর সেটি এখনও চলমান রয়েছে। ইউটিলিটি ডাটা কালেকশন সার্ভে এপ্রিলে শুরু হয়ে ডিসেম্বরে শেষ হয়েছে। আর্কলজিক্যাল সার্ভে গত বছরের নবেম্বরে শুরু হয়েছে এখনও চলছে। ইনভারমেন্টাল সেজলাইন সার্ভে গত বছরের ২১ ডিসেম্বর শুরু হয়েছে, এখনও চলমান রয়েছে। এদিকে ইনস্টিটিউশনাল ডেভেলপমেন্ট কন্সালটেন্ট (আইডিসি) হিসেবে জাপানের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ওরিয়েন্টাল কন্সালটেন্ট লিমিটেডের সঙ্গে গত বছরের সাত জুলাই চুক্তি স্বাক্ষর করেছে সরকার। রিসেটেলমেন্ট এ্যাসিসটেন্ট কন্সালটেন্ট হিসেবে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সিসিডিবির সঙ্গে গতবছরের ১০ ডিসেম্বর চুক্তি হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে জনবল নিয়োগের কাজও এগিয়ে চলছে। এলএনজি টার্মিনাল প্রকল্পের বিষয়ে ফাস্ট ট্র্যাক প্রজেক্ট মনিটরিং কমিটির সভায় জানানো হয়, বিদ্যুত ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান ) আইন ২০১০-এর আওতায় সিঙ্গাপুরের এস্ট্র্রা ওয়েল এ্যান্ড এক্সসিলারেট এনার্জি কনসোর্টিয়াম (এইসি) এর সঙ্গে পেট্রোবাংলা টার্ম সিট এগ্রিমেন্টটি নীতিগত অনুমোদনের জন্য অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে পুনরায় পাঠানোর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পের বিষয়ে ফাস্ট ট্র্যাক প্রজেক্ট মনিটরিং কমিটির সভায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জানানো হয়, সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের বিষয়ে চীন, নেদারল্যান্ড এবং ইউএই হতে প্রাপ্ত প্রস্তাবসমূহ আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় পর্যালোচনা করা হয়েছে। এ বিষয়ে সভায় একমত পোষণ করা হয় যে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দরের জন্য প্রাপ্ত প্রস্তাবসমূহ এবং একই সঙ্গে মাতারবাড়ী প্রকল্পভুক্ত কয়লা লোডিং আনলোডিংয়ের জন্য প্রস্তাবিত জেটি (পোর্ট) ভবিষ্যতে সম্প্রসারণ করে গভীর সমুদ্র বন্দর করার বিষয়টি পরীক্ষা ও পর্যালোচনা করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবেন। পায়রা সমুদ্রবন্দর বিষয়ে ফাস্ট ট্র্যাক প্রজেক্ট মনিটরিং কমিটিকে নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান জানান, পায়রা বন্দরের অবস্থান এবং অন্যান্য যেসব সুবিধা রয়েছে এসব বিবেচনায় এ স্থানে গভীর সমুদ্রবন্দর করা যেতে পারে। পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর করার জন্য অনেক দেশ আগ্রহ প্রকাশ করেছে। পরবর্তীতে সভায় পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর করার বিষয়ে আলোচনা করা হয়। মাতারবাড়ি প্রকল্পের বিষয়ে ফাস্ট ট্র্যাক প্রজেক্ট মনিটরিং কমিটির সভায় বিদ্যুত বিভাগ থেকে জানানো হয়, এটির কাজ এগিয়ে চলছে। তবে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সঙ্গে সঙ্গে মহেখালি এলাকায় অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান ও টাউনশিপ ডেভেলপমেন্ট হবে। এজন্য ভবিষ্যতে অনেক জমির প্রয়োজন হবে। তাছাড়া যোগাযোগ ব্যবস্থারও অনেক উন্নয়নের প্রয়োজন। বর্তমানে প্রকল্প এরাকায় জমি ক্রয়ের জন্য আগ্রহী মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই পরিকল্পিত উন্নয়নের জন্য এ এলাকায় জমি ক্রয়-বিক্রয় সীমিত করা প্রয়োজন। এসব বিষয় পর্যালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী প্রকল্প এলাকার খাস জমি দ্রুত দখলে নেয়া ক্ষতিগ্রস্ত লবণচাষীদের পুনর্বাসন এবং কি পরিমাণ ব্যক্তিমালিকাধীন জমি ভবিষ্যতে লাগতে পারে প্রয়োজনে সে বিষয়ে একটি সমীক্ষা পরিচালনা করা যেতে পারে। রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্রের অগ্রগতি বিষয়ে ফাস্ট ট্র্যাক প্রজেক্ট মনিটরিং কমিটির সভায় বিদ্যুত সচিব জানান, প্রকল্পটি বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড এবং ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কোম্পানি (এনটিপিসি) ইন্ডিয়া লিমিটেডের যৌথ উদ্যোগে সন্তোষজনকভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে। অর্থ বিভাগ হতে প্রথম পর্যায়ের ইক্যুইটির অর্থ বাবদ ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। ইক্যুইটি বাবদ আরও অর্থ প্রয়োজন হবে। তাছাড়া অর্থ বিভাগ হতে প্রকল্পের ইসিএ ঋণের বিষয়ে সভরেন গ্যারান্টি প্রদান প্রয়োজন।
×