ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

৯২ দিন পর অফিস থেকে কোর্টে খালেদা জিয়া ॥ নীরবে ফিরলেন বাসায়

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ৬ এপ্রিল ২০১৫

৯২ দিন পর অফিস থেকে কোর্টে খালেদা জিয়া ॥ নীরবে ফিরলেন বাসায়

শরীফুল ইসলাম ॥ অবশেষে টানা ৯২দিন পর গুলশানের বাসায় ফিরলেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় আদালত থেকে জামিন নিয়ে রবিবার দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়কের ১ নম্বর বাড়ি ‘ফিরোজা’য় পৌঁছেন তিনি। বাসায় প্রবেশের সময় ছোটভাই শামীম এস্কান্দারের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা খালেদা জিয়াকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। আন্দোলনে বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত বাসায় ফিরবেন না এতদিন এ কথা বলে এলেও আদালত থেকে জামিনের পর খুশি মনে তিনি সোজা বাসায় চলে যান। খালেদা জিয়া বাসায় ফিরে গেলেও এখন থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যায় গুলশান কার্যালয়ে গিয়ে দলীয় কর্মকা- পরিচালনা করবেন। এদিকে আদালত থেকে ফেরার পথে খালেদা জিয়া নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যাবেন এমন আশা করে সকাল থেকেই সেখানে উৎফুল্লচিত্তে অপেক্ষায় ছিলেন ৩০ থেকে ৪০ নেতাকর্মী। কিন্তু দুপুর ১২টার দিকে যখন সেখানে খবর যায় খালেদা জিয়া পৌনে ১২টায় বকশিবাজার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের বিশেষ আদালত থেকে বেরিয়ে সোজা বাসার দিকে চলে গেছেন তখন তাদের চেহারা মলিন হয়ে যায়। সেখানে অবস্থানরত নেতাকর্মীদের কেউ কেউ বলেছেন, ৯১দিন পর শনিবারে কেন্দ্রীয় কার্যালয় খুললেও এখনও অনেক নেতাকর্মী আসতে চাচ্ছেন না। তাই খালেদা জিয়া এলে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ও নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে সরব হয়ে যেত। কিন্তু তিনি সে সুযোগটি করে না দিয়ে সরাসরি বাসায় চলে গেলেন। রবিবার সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে খালেদা জিয়া তার সঙ্গীদের নিয়ে আদালতে হাজিরা দেয়ার উদ্দেশে গুলশান কার্যালয় ত্যাগ করেন। এ সময় খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার গাড়িতে ওঠেন দলের ভাইস-চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস। সকাল ১০ টা ৫৫ মিনিটে তিনি বকশিবাজার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের বিশেষ জজ আদালতে পৌঁছেন। শুনানি শেষে আদালত তার জামিন মঞ্জুর করলে দুপুর পৌনে ১২টায় সেখান থেকে বের হয়ে সরাসরি গুলশানের বাসায় পৌঁছেন ১২টা ২০ মিনিটে। আগে থেকেই গুলশানের বাসায় খালেদা জিয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন তার ছোটভাই শামীম এস্কান্দারের স্ত্রী কানিজ ফাতেমাসহ কিছু আত্মীয়। তারা খালেদা জিয়ার হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে ৯২দিন পর তাকে বাসায় বরণ করে নেন। তার সঙ্গে গুলশানের বাসায় প্রবেশ করেন বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, বিএনপি চেয়ারপার্সনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, সামসুল আলআমিন ডিও। সকালে খালেদা জিয়া গুলশান কার্যালয় থেকে আদালতের উদ্দেশে রওনার পর পরই দীর্ঘদিন ধরে গুলশান কার্যালয়ে অবস্থান করা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবদুল কাউয়ুম, প্রেসসচিব মারুফ কামাল খানসহ অন্য নেতারা গুলশান কার্যালয় ছেড়ে নিজ নিজ বাসায় ফিরে যান। তবে গুলশান অফিসের কিছু স্টাফ সেখানে থেকে যান। এদিকে ঘটনাবহুল সময় পার করে অনেকদিন পর বাসায় ফিরে বিশ্রাম নেন খালেদা জিয়া। তার আগে প্রথমে ড্রইং রুমে বসে সেজবোন