ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

তবে কেন মানুষ হত্যা

প্রকাশিত: ০৪:২৩, ৭ এপ্রিল ২০১৫

তবে কেন মানুষ হত্যা

টানা ৯২ দিনের নাটকীয়তার পালা চুকিয়ে অবশেষে তিনি ‘স্বেচ্ছায় অবরুদ্ধ’কালের সমাপনী টেনেছেন। যখন ফুরায় বসন্তকাল, শেষ হয়ে আসে চৈত্র মাস, ফিরে গেলেন নিজ গৃহেÑ পেছনে পড়ে রইল নারকীয় বহু ঘটনা। এই পর্বে ছিল যেমন অনেক নাটুকে ঘটনা, এ্যাডভেঞ্চার, সহিংসতা ও নারকীয়তা, তেমনি বোমার আগুনে ঝলসে যাওয়া, দগ্ধ হওয়া শতাধিক প্রাণ যাওয়ার মতো নির্মম ঘটনা। পোড়ানো হয়েছে সহস্রাধিক যানবাহনও। স্কুল, কলেজ ও সরকারী স্থাপনাতেও বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে, করা হয়েছে অগ্নিসংযোগ। পেট্রোলবোমার বিকট শব্দময় অগ্নিস্ফূরণে ঝলসে যাওয়া মানব ও তাদের স্বজনদের আহাজারিতে এখনও ভারি আকাশ বাতাস। সর্বনাশের নেশায় মত্ত হয়ে দেশবাসীকে দেখিয়ে দেয়া হল নারকীয়তা, নাশকতা ও জঙ্গীপনার কত রূপ। এই অবস্থায়, চাইলেই চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে যে কারও প্রাণ নির্মমভাবে করতে পারা যায় হরণ। পারা যায় পুড়িয়ে দগ্ধ করতে মানুষকে। জ্বালিয়ে দেয়া যায় যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহন, অগ্রগতির চাকা করে দেয়া যায় স্তব্ধ। পেট্রোলবোমা নামক সহজলভ্য মারণাস্ত্র দিয়ে বুঝিয়ে দেয়া যায় পুরো দেশবাসীকে নারকীয় যন্ত্রণায় দগ্ধ হওয়া কাকে বলে! কাকে বলে অবরোধ, হরতালের স্বরূপ। এছাড়া ৯২ দিনের কর্মসূচীতে জানিয়ে দেয়া হলো জনগণকে নাস্তানাবুদ করার সন্ত্রাস আর ভয়ের সংস্কৃতিতে আবদ্ধ করায় তারা কত পারদর্শী। স্পষ্ট করা হলো আন্তর্জাতিক জঙ্গীদের সঙ্গে কী নিবিড় সম্পর্ক, আন্তরিকতা, সহমর্মিতা ও সহযোগিতা। এমনকি স্বপ্নপূরণে জঙ্গী ও সন্ত্রাসীরা শক্তি ও সাহস নিয়ে কিভাবে পাশে দাঁড়ায়। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীরা এ পরিস্থিতিতে একাত্তর স্টাইলে গণহত্যা চালিয়ে যেতে পারছে। ৯২টি দিন কী দুঃসহ ছিল দেশবাসীর জন্য। তাই বসন্ত ফুরিয়ে যাওয়ার আগে, বর্ষ শেষের প্রাক-মুহূর্তে ফিরে গেলেন আপন গৃহে। ঘরবাড়ি ছেড়ে এই যে তিনি কাটিয়ে দিলেন তিনটি মাস-গুনে গেলেন লাশের সংখ্যা, সম্পদহানির পরিমাণ আর দেশবাসীকে নাকাল করার শক্তিমত্তা। তবু সরকারের পতন বা উৎখাত কোনটাই হলো না। কিন্তু হয়েছে যেন সাধ-আহ্লাদ পূরণ। ঘর ছেড়ে অফিসে পাইক পেয়াদা বরকন্দাজ, খানসামা, আর্দালি নিয়ে পিকনিক পিকনিক ভাব নিয়ে কাটিয়ে দিলেন তিন তিনটি মাস। এমনকি একুশে ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসও যেন গুরুত্ব হারিয়ে ফেলে। ৯২ দিনের এই যে একাগ্র সাধনা, তাতে ধ্যানেজ্ঞানে, শয়নে-স্বপনে পোড়া লাশ, দগ্ধ মানুষের আহাজারি কি পীড়িত করেনি? বরং ক্ষমতার স্বাদ থেকে দূরে থাকার বেদনায় যেন তিনি কাতর। নিজের ও পুত্রের মামলার দুশ্চিন্তায় নির্ঘুম রাত কাটান। ধ্বংসের আয়োজনে টানা তিন মাস নিবিষ্টচিত্তে কাজ করে যখন দেখেন তবু হয় না বিপর্যয়, সাধারণ মানুষসহ দলের নেতাকর্মীরাও অবরোধ-হরতাল পালনে নয় সক্রিয়, বিদেশীরাও সহায়তার হাত দেয় না বাড়িয়ে, প্রতিবেশী দেশও জানায় না সমর্থন। তখন তিনি ফিরে গেলেন ্আপন ঠিকানায়। এ সময় মানুষ হত্যার যে ঘটনা ঘটেছে, তা বাঙালীর ইতিহাসের কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে প্রতিভাত হয়ে থাকবে। সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনি আবার জনসম্মুখে আসবেন আর সত্যকে মিথ্যা এবং মিথ্যাকে সত্যে পরিণত করার চেষ্টায় লিপ্ত হবেন। কিন্তু নরহত্যার দায় এড়ানো যাবে কি? আজ হোক, কাল হোক বিচারের কাঠগড়া তাঁকে টেনে নেবেই। কোন হুমকি-ধমকি, নিরাপত্তা প্রহরী, পাইক-পেয়াদারাও রক্ষা করতে পারবে, তা নয়। জবাবদিহি করতেই হবে- জনগণের প্রত্যাশাও তাণ্ডই।
×