ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কৃষি প্রযুক্তিমেলা উদ্বোধনীতে মতিয়া চৌধুরী

কৃষিতে প্রযুক্তির ছোঁয়া ও উৎকর্ষের কথা চাষীকে বোঝাতে হবে

প্রকাশিত: ০৬:১০, ৬ এপ্রিল ২০১৫

কৃষিতে প্রযুক্তির ছোঁয়া ও উৎকর্ষের কথা চাষীকে বোঝাতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাতীয় কৃষি প্রযুক্তি মেলা উদ্বোধনকালে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেছেন, কৃষিকে যুগোপযোগী করে তোলার লক্ষ্যেই কৃষিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহার দিন দিন বেড়ে চলছে। কৃষিতে যে প্রযুক্তির ছোঁয়া ও উৎকর্ষ লেগেছে কৃষককে তা স্পষ্ট ভাষায় বোঝাতে হবে। কৃষক সব জানে এ রকম ভাবাটা আহম্মকের কাজ। নতুন নতুন আবিষ্কার সম্পর্কে তাদের স্পষ্ট করে জানাতে হবে। বিজ্ঞানের আবিষ্কার যারা মেনে নিতে পারে না; যারা শুধুমাত্র বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করে তারা পশ্চাৎপদ। দেশের কৃষিকে লাভজনক করার জন্য বিজ্ঞানের নব নব আবিষ্কার হচ্ছে। কৃষকদের জন্যে সরকার প্রদত্ত সব কথা তাদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। আমাদের দেশের কৃষক কিন্তু রক্ষণশীল নয়, তারা প্রগতিমনা। যখন তারা বোঝে বিজ্ঞানের এ আবিষ্কার কাজে লাগাতে হবে, তখন তাদের কেউ ঠেকাতে পারে না। রবিবার রাজধানীর ফার্মগেটে খামার বাড়ির আ কা মু গিয়াস উদ্দীন মিলকী অডিটরিয়ামে তিন দিনব্যাপী ‘জাতীয় কৃষি প্রযুক্তি মেলা-২০১৫’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ সব কথা বলেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে মতিয়া চৌধুরী আরও বলেন, কৃষিতে বিজ্ঞানভিত্তিক নানা পদক্ষেপের কারণেই খাদ্য উৎপাদনে আজ আমরা নিজেদের স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে সক্ষম হয়েছি। খাদ্য সংকট এখন আল্লার রহমতে আর নেই, বরং আমরা কিছু হলেও এখন অন্যকে দেয়ার ক্ষমতা রাখি। কৃষির উন্নয়নে প্রযুক্তি নির্ভর কৃষির কোন বিকল্প নেই। লবণাক্ততা সহিষ্ণু বিভিন্ন জাত আবিষ্কার খাদ্য উৎপাদনে নতুন দিক উন্মোচন করেছে। যারা আমাদের কার্যক্রম নিয়ে সমালোচনা করেন তাদের সাধুবাদ, তাতে আমাদের কান খাড়া থাকে। কৃষিমন্ত্রী বলেন, কৃষিক্ষেত্রে যেটুকু অর্জন হয়েছে তার সিংহভাগই এসেছে দেশের কৃষক ও কৃষিজীবীদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায়। তাই কৃষকের চাহিদা অনুযায়ী আমাদের বিভিন্ন সেবার মান স্বচ্ছ ও আধুনিক হতে হবে। কৃষকের ভাষাতেই প্রযুক্তির সব বিষয় তুলে ধরতে হবে। কৃষক যখন প্রযুক্তির নানা আবিষ্কার দেখবে তখন তারা নিজেরাই সে সবের ব্যবহার শুরু করবে। প্রচারই প্রসার; কিন্তু প্রচার অনেক সময় বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে। তা লক্ষ্য রেখেই কৃষি সম্পর্কিত আধুনিক তথ্যের প্রচার করতে হবে। এ সময় ধর্মান্ধ মৌলবাদী জামায়াতী গোষ্ঠীর সমালোচনা করে মতিয়া চৌধুরী বলেন, তারা ধর্মের কথা বলে চাঁদে সাঈদীকে পাঠিয়ে দেয়। আবার মাইক দিয়ে এ ঘোষণাও দেয়া হয়। নারী নেতৃত্ব নিয়ে তারা সমালোচনা করলেও তাদের মতাদর্শ হচ্ছে “নারী নেতৃত্ব হারাম, পাশে বসলে আরাম আরাম!” এ সময় পবিত্র কোরান থেকে একটি আয়াতের তর্জমা করে তিনি বলেন এ আয়াত জানার জন্যে আমাদেরকে সাঈদীর কাছে যেতে হয় না। উদ্বোধনের আগে মন্ত্রী মেলায় অংশ নেয়া বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন। এ সময় তার সঙ্গে কৃষি মন্ত্রণালয় ও খামার বাড়ির উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সংসদ সদস্য মকবুল হোসেন বলেন, কৃষকদের সঙ্গে কর্তাব্যক্তিদের সমন্বয় কম। নতুন নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কেও কৃষকেরা তেমনভাবে কিছুই জানে না। আমরা প্রতিনিয়তই সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। তবে মনে রাখতে হবে প্রচারেই প্রসার। কৃষি সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তির কথা সবাইকে জানাতে হবে। দেশে কৃষি বিষয়ে গণশুনানির আয়োজন করা উচিত। এখানে কৃষকরা তাদের বিভিন্ন সেবার মান নিয়ে কথা বলবেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ‘আমাদের কৃষক ভাইয়েরা, আমাদের শ্রমিক ভাইয়েরা’ বলে বক্তব্য শুরু করতেন। আমরা শ্রমিকের কিংবা কৃষকের ঘর থেকেই এসেছি; তাদের মূল্যায়ন করতে হবে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এ জেড এম মমতাজুল করিম বলেন, কৃষি ক্ষেত্রে আমরা যেসব প্রযুক্তি সহায়তা পাচ্ছি তার ব্যবহার যেন সঠিকভাবে হয়। দেশে জমির পরিমাণ কমে আসছে; কিন্তু নতুন নতুন প্রযুক্তিও আসছে। তাই প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে। অনুষ্ঠানের শুরুতে ‘কৃষি তথ্য বিস্তারে ই-কৃষি’ শিরোনামের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ কেন্দ্রের মাধ্যমে ডিজিটাল কৃষি তথ্যের প্রচলন ও গ্রামীণ জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্প পরিচালক ড. রাধেশ্যাম সরকার। কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব বিজয় ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কৃষি তথ্য সার্ভিসের পরিচালক মিজানুর রহমান। ‘প্রযুক্তি দিয়ে করবো কৃষি, সুখে থাকবো দিবানিশি’ সেøাগান সামনে রেখে কৃষি তথ্য সার্ভিসের উদ্যোগে ওই মেলার আয়োজন করা হয়। তিন দিনব্যাপী এ মেলা শেষ হবে আগামীকাল মঙ্গলবার। মেলায় সরকারী ও বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মোট ২৪ স্টল অংশ নিয়েছে। প্রতিদিন সকাল আটটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত চলা ওই মেলায় কৃষিবিষয়ক যাবতীয় তথ্য পাওয়া যাবে। মেলা ঘুরে দেখা যায়, মেলায় নতুন নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কৃষি বিশেষজ্ঞদের পরিচয় করিয়ে দেয়া হচ্ছে। মেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠান উপলক্ষে সকাল নয়টায় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা থেকে খামার বাড়ির আ কা মু গিয়াস উদ্দীন মিলকী অডিটরিয়াম পর্যন্ত এটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়।
×