সেলিনা ইসলামসহ কয়েক আত্মীয়কে নিয়ে ফলের রস পান করেন খালেদা জিয়া। কিছুক্ষণ কথা বলার পর চলে যান শোবার ঘরে। খালেদা জিয়ার ফেরার খবর শুনে সকালেই বাজার করে দুপুরের খাবার রান্না করা হয়। ভাত, শাকভাজা, মাছ রান্না হয়েছে বলে জানা গেছে। এর আগে রবিবার সকালে খালেদা জিয়া আদালতের উদ্দেশে যাত্রা করার পর পরই গুলশানের কার্যালয় থেকে তার কাপড়চোপড়সহ অন্যান্য জিনিসপত্র বোঝাই স্যুটকেস ও ব্যাগ নিয়ে বিএনপি নেত্রীর বাসায় আসেন কানিজ ফাতেমা। এ ছাড়া খালেদা জিয়ার নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত ‘সিএসএফ’ সদস্যরা গুলশানের কার্যালয়ের ভেতর থেকে দফায় দফায় ছোট-বড় অনেক ব্যাগে করে মালপত্র খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসায় নিয়ে যান। সিএসএফের সদস্যরা কখনও হেঁটে আবার কখনও গাড়িতে করে ব্যাগগুলো খালেদা জিয়ার বাসায় নিয়ে যান। সকাল ৯টার দিকে গুলশান কার্যালয়ে গিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন কানিজ ফাতেমা। এদিকে খালেদা জিয়া গুলশানের বাসায় প্রবেশের আগেই বাসাটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয় এবং ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মীরা বাসায় অবস্থান করেন। সেই সঙ্গে তার বাসায় উত্তোলন করা হয় বিএনপির দলীয় পতাকা। বিএনপি নেতা কামরুল ইসলামের কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে ২০১১ সালের ২১ এপ্রিল থেকে গুলশানের ফিরোজা নামক এই বাড়িতে বসবাস করছেন খালেদা জিয়া। কামরুল ইসলামের মায়ের নাম অনুসারে এ বাড়ির নাম ‘ফিরোজা’। ‘ফিরোজা’র বর্তমান মালিক কামরুল ইসলামের ছেলে তানভীর ইসলাম। তিনি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। উল্লেখ্য, আদালতের রায়ের পর ২০১০ সালের ১৩ নবেম্বর ঢাকা সেনানিবাসের শহীদ মঈনুল রোডের ৬ নম্বর বাড়িটি ছাড়ার পর প্রথমে গুলশান কার্যালয়ে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন খালেদা জিয়া। ২০০৮ সাল থেকে এই বাড়িটি বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক জাকারিয়া তাহের সুমনের কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে গুলশান ৮৬ নম্বর সড়কের ৬ নম্বর বাড়িটি রাজনৈতিক কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি ছাড়ার পর থেকেই তিনি গুলশানে ছোটভাই শামীম এস্কান্দারের বাসায় থাকেন। পরে ২০১১ সালের ২১ এপ্রিল থেকে ভাড়া বাসা ‘ফিরোজা’য় ওঠেন তিনি। প্রয়াত স্বামী রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্মৃতিঘেরা মঈনুল রোডের বাড়িটি হাতছাড়া হয় । গৃহহারা হয়ে গুলশান কার্যালয়ে খুব কেঁদেছিলেন সেদিন খালেদা জিয়া। কার্যালয় থেকে বের হয়ে ছোটভাই শামীম এস্কান্দারের বাসায় ওঠেন। লন্ডনে বাসরত বড় ছেলে তারেক রহমান, স্ত্রী ডাঃ জোবাইদা রহমান, মেয়ে জায়মা রহমান, প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান, মেয়ে জায়মা রহমান ও জাহিয়া রহমান বিদেশে থাকলেও তাদের ব্যবহারের জিনিসপত্র ‘ফিরোজা’য় রেখে দিয়েছেন খালেদা জিয়া। ৯২ দিন ধরে খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে অবস্থান এবং ৮৯ দিন ধরে চলা নেতিবাচক আন্দোলনে বিএনপি বা তাদের নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট কিছু অর্জন করতে না পারলেও সারাদেশে জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এ কর্মসূচী সফল করার লক্ষ্যে বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডাররা পেট্রোলবোমাসহ বিভিন্নভাবে নাশকতা চালিয়ে প্রায় দেড় শ’ মানুষ হত্যা করেছে। শুধুু পেট্রোলবোমার আগুনে দ্বগ্ধ হয়ে মারা গেছে প্রায় ৭০ জন। পেট্রোলবোমায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে