ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অভ্যন্তরীণ রুটে বিমানের দুটি উড়োজাহাজ উদ্বোধন

ফ্লাইটের সময়সূচী ঠিক রাখতে পারলে সুনাম বাড়বে ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ৬ এপ্রিল ২০১৫

ফ্লাইটের সময়সূচী ঠিক রাখতে পারলে সুনাম বাড়বে ॥ প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সেবা ও সময়সূচী ঠিক রাখার জোর তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিমানকে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী এয়ারলাইন্স হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এটা শুধু যাত্রী বহন করে সম্ভব নয়, এ জন্য অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটেও কার্গো সার্ভিস চালু করতে হবে। তিনি আরও বলেন, মানুষের সমস্যা বুঝে ব্যবস্থা নিতে হবে। গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সার্ভিস বৃদ্ধি ও ফ্লাইট সূচী ঠিক করতে হবে। বিমান নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছাবে, নির্দিষ্ট সময়ে আসবে; তা নিশ্চিত করতে পারলে সুনাম বৃদ্ধি পাবে। আড়াই বছর পর রবিবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিভিআইপি টার্মিনালে বিমানের অভ্যন্তরীণ রুট এবং সংস্থার বহরে সংযোজিত দুটি ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বিমানের যাত্রী সেবা নিশ্চিতের পাশাপাশি দক্ষতা বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে বলেন, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের মান উন্নত করা দরকার। বিমানকে আন্তর্জাতিক মানের করতে হলে সে ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কিনতে হবে। বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এই বিমানের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সরকারের আমলে নেয়া পদক্ষেপের পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, ১৯৯৬ সালেও বিমানের যথেষ্ট উন্নয়ন করা হয়। কিন্তু পরে বিএনপি জোট সরকারের নিউইর্য়ক-ব্রাসেলসÑপ্যারিস, ফ্যাঙ্কর্ফুটÑমুম্বাই, নারিতা ও ইয়াঙ্গুন রুটে বিমান বন্ধ করে দেয়। তারপর হতে থাকে লোকসান। কিন্তু ২০০৯ সালে ফের আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকে বিমানের বন্ধ হয়ে যাওয়া রুটগুলো চালু করা হয়। তিনি বিমানকে বিশ্বমানের সংস্থা হিসেবে উন্নত করার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত উদ্যোগ নেয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, এখন বিমানে ই-টিকেটিং চালু, অনলাইন বুকিং হওয়ায় যাত্রীদের আসন সংরক্ষণ নিশ্চিত করা যায়। দেশের অভ্যন্তরে ডেবিট কার্ড দিয়ে টিকেট ক্রয় করা যায়। উল্লেখ্য, উড়োজাহাজের অভাবে গত কয়েক বছর ধরে বিমানের অভ্যন্তরীণ রুটগুলো বন্ধ ছিল। সর্বশেষ ২০১১ সালে ঢাকা-কক্সবাজার রুটে বিমানের ফ্লাইট বন্ধ করে দেয়া হয়। এ দুটি ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজ দিয়ে প্রতি সপ্তাহে কক্সবাজারে ছয়টি, যশোরে পাঁচটি, রাজশাহী ও সৈয়দপুরে তিনটি এবং বরিশালে দুটি করে ফ্লাইট চালানো হবে। এসব উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ রাজশাহী, যশোর, বরিশাল, সৈয়দপুর এবং কক্সবাজারের জনগণের দীর্ঘদিনের আকাক্সক্ষার বাস্তবায়ন ঘটবে। পণ্য পরিবহনের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিমানকে লাভজনক করতে হলে কার্গো ব্যবস্থা অত্যন্ত জরুরী। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে কার্গো ছাড়া শুধু যাত্রী টেনে লাভজনক হওয়া সম্ভব না। শেখ হাসিনা বলেন, বিমানের ব্যবসার প্রসার ঘটাতে ভুটান, ফিলিপিন্স, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়াসহ অন্যান্য দেশে ফ্লাইট চালু করা দরকার। কারণ দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি বাড়ছে রফতানি বাড়ছে। সেজন্যই এসব রুট চালু করা যেতে পারে। এছাড়া সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা যেতে পারে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পর্যটন নগরী হিসেবে কক্সবাজার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক করা হলে শুধু পর্যটকরাই ব্যবহার করতে পারবে না, পূর্ব থেকে পশ্চিমে এবং পশ্চিম থেকে পূর্বে যাওয়ার সময় বিমান কক্সবাজারে রি-ফুয়েলিংও করতে পারবে। বাগেরহাটে একটি বিমানবন্দর নির্মাণের পদক্ষেপ নেয়ার কথাও জানান প্রধানমন্ত্রী। শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রী সুবিধা বৃদ্ধি, বিমানবন্দরের রানওয়ের উন্নয়ন, পার্কিং সুবিধা বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী তৃতীয় টার্মিনাল ও দ্বিতীয় রানওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ শুরুর কথা জানিয়ে বলেন, যাত্রী সেবা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ৩২টি বোডিং ব্রিজ তৈরির কাজ চলছে। ঢাকার অদূরে আন্তঃ মহাদেশীয় যোগাযোগের কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তাবিত সর্বাধুনিক বঙ্গবন্ধ আন্তজার্তিক বিমানবন্দর নির্মাণের চূড়ান্ত স্থান নির্ধারণের প্রক্রিয়াও চলছে। বিমানের যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা বাড়াতে চলতি বছরের মধ্যে আরও দুটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজ বহরে যুক্ত হবে বলেও আশাপ্রকাশ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালকে পর্যটন বর্ষ হিসেবে ঘোষণা করে বলেন, আগামী বছর কমপক্ষে ১০ লাখ পর্যটক বাংলাদেশে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। বিমান সর্বোচ্চ সেবা ও দক্ষতার মাধ্যমে এসব পর্যটক ধরতে পারে। মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, বিমান এখন ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এখন আরও এগিয়ে যেতে হবে। অভ্যন্তরীণ রুটুগুলো দিয়ে বিমানের উন্নয়ন আরও দ্রুত হবে। বিমান চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল জামাল উদ্দিন আহমেদ স্বাগত ভাষণে বলেন, বিমান ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে ২৭০ কোটি টাকা লাভ করেছে। গত ৬ বছরে বিমানের নিজস্ব অর্জিত তহবিল থেকে ২ হাজার কোটি টাকা দেনা পরিশোধ করা হয়। এ জন্য সরকারের কাছ থেকে এক টাকাও লোন নেয়া হয়নি। অনুষ্ঠানে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন সচিব খুরশীদ আলম চৌধুরী, বিমানের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান জামালউদ্দিন এবং বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাইল হ্উেড। আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, এয়ার ভাইস মার্শাল এম সানাউল হক ও গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোস্তাফিজুর রহমান ও বিমান সিবিএ সভাপতি মশিকুর রহমানসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন নেতৃব্ন্দৃ। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী কেক কাটার পর নতুন উড়োজাহাজ দুটি পরিদর্শন করেন। এ দুটো নামকরণ করা হয় ময়ুর পঙ্খী ও মেঘদূত। আজ সোমবার থেকে কক্সবাজার, যশোর, রাজশাহী, সৈয়দপুর ও বরিশাল পথে উড়বে নতুন এই দুটি উড়োজাহাজ। স্বল্প দূরত্বে ফ্লাইট চালানোর জন্য ড্যাশ-৮, এটিআর-৭২ এর মতো টার্বো-প্রপেলার উড়োজাহাজগুলো বেশি উপযোগী। রক্ষণাবেক্ষণ ও জ্বালানি খরচ কম হওয়ায় এসব উড়োজাহাজ অর্থনৈতিকভাবেও বেশি লাভজনক। লিজে আনা ড্যাশ-৮ দুটি নিয়ে বিমানের বহরে উড়োজাহাজের সংখ্যা এখন ১২টি। এর মধ্যে চারটি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর, দুটি এয়ারবাস এ ৩১০, দুটি বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর এবং দুটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজ। দেশের চারটি বেসরকারী বিমান সংস্থা ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ, রিজেন্ট এয়ারওয়েজ, নভো এয়ার এবং ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট চালালেও টিকেটের মূল্য ও সেবার মান নিয়ে যাত্রীদের অসন্তোষ রয়েছে।
×