ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

১৪ দলীয় জোটের নেতাদের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া

দেড় শতাধিক মানুষকে পুড়িয়ে মেরে কী পেলেন খালেদা জিয়া-

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ৬ এপ্রিল ২০১৫

দেড় শতাধিক মানুষকে পুড়িয়ে মেরে কী পেলেন খালেদা জিয়া-

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ৯২ দিন পর দলীয় কার্যালয় থেকে বেরিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার আদালতে আত্মসমর্পণ এবং নিজ বাসায় ফিরে যাওয়ার ঘটনাকে ‘স্বাগত’ জানালেও এ সময়ে দেড় শতাধিক মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা ও দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করে তিনি (খালেদা জিয়া) কী অর্জন করেছেন- সেই প্রশ্ন তুলেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলীয় জোটের নেতারা। রবিবার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জোটের নেতারা বলেন, বিএনপি নেত্রীকে কৈফিয়ত দিতে হবে এতগুলো জীবন তিনি কেড়ে নিলেন কেন? দগ্ধ হয়ে নিহত দেড় শ’ নিরীহ মানুষের পরিবারকে সর্বশান্ত করে কী অর্জন নিয়ে উনি ঘরে ফিরলেন? আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সচিবালয়ে সাংবাদিকদের কাছে তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আন্দোলনের নামে তিন মাসে নিরীহ নিরাপরাধ মানুষকে হত্যা ছাড়া আর কিছু অর্জন করতে পারেননি খালেদা জিয়া। আর কোন লাভ হয়নি তাঁর। একটি দেশকে নিয়ে খালেদা জিয়া তিন মাস খেলা করেছেন। এ উপলব্ধি থেকেই বিএনপি নেত্রী আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নিয়ে ঘরে ফিরেছেন। তারপরও ‘মানুষ হত্যার জন্য’ খালেদা জিয়াকে আইনের মুখোমুখি হওয়ার পাশাপাশি জনগণের কাছে কৈফিয়ত দিতে হবে। জনগণের প্রশ্ন- এই ৯২ দিনে তিনি কী লাভ করেছেন? দেশের মানুষের ক্ষতি ছাড়া আর কোন লাভ হয়নি। আওয়ামী লীগের এই প্রবীণ নেতা আরও বলেন, খালেদা জিয়া কোর্টে গেলেন, সিটি নির্বাচনে অংশ নিলেন, কিন্তু তাঁকে কৈফিয়ত দিতে হবে এতগুলো জীবন তিনি কেড়ে নিলেন কেন? দেশের অর্থনীতির ক্ষতি করলেন কেন? বিশ্বে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষতিগ্রস্ত করলেন কেন? এখনও দেশে অবরোধের ঘোষণা থাকলেও তাতে মানুষের সাড়া নেই দাবি করে তিনি বলেন, জঙ্গী তৎপরতা বন্ধ হয়ে গেছে, নাশকতার খবর নেই, পেট্রোলবোমাও কমে গেছে। এর কারণ যারা কাজগুলো করেছে তাদের অনেকেই ধরা খেয়েছেন। দেশের মানুষ সন্ত্রাস, নাশকতা ও জঙ্গী তৎপরতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমার বিশ্বাস খালেদা জিয়া আর এই পথে যাবেন না। নির্বাচন না করে তিনি যে ভুল করেছেন, তথাকথিত আন্দোলনের নামে দেশের যে ক্ষতি করেছেন- তা উপলব্ধি করেই কোর্টে গিয়ে আত্মসমর্পণ করেছেন। এজন্য তাঁকে অনেক ধন্যবাদ, তাঁর শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে। ১৪ দলের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম জনকণ্ঠের কাছে তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ৯২ দিন ধরে শিশু-নারী-অন্তঃসত্ত্বা মাসহ নিরীহ মানুষকে হত্যার মধ্যে দিয়ে নিজের ব্যর্থতার জ্বালা মিটিয়ে খালেদা জিয়া ঘরে ফিরে গেলেন। কিন্তু মানুষের রক্তের হোলিখেলা ছাড়া শূন্য অর্জন নিয়েই তাঁকে বাসায় ফিরতে হয়েছে। বিএনপির নেত্রীর এই তিন মাসে একটাই লাভ করেছেন তা হলো দগ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণকারী দেড় শতাধিক নিরীহ মানুষের পরিবারকে সর্বশান্ত করে দিয়েছেন। আন্দোলনের নামে সহিংসতা-নাশকতা চালিয়ে কোন জনসমর্থন আদায় করতে পারেননি, বরং বিএনপির নাশকতার পথ ধরে নিজ দলকেই ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছেন। কার্যালয় থেকে ঘরে ফিরলেও দেশের জনগণ এত হত্যার ঘটনায় বিএনপি নেত্রীকে ক্ষমা করবে না, বরং ব্যালটের মাধ্যমেই তাঁকে আবারও প্রত্যাখ্যান করে জবাব দেবে। ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম প্রধান শরিক জাসদের সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক তাঁর প্রতিক্রিয়ায় জনকণ্ঠকে বলেন, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার দশা হয়েছে ‘সেই তো নথ খোসালি, তবে কেন এতো মানুষ মারলি, এতো মানুষকে কাঁদালি’ প্যারোডি প্রবাদের মতোই। শুধু দেশের জনগণই নয়, গোটা বিশ্বের বিবেকবান, মানবতাবোধ সম্পন্ন মানুষের প্রশ্ন- ৯২ দিন ধরে হত্যার মহোৎসব চালিয়ে কী অর্জন করলেন খালেদা জিয়া? কী অর্জন নিয়ে তিনি কার্যালয় থেকে বাসায় ফিরলেন। তিনি বলেন, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া অফিসে থাকুন কিংবা বাসায় যান, সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুন কিংবা না করুন- আগুন সন্ত্রাসে মানুষকে পুড়িয়ে পরিকল্পিত হত্যাকা-ের দায় থেকে কোন দিনই রেহাই পাবেন না। দেশের জনগণ কোনদিনই তাঁকে ক্ষমা করবে না। দেশের মানুষ বরং চায়, বিএনপি নেত্রী বাসায় থেকে এখন তাঁর পরিকল্পিত হত্যাকা-ের দায় নিয়ে কারাগারে যাওয়ার প্রস্তুতি নিন। এটাই এখন দেশবাসীর প্রত্যাশা। খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলেন, সুবোধ ও শান্ত-শিষ্টের মতো আদালতে গেলেন, তাহলে এতো মানুষ হত্যা করলেন কেন? এর জবাব আপনি পাবেন, জনগণ আপনাকে সঠিক জবাবই দেবে। খালেদা জিয়া স্বেচ্ছায় তাঁর কার্যালয়ে অবস্থান করছিলেন, সেখান থেকে তিনি স্বেচ্ছায় বের হয়েছেন। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন আদালতে যাননি, এখন গেছেন। আসলে এটা মামলাকে বিলম্বিত করার কৌশল। তবে যাই হোক আদালত বিএনপি নেত্রীকে জামিন দিয়েছে। আশা করি, খালেদা জিয়া আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবেন, বিচার বিলম্বিত করার আর কোন কৌশল নেবেন না। সাজানো নাটক নাকি সাজানো বাস্তবতা ॥ বাংলানিউজ জানায়, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া নিজের বাসায় ফিরে গেছেন। টানা তিন মাস রাজনৈতিক কার্যালয়ে অবস্থানের পর রবিবার বাড়ি ফেরার পথে তিনি একটি দুর্নীতি মামলায় জামিন নিয়ে নিজ বাড়িতে ফিরেছেন। একটু যদি পেছনে ফিরে তাকানো যায়, তাহলে ঘটনা কি ঘটেছিল সেটি হয়ত আরেকবার দেখে নেয়া যাবে। গত ৩ জানুয়ারি রাতে নিজ বাসা থেকে বেরিয়ে গুলশান-২ নম্বরের ৮৬ নম্বর সড়কে নিজের কার্যালয়ে গিয়ে তিনি সেখানেই থেকে যান। ৫ জানুয়ারি দলীয় কর্মসূচী পালনে ব্যর্থ হয়ে তিনি লাগাতার ধর্মঘটের ডাক দেন। ওই সময় হয়ত তাঁর কার্যালয়ের সামনে পুলিশী ব্যারিকেড ছিল। সরকারের ভাষ্য অনুযায়ী, বিএনপির ডাকা ৫ জানুয়ারির সমাবেশে নাশকতার আশঙ্কা ছিল, তাই তারা বাধ্য হয়েই এই কাজ করেছে। কিছুদিন পরই অবশ্য সব ধরনের ব্যারিকেড উঠিয়ে নেয়া হয়। কিন্তু খালেদা জিয়া তার কার্যালয়েই থেকে যান। এবং লাগাতার অবরোধের পাশাপাশি দফায় দফায় হরতালের ডাক দিতে থাকেন। এর মাঝে অনেক পানি গড়িয়েছে। অবরোধের নামে শত শত মানুষকে পেট্রোলবোমা দিয়ে পুড়িয়ে মারা হয়েছে, গাড়ি ধ্বংস করা হয়েছে; ক্ষতি করা হয়েছে দেশের অর্থনীতির। এরপরও খালেদা জিয়া দমে না গিয়ে একের পর এক অবরোধ দিতেই থাকেন ওই কার্যালয়ে বসে। কেউ তার সাক্ষাত পর্যন্ত পাচ্ছিলেন না। এর মাঝে দেশের মানুষ যখন বিরক্ত হয়ে এই হরতাল অবরোধ উপেক্ষা করে বাইরে বেরিয়ে এল, অবরোধের মাঝেও যখন দেশ স্বাভাবিকভাবেই চলা শুরু করল। তখন খালেদা জিয়া বুঝতে পারলেন কার্যালয়ে থেকে আর লাভ নেই। তার হয়ত ধারণা ছিল, কার্যালয়ে তিনি বন্দী হয়ে আছেন; আটকে পড়ে আছেন, এই নাটক সাজিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লুটবেন। নিজের ছেলের মৃত্যুর পরও তিনি ওই জায়গা থেকে বের হননি; বের হননি একুশে ফেব্রুয়ারি, স্বাধীনতা দিবসেও। দেশের স্বাধীনতা দিবসে যিনি না বের হয়ে কেবল নিজের ও নিজ দলের বিজয় দেখতে চেয়েছিলেন কার্যালয়ে বসে, তিনি শেষে যখন বুঝতে পারলেন নিজের বিজয় হবে না, জনগণ তাকে ও তার দলকে প্রত্যাখ্যান করেছে, তখন তিনি সেখান থেকে বের হয়ে রবিবার নিজ বাসায় ফেরত গেলেন আদালত হয়ে। কই কোথাও তো তিনি কোন বাধার সম্মুখীন হলেন না! দেশ নিয়ে যারা নাটক করে তাদের পরিণতি কখনও ভাল হয় না, মানুষ তাদের প্রত্যাখ্যান করবেই। খালেদা জিয়ার ডাকা অবরোধ, হরতাল প্রত্যাখ্যান করে দেশের মানুষ সেটি এর মাঝেই বুঝিয়ে দিয়েছে।
×