এখনও মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে অনেক মানুষ। এ কর্মসূচী চলাকালে সহস্রাধিক যানবাহন আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে বিএনপি-জামায়াত। ভাংচুর করেছে কয়েক হাজার যানবাহন। এ ছাড়া সারাদেশের বেশ ক’টি ভূমি অফিস এমনকি স্কুল-কলেজ ও ডিসি অফিসে পর্যন্ত বোমা বিস্ফোরণ ও অগ্নিসংযোগ করেছে তারা। জানা যায়, চলমান টানা অবরোধ ও দফায় দফায় হরতাল কর্মসূচীতে বিএনপি জোটের নেতাকর্মীরা অংশ না নেয়ায় হতাশ হয়ে পড়েন খালেদা জিয়াসহ ২০ দলীয় জোটের সর্বস্তরের নেতাকর্মী। দেশী-বিদেশী বিভিন্ন মহল থেকেও এ কর্মসূচী থেকে সরে যেতে চাপ আসে খালেদা জিয়ার ওপর। এ কারণে আরও আগে থেকেই এ কর্মসূচী থেকে সরে আসার পথ খুঁজতে থাকেন খালেদা জিয়া। তাই কৌশলে ভেতরে ভেতরে সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করার চেষ্টা করেন তিনি। অবশেষে এ কৌশলে সাড়া পাওয়ায় রবিবার আদালতে গিয়ে জামিনের সিদ্ধান্ত নেন তিনি। তবে তিনি আদালত থেকে বাসায় ফিরে যাবেন আগেই সরকারের কাছে তথ্য ছিল। তাই সরকারের তরফ থেকে খালেদা জিয়াকে আদালতে যাওয়া-আসার পথে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়। প্রসঙ্গত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক বছরপূর্তির দিন ৫ জানুয়ারি রাজধানী ঢাকায় বড় ধরনের সমাবেশ করে সরকারবিরোধী আন্দোলন চাঙ্গা করার প্রস্তুতি নেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। ২০ দলীয় জোটের ব্যানারে এ কর্মসূচী সফল করতে ২দিন আগে অর্থাৎ ৩ জানুয়ারি রাতেই তিনি গুলশান কার্যালয়ে অবস্থান নেন। এখান থেকেই তিনি ২০ দলীয় জোটের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করতে থাকেন। এর আগে থেকেই বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী নয়া পল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবস্থান করতে থাকেন। ৩ জানুয়ারি রাত ১১টার দিকে গুলশান কার্যালয়ে অবস্থানকালে খালেদা জিয়া জানতে পারেন নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবস্থানরত রুহুল কবির রিজভী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তখন খালেদা জিয়া রিজভীকে দেখতে গুলশান কার্যালয় যেতে চান। কিন্তু খালেদা জিয়া ৫ জানুয়ারির কর্মসূচীকে সামনে রেখে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে থেকে যাবেন এমন আভাস পেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের বাইরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করে এবং তাকে সেখান থেকে বের হওয়ার ব্যাপারে বাধা দেয়। সেই সঙ্গে রাতেই রিজভীকে এ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়। পরদিন ৪ জানুয়ারি খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের সামনের রাস্তার দুইপাশে ব্যারিকেড দিয়ে র‌্যাব-পুলিশের বিপুলসংখ্যক সদস্য সেখানে অবস্থান করে। এক পর্যায়ে খালেদা জিয়ার বাসা সংলগ্ন ৮৬ নম্বর সড়কের দুইপাশে আড়াআড়িভাবে ১২টি ইট, বালি ও মাটিভর্তি ট্রাক, ২টি প্রিজনভ্যান, ১টি সাঁজোয়া যান ও ১টি জলকামান রেখে কার্যালয়টি অবরুদ্ধ করা হয়। ৫ জানুয়ারি দুপুরে খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়। বিকেলে গুলশান কার্যালয় থেকে বের হয়ে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। গাড়িতে চড়ে বসলেও পুলিশ গেট খুলে না দেয়ায় গুলশান কার্যালয়ে থাকা মহিলা দলের নেতাকর্মীরা গেটে লাথি মেরে চিৎকার-চেঁচামেচি করতে থাকে। এক পর্যায়ে পুলিশ তাদের ওপর পিপার স্প্রে ছুড়ে মারে। পরে খালেদা জিয়া গাড়ি থেকে নেমে গুলশান কার্যালয়ের ভেতরে গেটের সামনে দাঁড়িয়ে ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে সারা দেশে