ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সৌদি বিমান হামলা সত্ত্বেও এগিয়ে যাচ্ছে হুতিরা

এডেনে ফের তীব্র লড়াই

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ৭ এপ্রিল ২০১৫

এডেনে ফের তীব্র লড়াই

ইয়েমেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় এডেন শহরে শিয়া হুতি বিদ্রোহী এবং প্রেসিডেন্ট আব্দরাব্বু মনসুর হাদির অনুগত বাহিনীর মধ্যে তীব্র লড়াই অব্যাহত রয়েছে। সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের বিমান হামলা সত্ত্বেও বিদ্রোহীরা এডেনের অভ্যন্তরে আরও এগিয়ে চলেছে। এডেন বন্দরের কাছে হুতি যোদ্ধা ও মিত্র সেনা ইউনিটগুলো স্থানীয় মিলিশিয়াদের সঙ্গে ভারি অস্ত্রের লড়াইয়ে লিপ্ত হলে বেশকিছু লোক নিহত হয়। এদিকে ইয়েমেনি রাজধানী সানায় সামরিক গোয়েন্দা সদর দফতর এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সেন্ট্রাল কমান্ড, সামরিক ঘাঁটি ও ক্ষেপণাস্ত্রের মজুতাগারের ওপর প্রচ- বিমান হামলা চালানো হয়। প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ ইয়েমেনি সেনাসহ হুতি নিয়ন্ত্রিত প্রদেশগুলোতে শনিবার রাত থেকে ব্ল্যাক আউটের কারণে বিদ্যুতবিহীন অবস্থায় রয়েছে। খবর বিবিসি ও ইয়াহু নিউজের। এডেন দখলের জন্য লড়াইরত হুতি বাহিনী সৌদি নেতৃত্বাধীন উপসাগরীয় বিমান বাহিনীর ১১ দিনের হামলার মুখেও শহরের কেন্দ্রস্থলের দিকে এগিয়ে চলেছে। এডেন সৌদি সমর্থিত প্রেসিডেন্ট হাদির অনুগত যোদ্ধাদের অন্যতম শেষ ঘাঁটি। সুন্নি মুসলিম দেশ সৌদি আরব ইরানের মিত্র শিয়া হুতিদের হটিয়ে দেয়ার চেষ্টায় ২৬ মার্চ বিমান হামলা শুরু করে। হুতিরা এরই মধ্যে সানাকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। হুতিদের যানবহর, ক্ষেপণাস্ত্র ও অস্ত্রভা-ার ধ্বংস করতে এবং বাইরে থেকে তাদের সঙ্গে আরও যোদ্ধাদের যোগদান রোধ করতে বিমান ও জাহাজ থেকে হামলা চালানো হয়। তবে হুতিরা তেহরানের কাছ থেকে অস্ত্রের চালান পাওয়ার সৌদি অভিযোগ অস্বীকার করছে। সৌদি নেতৃত্বাধীন অভিযানের ফলে হুতিদের বা তাদের পাশে যুদ্ধরত সাবেক প্রেসিডেন্ট আলী আবদুল্লাহ সালেহের সমর্থকদের কোনরূপ চূড়ান্ত পরাজয় ঘটেনি। কিন্তু লড়াইয়ে লোকজন হতাহত হওয়ায় এবং সামরিক বিপর্যয় দেখা দেয়ায় সাহায্যদাতা গোষ্ঠীগুলো উদ্বেগ ব্যক্ত করেছে। হাদিপন্থী মিলিশিয়া সূত্রে বলা হয়, ৩৬ হুতি ও মিত্রযোদ্ধা এডেনের বন্দরের কাছে শহরটির কেন্দ্রস্থলের সাউল্লা এলাকায় নিহত হয়। আর হাদির পক্ষের যোদ্ধাদের ১১ জন মারা যায়। হুতি বাহিনী প্রথম অবস্থায় বন্দর এলাকার দিকে এগিয়ে গিয়ে ছিল, কিন্তু কয়েক ঘণ্টা পর তাদের কয়েকটি রাস্তার পেছনে এক সেনা ঘাঁটির দিকে হটিয়ে দেয়া হয়। এএফপি জানায়, বিদ্রোহীরা এডেনের আবাসিক এলাকায় গোলাবর্ষণ ও কয়েকটি ভবনে আগুন জ্বালিয়ে শহরের ভেতরে আরও এগিয়ে যায়। লড়াইয়ের কারণে অনেক বাসিন্দাই তাদের বাড়িঘরে আটকা পড়ে। জাতিসংঘ বলেছে, ইয়েমেনে দু’সপ্তাহের লড়াইয়ে ৫০০-এর বেশি লোক নিহত হয়েছে। আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটি ইয়েমেনে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছাতে অবিলম্বে ২৪ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে। রবিবার এক পাকিস্তানী বিমানে করে সানা থেকে ১৭০ জনকে উদ্ধার করা হয়। ৮০০ এরও বেশি পাকিস্তানী নাগরিক এরই মধ্যে ইয়েমেন ত্যাগ করেছে। অন্য দেশের মধ্যে রাশিয়া, ভারত ও ইন্দোনেশিয়াও ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক উদ্বেগের মধ্যে ইতোপূর্বেই তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিয়ে গেছে। হুতিরা বলেছে, প্রেসিডেন্ট হাদির সরকারের স্থলে অন্য কোন সরকারকে ক্ষমতায় বসানোই তাদের লক্ষ্য। তারা হাদি সরকারকে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত করে থাকে। সাবেক প্রেসিডেন্ট সালেহের অনুগত বাহিনী হুতিদের সমর্থন করছে। তিনি আরব বসন্ত বিক্ষোভের ফলে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন। সৌদি আরব বলছে, হুতিরা সৌদিদের আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইরানের সমর্থন পাচ্ছে। ইরান এ অভিযোগ অস্বীকার করে থাকে। সৌদি আরব ও হুতি উভয়পক্ষই বলছে, তারা আলোচনার বস্তুত, যা ইয়েমেন রাজনৈতিক পরিবর্তনের দিকে আবার ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারে। ২০১২ সালে সালেহের পদক্ষেপের পর এ পরিবর্তনের সূচনা হয়েছিল। কিন্তু তারা আলোচনার জন্য পরস্পর অসঙ্গতিপূর্ণ শর্ত দিচ্ছে। ওমান গত সপ্তাহে জানায়, কোন পক্ষই আলোচনার জন্য প্রস্তুত নয়। উপসাগরীয় দেশ ওমান সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক অভিযান থেকে দূরে রয়েছে। এক সিনিয়র হুতি সদস্য রবিবার জানান, যদি সৌদি নেতৃত্বাধীন বিমান অভিযান বন্ধ করা হয় এবং ‘অনাগ্রাসী’ পক্ষগুলো আলোচনা তত্ত্বাবধান করে, তাহলে দলটি শান্তি আলোচনায় রাজি আছে।
×