ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

তাবিথ আউয়াল নাকি মাহী চৌধুরী-দ্বিধাদ্বন্দ্বে হাই কমান্ড

ঢাকা উত্তরে কে হচ্ছেন বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ৭ এপ্রিল ২০১৫

ঢাকা উত্তরে কে হচ্ছেন বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী

রাজন ভট্টাচার্য ॥ সব চেষ্টাই ব্যর্থ হলো। উচ্চ আদালতে গিয়েও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী নিশ্চিত করতে পারল না বিএনপি। প্রশ্ন হলো তাহলে উত্তরে মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী কে হচ্ছেন? দক্ষিণে ইতোমধ্যে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মীর্জা আব্বাসকে সমর্থন দিয়েছে বিএনপি। উত্তরে বিকল্প হিসেবে আছে মিন্টুর ছেলে তাবিথ আউয়াল ও বিকল্পধারার সাংগঠনিক সম্পাদক মাহী বি চৌধুরী। যদিও বিকল্পধারা ২০ দলীয় জোটে নেই। তাতে কী। দলটি বিএনপির অন্যতম মিত্র। সবচেয়ে বড় কথা হলো- বিএনপির প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে অন্যতম বিকল্পধারা সভাপতি ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। শেষ পর্যন্ত মাহীই বিএনপির সমর্থন পাচ্ছেন এমন আলোচনা খোদ বিএনপিতেই। আগামী দুই থেকে তিন দিনের মধ্যেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে। মিন্টুর সঙ্গে কথা বলে আজ আপীল বিভাগে রিটের আপীল করার কথা জানিয়েছেন তাঁর আইনজীবীরা। তিনি সিটি নির্বাচনে বিএনপি মেয়র প্রার্থী সমর্থনের বিষয়ে কৌশলী অবস্থান নিয়েছে। চট্টগ্রামে সাবেক মেয়র মনজুর আলমকে কৌশলে বিএনপি তথা ২০ দলের পক্ষ থেকে সমর্থন জানানো হয়েছে। ঢাকায় অনেক সময় পেরিয়ে দক্ষিণে আব্বাস সমর্থন পেলেন। অপেক্ষা এখন উত্তরের দিকে। বিএনপি নেতৃবৃন্দ বলছেন, দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টুর মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ার পর প্রার্থী হিসেবে কাকে সমর্থন দেয়া হবে এ নিয়েই সর্বশেষ হিসাব-নিকাশ চলছে। ২০ দলের লক্ষ্য অন্য সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মতো ঢাকা সিটিতেও মেয়র পদে দল সমর্থিত প্রার্থী বিজয়ী হোক। এই ভাবনা থেকে সাবধানে পথচলা তাদের। এদিকে মেয়র প্রার্থী হিসেবে সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে মাহী সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিলেন। শেষ পর্যন্ত তা বাতিল করা হয়েছে। মাহীর মিডিয়া কো-অর্ডিনেটর সাইফুল ইসলাম শোভন জানান, অনিবার্য কারণে সংবাদ সম্মেলনটি স্থগিত করা হয়েছে। ৮ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলন হতে পারে। ২০ দলের সামনে এখন তিনটি পথ খেলা আছে। প্রথমটি হলো- মিন্টুর ছেলেকে সমর্থন দেয়া। এক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় তাঁর রাজনৈতিক কোন পরিচয় না থাকা। অপরটি সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থান না থাকা। এসব দিক বিবেচনায় নিলে মিন্টুর ছেলে তাবিথ আউয়াল সমর্থন দেয়ার যোগ্য নন। তাবিথ নিজেও বলেছেন, আমি চাইব বাবাই নির্বাচন করুক। তিনি না করতে পারলে আমি মাঠে থাকব। তবে আমার পরিচিতি তেমন নেই। এক্ষেত্রে বিএনপি ইচ্ছা করলে মাহী বি চৌধুরীকে সমর্থন জানাতে পারে। অন্যদিকে বিএনপির পুরো সমর্থন পাবেন এ ব্যাপারে আশাবাদী মাহী। তিনি বলেছেন, আশা করি, বিএনপির পক্ষ থেকে মেয়র পদে আমাকে সমর্থন দেয়া হবে। পাশাপাশি দলের নেতাকর্মীরা আমার পক্ষ হয়ে কাজ করলে বিজয় নিশ্চিত করা কঠিন হবে না। বিকল্পধারার পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে বিএনপির সঙ্গে আলোচনাও শেষ। এখনও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা বাকি। সর্বশেষ যদি মাহীর প্রতি বিএনপি ভরসা না পায়, তাহলে হয়ত উত্তরে কাউকেই সমর্থন দেয়া নাও হতে পারে। যদিও বর্তমান রাজনৈতিক পেক্ষাপটে বিএনপি হয়ত এরকম কোন সিদ্ধান্তে যাবে না। বিকল্প হিসেবে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে বিএনপি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে পারে; এমন আলোচনাও আছে নিজ দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে। এদিকে, বাছাইয়ে আবদুল আউয়াল মিন্টুর মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া নিয়ে বিএনপিতে নানা গুঞ্জন রয়েছে। বিষয়টিকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন না অনেকেই। ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের মধ্যেও এ নিয়ে নানা সন্দেহ ঘুরপাক খাচ্ছে। এটা কি অনিচ্ছাকৃত ভুল, নাকি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর কৌশল। সরকারের সঙ্গে কোন সমঝোতা- তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে বিএনপির নেতাকর্মীদের একটি অংশ। যদিও প্রার্থিতা ফিরে পেতে সব চেষ্টাই করেছেন তিনি। নির্বাচন কমিশনের আপীলে প্রার্থিতা টেকেনি। সর্বশেষ উচ্চ আদালতের আশ্রয় নেন মিন্টু। তাতেও কাজ হয়নি। মিন্টুর পারিবারিক সূত্র জানায়, তাঁর প্রার্থিতা বাতিল নিয়ে যেসব অভিযোগ ও সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে তার বাস্তব কোন ভিত্তি নেই। যিনি হলফনামায় সমর্থক হিসেবে ছিলেন, তিনি তাঁদের খুবই বিশ্বস্ত। তিনি সিটি কর্পোরেশনের ভোটার এটা বলার পরই তাঁকে সমর্থক করা হয়েছে। এ নিয়ে যাচাই-বাছাইয়ের কোন প্রয়োজন মনে হয়নি। তাছাড়া শেষ দিনে দুপুরের পর মিন্টুপুত্র তাবিথ আউয়াল হঠাৎ করেই কেন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দিলেন তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। মিন্টুর মনোনয়নপত্র বাতিল হলেও ছেলের মনোনয়নপত্রকে বৈধ ঘোষণা করা নিয়েও অনেকের প্রশ্ন রয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব) মাহবুবুর রহমান বলেন, এটা স্পষ্ট বোঝা যায়, মিন্টু অনিচ্ছাকৃত ভুল করেছেন। তাঁকে লঘু পাপে, গুরুদ- দেয়া হয়েছে। আশা করি, আপীলের আদেশ তাঁর পক্ষে যাবে। হাইকোর্টে রিট আবেদন খারিজ ॥ হাইকোর্টে রিট আবেদন করেও ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রার্থিতা ফিরে পেলেন না বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টু। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি কাজী মোঃ ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার মিন্টুর আবেদন সরাসরি খারিজ করে দেয়। আপীল করেও মনোনয়ন ফিরে না পেয়ে হাইকোর্টে এই আবেদন নিয়ে গিয়েছিলেন মিন্টু, যিনি ঢাকা উত্তরে মেয়র পদে লড়তে চেয়েছিলেন। মিন্টুর পক্ষে আদালতে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। পরে ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল আমাতুল করিম বলেন, আদালত আবেদনটি সরাসরি খারিজ করে দিয়েছে। ফলে তাঁর মনোনয়নপত্রটি বাতিলই থাকল। আগামী ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠেয় সিটি নির্বাচনে ঢাকা উত্তরের মেয়র পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মিন্টু। কিন্তু তাতে সমর্থক হিসেবে স্বাক্ষরকারী আবদুর রাজ্জাক ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের ভোটার না হওয়ায় প্রার্থিতার আবেদন বাতিল করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহ আলম। ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ঢাকার বিভাগীয় কমিশনারের কাছে আপীল করেন মিন্টু। শনিবার শুনানি করে ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার জিল্লার রহমান আপীল খারিজ করে দেন। এরপর মিন্টুর প্রার্থিতা ফিরিয়ে দেয়ার আবেদন নিয়ে হাইকোর্টে যান তাঁর আইনজীবীরা। মনোনয়নপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে রুল চাওয়া হয় ওই আবেদনে। সেই সঙ্গে ওই সিদ্ধান্তের কার্যকারিতা স্থগিত করে মনোনয়নপত্র গ্রহণের বিষয়ে নির্দেশনা চেয়েছিলেন মিন্টু। প্রধান নির্বাচন কমিশনার, স্থানীয় সরকার সচিব, ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার ও ঢাকা উত্তরের রিটার্নিং কর্মকর্তাকে এতে বিবাদী করা হয়েছিল। এদিকে, আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রচার সোমবার মধ্যরাত থেকেই শুরু হচ্ছে। চলবে আগামী ২৬ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত। সোমবার নির্বাচন কমিশনের জনসংযোগ পরিচালক এসএম আসাদুজ্জামান গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
×