টানা অবরোধ কর্মসূচী পালনের ঘোষণা দেন। আজ রবিবার টানা অবরোধ কর্মসূচীর ৮৯তম দিন অতিবাহিত হচ্ছে। অবশ্য ২ ফেব্রুয়ারি থেকে সাপ্তাহিক ছুটির দিন বাদে প্রতিদিনই সরাদেশে হরতালও পালন করেছে বিএনপি জোট। তবে স্বাধীনতা দিবসের আগে- পরে কয়েকদিন হরতাল পালন না করলেও গত সপ্তাহ থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগর ছাড়া সারাদেশে আবার হরতাল পালন করছে তারা। যদিও এ হরতাল-অবরোধে খোদ বিএনপি জোটের নেতাকর্মীরাই মাঠে নামে না। গুলশান কার্যালয়ে অবস্থানকালে এক মিনিটের জন্যও খালেদা জিয়া গুলশান কার্যালয়ের বাইরে যাননি। ১৯ জানুয়ারি জিয়াউর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে তার মাজারে এবং ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারেও যাননি খালেদা জিয়া। প্রতিবছর বিশ্ব এজতেমায় গেলেও এবার টানা অবরোধ দিয়ে তিনি ঘরে বসেছিলেন। এমনকি ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পরও খালেদা জিয়া গুলশান কার্যালয় থেকে বের হননি। কোকোর মরদেহকেও শেষ বিদায় জানিয়েছেন এখান থেকেই। কোকোর কুলখানি না হলেও তার আত্মার মাগফিরাত কামনায় মিলাদ পড়ানো হয়েছে গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়েই। অন্যান্যবারের মতো এবার ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসেও খালেদা জিয়া জাতীয় স্মৃতিসৌধে যাননি। তাই আজ খালেদা জিয়ার আদালতে যাবার বিষয়টি নিয়ে জনমনে কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, খালেদা জিয়া বাসায় ফিরে গেলেও এখন থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যায় গুলশান কার্যালয়ে গিয়ে দলীয় কর্মকা- পরিচালনা করবেন। আর ৯২ দিনের আন্দোলনে ইপ্সিত লক্ষ্য অর্জন করা না গেলেও কিছু তো অর্জন হয়েছেই। যেমন এতবড় আন্দোলন অতীতে আর কখনও হয়নি। এ ছাড়া এ আন্দোলনের পক্ষে সারা বিশ্বের মানুষ কথা বলেছে। গুলশান অফিসে যাননি ॥ রবিবার রাতে গুলশান কার্যালয়ে যাননি বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। আদালত থেকে দুপুরে বাসায় ফেরার পর অধিকাংশ সময়ই তিনি তাঁর শয়নকক্ষে বিশ্রাম নিয়ে সময় কাটিয়েছেন। এছাড়া দিনভর লন্ডন প্রবাসী ছেলে তারেক রহমানসহ বিভিন্ন আত্মীয় স্বজনের সঙ্গেও কথা বলে কুশল বিনিময় করেছেন। টানা ৯২ দিন অবস্থান নেয়া খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়টিতে ছিল সুনসান নীরবতা। রাত ৯টায় সরেজমিন কার্যালয়টিতে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান ফটকের সামনে দুইজন সাদা পোশাকধারী পুলিশ বসা থাকলেও পোশাকধারী পুলিশ সদস্যদের দেখা যায়নি। অফিসের ভেতরে নেতাকর্মীদের কোন উপস্থিতিও ছিল না। তবে ভেতরে কয়েকজন অফিস স্টাফ অবস্থান করছেন বলে সাদা পোশাকধারী সদস্যরা জানিয়েছেন। খালেদা জিয়ার বাসার সামনে কয়েকজন পুলিশ ও তার ব্যক্তিগত সিএসএফ সদস্যদের কর্তব্য পালন করতে দেখা গেছে। এদিকে গত শনিবার ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত ও উপদ্রুত অঞ্চলে জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণসামগ্রী প্রেরণ ও পুনর্বাসনে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। রবিবার সন্ধ্যায় দলের যুগ্ম মহাসচিব বরকত উল্লাহ বুলু স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো এক শোকবার্তায় তিনি এ আহ্বান জানান। শোকবার্তায় খালেদা জিয়া বলেন, বগুড়াসহ দেশব্যাপী প্রবল বেগে বয়ে যাওয়া কালবৈশাখী ঝড়ে ২৫ জনের অধিক লোকের প্রাণহানি, অসংখ্য মানুষ আহত এবং বাড়িঘর, গাছপালা ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতির সংবাদে আমি বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের প্রতি গভীর সমবেদনা ও সহমর্মিতা জানাচ্ছি।
×