ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সোনালি সূর্যমুখী

চোখ জুড়িয়ে যায়- ভোজ্যতেলেরও উপকরণ

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ৬ এপ্রিল ২০১৫

চোখ জুড়িয়ে যায়- ভোজ্যতেলেরও উপকরণ

খোকন আহম্মেদ হীরা ॥ নীল আকাশের সীমানা ছুঁয়ে গেছে মাঠ। যেন গগন-মৃত্তিকার অবিচ্ছেদ্য প্রেমলীলা। এই মাঠের যেদিকেই চোখ যায় কেবল পরিপক্ব সোনালী সূর্যমুখী ফুলের সমারোহ। দেখলেই জুড়িয়ে যায় দু’চোখ। আর মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই কাটা হবে ধরিত্রীর অপরূপ উপহার এই নয়াভিরাম সূর্যমুখী। সূর্যমুখীর শস্যদানা থেকে উৎপাদিত হয় পুষ্টিকর তেল। এর পুষ্টিগুণ ভাল হওয়ায় আগের চেয়ে তাই এর চাহিদা বেড়েছে। সূর্যমুখীর গাছ জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। স্বল্প পুঁজিতে সূর্যমুখী চাষ লাভজনক হওয়ায় গত বছরের তুলনায় এবার বরিশাল জেলার তিনটি উপজেলায় এর আবাদ দ্বিগুণ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারি ও বেসরকারী পর্যায়ে আরও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে সূর্যমুখীর আবাদ ব্যাপকভাবে করা সম্ভব বলে মনে করছেন কৃষকেরা। ধানভিত্তিক শস্যবিন্যাসে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী উজিরপুর উপজেলার জয়শ্রী এলাকার প্রায় ২৫০ শতক জমিতে এবার চাষ করা হয়েছে প্যাসিফিক হাইসান-৩৩ (হাইব্রিড) ও বারি সূর্যমুখী-২ নামের দু’জাতের সূর্যমুখী। সঠিক সময়, সঠিক নিয়মে পরিচর্যা করায় উভয় জাতের সূর্যমুখীর বাম্পার ফলন হয়েছে। চাষী মোতালেব সরদার, আবু তালেব কাজী, আবুল কালাম মোল্লা, আলমগীর সরদার, পান্নু কাজী, জসিম সরদার ও রেকসোনা বেগম বলেন, সিসা-ইরি প্রকল্প বাস্তবায়নে ইউএসএআইডির অর্থায়নে ও বিডিএসয়ের সহযোগিতায় এবারই তারা প্রথম ১১০ দিনের মধ্যে ফলন পাওয়া সূর্যমুখীর চাষ করেছেন। ফলন দেখেও তারা বেজায় খুশী। বিডিএসয়ের বরিশাল অফিসের ফিল্ড অফিসার সৌরভ হালদার জানান, সূর্যমুখী চাষের জন্য তারা বিনামূল্যে চাষীদের মাঝে বীজ সরবরাহ করেছেন। এছাড়াও বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ে কৃষকদের সঠিক সময়ে নানাধরনের পরামর্শ দেয়ায় এবার সূর্যমুখীর ফলনও ভাল হয়েছে। তিনি আরও জানান, এবার উজিরপুর উপজেলার জয়শুরকাঠী, আটিপাড়া ও ভরসাকাঠী এলাকার দুই একর, গৌরনদী উপজেলায় এক একর ও বাবুগঞ্জ উপজেলায় প্রায় পাঁচ একর জমিতে প্যাসিফিক হাইসান-৩৩ (হাইব্রিড) ও বারি সূর্যমুখী-২ নামের দু’জাতের সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে। যা গতবারের তুলনায় দ্বিগুণ। সূত্র মতে, উঁচু জমি ও বেলে দোআঁশ মাটিতে সূর্যমুখীর চাষ ভাল হয়। স্থানীয় বাজারে ১ মণ (৪০ কেজি) সূর্যমুখী শস্য দানা বিক্রি হচ্ছে এক থেকে দেড় হাজার টাকায়। আর তেল বিক্রি হয় ১৫০ থেকে দুশ’ টাকা কেজি দরে। ১ মণ সূর্যমুখী শস্যদানা থেকে ১৮ থেকে ২০ কেজি তেল হয়। বরিশালের কৃষকবন্ধু ও গৌরনদী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ সিরাজুল ইসলাম জানান, যে সব জমিতে আলু, খেসারি বা আমন চাষ হতো সে সব জমিতে সূর্যমুখী চাষ করে কৃষকরা বেশ লাভবান হচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যতে সরকারী বা বেসরকারী উদ্যোগে সূর্যমুখী চাষে কৃষকদের আগ্রহ বৃদ্ধি করাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেয়া হলে এ চাষের ব্যাপক প্রসারতা ঘটবে। তখন দেশের ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণ করে অর্থনৈতিক উন্নয়নেও সূর্যমুখী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
×